Dr Khondaker Golam Moazzem on export to Japan

Published in Bonik Barta on Sunday, 10 May 2015.

রুলস অব অরিজিন শিথিল করল জাপান
শুধু সেলাই করা নিট পোশাকেও বাণিজ্য সুবিধা পাবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিট পোশাক আমদানিতে বাণিজ্য সুবিধার রুলস অব অরিজিন শিথিল করেছে জাপান। এখন থেকে শুধু সেলাই করে পোশাক রফতানি করলেই রফতানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন।

শিল্প সূত্রে জানা গেছে, জাপানে নিট পোশাক রফতানিতে এত দিন বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা ছিল দুই স্তরের, যার আওতায় স্থানীয় উৎস থেকে পোশাকের কাঁচামাল ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা ছিল। সম্প্রতি এ বাধ্যবাধকতা শিথিল করে এক স্তরের রুলস অব অরিজিন করেছে দেশটি। ফলে স্থানীয় উৎস থেকে কাঁচামাল ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না। পোশাক শুধু সেলাই করে রফতানি করলেও তা জিএসপি সুবিধার আওতায় শূন্য শুল্কে জাপানে প্রবেশ করতে পারবে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে এ সুবিধা কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে জাপানের শুল্ক বিভাগ। এপ্রিলের মধ্যভাগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জাপানের দূতাবাস থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বাণিজ্যিক সুবিধার স্তর শিথিল হওয়ায় জাপানের পোশাক ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে নিট পোশাক ক্রয় করতে উৎসাহ পাবেন। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের নিট পোশাক রফতানি বাড়বে।

নিট পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি এ এইচ আসলাম সানি বণিক বার্তাকে বলেন, রুলস অব অরিজিন শিথিল হওয়ায় জাপানে নিট পোশাক রফতানি তিন গুণ বেড়ে যাবে। কারণ আগে আমদানি করা কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি পোশাক রফতানি করলে জিএসপি পাওয়া যেত না। এখন আর সেই বাধ্যবাধকতা থাকছে না। ফলে কাঁচামালের উৎস যা-ই হোক, পোশাক বাংলাদেশে সেলাই করে রফতানি করলেই জিএসপি পাওয়া যাবে।

বিকেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সক্ষমতা থাকায় এত দিন মূলত কটনভিত্তিক পণ্য রফতানি করলে জাপানে জিএসপি সুবিধা পাওয়া যেত। ফলে ২৭ ধরনের নিট পণ্য উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও জিএসপি সুবিধার আওতায় ছিল ১১টি নিট পণ্য। রুলস অব অরিজিন শিথিল হওয়ায় এখন ২৭ ধরনের নিট পণ্যেই জিএসপি সুবিধা পাওয়া যাবে।

স্থানীয় সুতা ও কাপড় প্রস্তুতকারক উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানের বাজারে নিট পণ্যের বাণিজ্য সুবিধার প্রভাব একাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— বাংলাদেশে তৈরি হয় এমন প্রচলিত কটনভিত্তিক পণ্যের কাঁচামাল প্রস্তুতকারকদের ওপর অল্প সময়ের জন্য হলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সিনথেটিক বা পলিয়েস্টার জাতীয় যেসব কাঁচামাল বাংলাদেশ তৈরি করে না, সেগুলোর আমদানি প্রবণতা বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি স্বল্পোন্নত সব দেশই নতুন রুলস অব অরিজিনের আওতায় পড়বে। ফলে সে দেশগুলোর সঙ্গে স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে যাবে। আর অপ্রচলিত কাঁচামাল যেমন সিনথেটিক বা পলিয়েস্টারের সুতা ও কাপড় তৈরিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশের প্রাথমিক বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়ে যেতে পারেন। তবে রুলস অব অরিজিনের এ পরিবর্তনে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরো বাড়বে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জাপানের বাণিজ্যিক সুবিধার নতুন ঘোষণা কাজে লাগিয়ে অপ্রচলিত পণ্য উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি করতে পারবে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এছাড়া দেশের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, জাপানে পোশাক রফতানি থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ আয় করেছে ৫৭ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এর মধ্যে নিট পণ্য রফতানি থেকে আয় হয় ২৫ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। রুলস অব অরিজিনের শিথিলতায় তা তিন গুণ বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।