ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে দেশে আয় ও ভোগ বৈষম্য বাড়ছে

ডাউনলোডঃ উপস্থাপনা | পেপার

চলমান কোভিড-১৯ অতিমারিতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি নানামুখী অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আয় ও ভোগ বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সালে দেশে আয় বৈষম্য গিনি সূচক ০.৫২, যা ২০১৬ সালে ছিল ০.৪৮। ভোগের ক্ষেত্রেও এ বছর বৈষম্য বেড়ে হয়েছে গিনি সূচক ০.৩৫, যা ২০১৬ সালে ছিল ০.৩২।

চলমান ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) অনুমান করছে, আর কোনো ‘সাধারণ ছুটি’ বা লকডাউন ঘোষণা না হলে চলমান ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ২.৫ শতাংশের কাছাকাছি হবে। তবে, অতিমারিকালীন সময়ে প্রবৃদ্ধি নিয়ে না ভেবে জনগণের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ দারিদ্র নিরসন, বৈষম্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা জরুরি।  সঠিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দক্ষভাবে নীতি বাস্তবায়নের ওপর আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের সাফল্য নির্ভর করবে।

https://www.facebook.com/cpd.org.bd/videos/918719161964390/

রবিবার ৭ জুন ২০২০ এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসকল তথ্য ও পরামর্শ উপস্থাপন করে সিপিডি। “কোভিডকালীন বাংলাদেশের অর্থনীতিঃ ২০১৯-২০ অর্থবছর” শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে চলমান ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর্যালোচনা ও আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। সিপিডি’র বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা (আইআরবিডি) প্রকল্পের আওতায় সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজিত হয়।

সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জনাব তৌফিকুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, অতিমারি মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা ছিল। এর ফলে, সক্ষমতার সঠিক ব্যবহার সম্ভব হচ্ছেনা।  জীবন ‘বনাম’ জীবিকার একটি ভুল বিতর্কে অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়া আবর্তিত হয়েছে – এটি হওয়া উচিত ছিল “জীবন ও জীবিকা”।  ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সুবিধা বিবেচনা করা হলেও, সাধারণ জনগণের সুবিধা বিবেচনায় যে ধরণের ঐকমত্যের অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন দরকার ছিল, তা হয়নি।

জনাব তৌফিকুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, রাজস্ব আহরণে চলমান ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ১২৫০০০ কোটি টাকার মতো ঘাটতি হতে পারে বলে সিপিডি অনুমান করছে।  আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।  এক্ষেত্রে, কর ফাঁকি ও অবৈধ অর্থপাচার রোধের মাধ্যমে সম্পদ আহরণের সুযোগ ব্যবহার করতে হবে।  চলমান অতিমারি থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধ করা জরুরি, বলেন তিনি।

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অতিমারি-সাইক্লোন ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে।  প্রবৃদ্ধির কথা না ভেবে স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার দিকেই নজর দিতে হবে। আমরা অনেকদিন ধরেই অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বেশকিছু সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলে আসছি।  বিশেষ করে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি অতিজরুরি হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক সময়েই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না।  এই অতিমারিকালীন সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নির্বাচন করে অর্থ বরাদ্দ ও তা বাস্তবায়নে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।  দেশের দরিদ্র মানুষের সুবিধা বিবেচনা করে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়াতে হবে।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি, বলেন এখন প্রবৃদ্ধির পেছনে পড়ে থাকার সময় নয়। এই অতিমারি থেকে ঘুরে দাড়াতে হলে সমাজে বৈষম্য নিরসনে মনযোগী হতে হবে। বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশের আয় ও ভোগের বৈষম্য বেড়ে চলেছে। একইসাথে, কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী যে সংকটের মধ্যে পড়েছে তা মোকাবেলায় সরকারের প্রনোদনা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যেতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা যারা আছেন তাদের সহযোগিতার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতিরোধ ও বাস্তবায়নের গতি ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজন হলে বেসরকারি বা বিদেশী সংস্থার মাধ্যমে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। চলমান অতিমারির ফলে আগামী অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি দেশে তাদের ব্যবসা বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।  বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক মিশনের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের অধিকার ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার আলোচনা অব্যাহত রাখা জরুরি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনটি শেষ হয়।