Dr Khondaker Golam Moazzem on RMG export

Published in Bonik Barta on Thursday, 19 March 2015.

রফতানি আয় বাড়বে বছরে ৩০০ কোটি ডলার

বদরুল আলম

cpd-khondaker-golam-moazzem-rmg-export-mar-2015

ওভেন পণ্য বটম ট্রাউজার। ডেকোরেটিভ স্টিচ (বিশেষ সেলাই) দিতে প্রথাগত মেশিন প্রয়োজন হয় তিনটি। এজন্য অপারেটরের দরকার পড়ে তিনজন ও সময় ৩২ দশমিক ৪ সেকেন্ড। যদিও উন্নত প্রযুক্তির একটি মেশিনেই এটি করা সম্ভব। মাত্র একজন অপারেটরই সেলাইটি সম্পন্ন করতে পারেন মাত্র ১৬ দশমিক ৮ সেকেন্ডে।

একইভাবে প্রথাগত পদ্ধতিতে ওভেন ট্রাউজারের হিপ পকেট সংযুক্ত করতে মৌলিক যন্ত্র প্রয়োজন আটটি। যদিও উন্নত প্রযুক্তির একটি যন্ত্রেই কাজটি করা সম্ভব। এতে সময়ও লাগে অনেক কম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৈরি পোশাক খাতে প্রযুক্তিগত এ উন্নয়নে উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে, একই সঙ্গে বাড়বে রফতানি আয়ও। ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশন (আইসিআরআইইআর) ও বাংলাদেশের সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা অনুযায়ী, রফতানি আয় বৃদ্ধির এ হার বার্ষিক ১০-১২ শতাংশ। এ হিসাবে প্রযুক্তিগত উত্কর্ষের মাধ্যমে পোশাক রফতানি থেকে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বাড়তি আয় সম্ভব।

তৈরি পোশাক খাতে সুইংসহ বিভিন্ন মেশিন সরবরাহকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান জুকি বাংলাদেশ। ওভেন ট্রাউজার তৈরির প্রায় প্রতিটি ধাপে শ্রমিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা যায়, এমন মেশিন বাজারে আনতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে কারখানায় নতুন এসব মেশিন স্থাপন করা হয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে হা-মীম, এনভয় ও অনন্তের মতো বড় গ্রুপগুলো। পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু করেছে জেনারেশন নেক্সট, ফায়ার নিটিং, ডেল্টা কম্পোজিট, ইন্ট্রাম্যাক্স নিটিং, ইএইচ ফ্যাব্রিকস লিমিটেড, তুসুকা গ্রুপ, বেক্সিমকো গার্মেন্টস লিমিটেড ও ইউরো-বাংলা টেক্সটাইলস লিমিটেড।

জুকি বাংলাদেশের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এবিএম শামসুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, গত দুই বছরে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহার কম হওয়ার কারণেই মূলত মালিকদের মধ্যে এ প্রবণতা বাড়ছে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে কারখানায় ক্লাচ মোটরচালিত সুইং মেশিন ব্যবহার হতো। এখন ব্যবহার হচ্ছে সার্ভো মোটর। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে ২৫-৩০ শতাংশ।

উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা বাড়ার কথা বলছেন মালিকরাও। তুসুকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরশাদ জামাল বলেন, ‘প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের কারখানায় উৎপাদনশীলতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। পুরো খাতের উৎপাদনশীলতা যদি এভাবে বাড়ানো যায়, তাহলে বছরে ১২ শতাংশের বেশি অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব।’

ওভেন পণ্যের ডেকোরেটিভ স্টিচসহ পোশাক উৎপাদনের সব ধাপেই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়েছে। পাশাপাশি এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যার ব্যবহারে মসৃণ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে সরবরাহ ব্যবস্থাও। এর মাধ্যমে উৎপাদন তথা রফতানি আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন মালিকরা।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, পোশাক খাতের উন্নয়নে প্রযুক্তির পাশাপাশি পরিবেশগত বিষয়গুলোও চলে আসছে। পরিবেশগত পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন ও প্রযুক্তি ব্যবহারে বছরে ৩০০ কোটি ডলার রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব। পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নেয়া কারখানার সংখ্যা অর্ধশত আর উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা।

পোশাক কারখানায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফল নিয়ে সম্প্রতি সমীক্ষা চালায় আইসিআরআইইআর ও সিপিডি। প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমে বার্ষিক রফতানি আয় ১০-১২ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে “অ্যান এক্সপ্লোরেটরি স্টাডি অন টেকনোলজিক্যাল আপগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ’স অ্যাপারেলস সেক্টর ইন দ্য ডায়নামিকস অ্যান্ড চেঞ্জেস অব গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল ভ্যালু চেইন” শীর্ষক ওই সীমাক্ষায়।

সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের সমীক্ষাটি হয়েছিল ২০টি কারখানার ওপর। তাতে উঠে এসেছে, উন্নত প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বনে পোশাক খাতের বার্ষিক আয় ১০-১২ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।

প্রযুক্তিগত এ উন্নতির পথে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতাও সমীক্ষায় উঠে এসেছে বলে জানান এ গবেষক। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে অতিরিক্ত ব্যয়ভারসহ সার্বিক ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতার অভাব। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে এ প্রবণতা কম হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে এটা প্রবল। আর দেশের পোশাক শিল্পের বড় অংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। তার পরও পোশাক শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে এ প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি।

পোশাক তৈরিতে কয়েক ধরনের মেশিন ব্যবহার করা হয়। সুতা ও কাপড় কাটিং, সুইং, মার্কিং থেকে শুরু করে ডায়িং, প্রিন্টিং, স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ফিনিশিং, টেস্টিং, ওয়াশিং ও এমব্রয়ডারি মেশিন এর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে নিটিং কারখানাগুলোর অধিকাংশেই কম্পিউটারচালিত স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপন করা হচ্ছে। এতে কমে আসছে শ্রমিকের ব্যবহারও। আগে যে কাজ আটজন শ্রমিক করতেন, একই কাজ এখন একটি মেশিনই সেরে ফেলছে।

নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, খরচ কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পোশাক কারখানায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার বেড়েছে। নতুন প্রযুক্তিতে শ্রমিকের হাতের কাজ কমে আসছে। সাতটি মেশিন একজন হেলপারই পরিচালনা করতে পারছেন।