Professor Mustafizur Rahman on RMG export target

Published in BBC Bangla on Sunday, 7 December 2014.

সাত বছরে গার্মেন্ট রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার

141207134405_bd_garment_summit_640x360_focusbangla_nocredit

বাংলাদেশের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা, তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বর্তমানে যে আয় করেন, আগামী সাত বছরে তা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন।

তারা বলছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৫ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব।

বর্তমানে আয় হয় বছরে প্রায় ২ হাজার ৪শ কোটি ডলার।

রাজধানী ঢাকায় তিনদিনের একটি অ্যাপারেল সামিটের প্রথম দিনে রোববার পোশাক ব্যবসায়ীদের সমিতি- বিজিএমইর পক্ষ থেকে এই লক্ষ্যমাত্রার কথা ঘোষণা করা হয়।

ব্যবসায়ীদের এই লক্ষ্যমাত্রা কতোটা বাস্তবসম্মত?

এই পশ্নে ঢাকার শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বিবিসিকে বলেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব নয়।

তিনি বলেন , গত সাত-আট বছরে শত বিপত্তি স্বত্বেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে ডাবল-ডিজিট প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

“সুতরাং বর্তমানের ২৫ বিলিয়নকে আগামী সাত বছরে ৫০ বিলিয়নে নেওয়া সম্ভব।”

তবে, তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষমতা বাড়ানো সহ অবকাঠামোগত সুবিধা তার জন্য জরুরী।

ড রহমান আরো বলেন, রানা প্লাজা ধসের মত ঘটনায় ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশের’ যে দুর্নাম হয়েছে তা ঘোচাতে পোশাক শিল্পে যে কাঠামোগত পরিবর্তনের দিয়ে যাচ্ছে তা অবাধ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।


Published in Bangladesh Pratidin 

পোশাক রপ্তানি: প্রথম হওয়ার লড়াইয়ে বাংলাদেশ

লক্ষ্য ৫০ বিলিয়ন ডলার * রোড ম্যাপ তৈরির পরিকল্পনা * ৩০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা

জিন্নাতুন নূর

2_25154_48523-(1)

পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। কিন্তু এবার পোশাক খাতে প্রথম হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২০২১ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী তথা ৫০ বছরে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপের আওতায় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে রোডম্যাপ তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। যার অংশ হিসেবে গতকাল তিন দিনব্যাপী ঢাকা অ্যাপারেল সামিট শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে এ সময়ে আরও ৩০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পোশাক মালিকদের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। তবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা প্রদান, শ্রমিকদের সম্মান প্রদানসহ পর্যাপ্ত মজুরির নিশ্চয়তা এবং পণ্যের নায্য দাম পেতে ক্রেতাদের সঙ্গে মালিকদের দরকষাকষিতে দক্ষ হতে হবে। তবেই ২০২১ সালে পোশাক রপ্তানিতে ‘শীর্ষ ব্র্যান্ড’ হিসেবে উচ্চারিত হবে বাংলাদেশের নাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার (জিএসপি) স্থগিতের পরও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক গতিতে রয়েছে। এ শিল্পে এখন ১৫-২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দুই দশকেও এ গতি অব্যাহত থাকবে। টিআইবি’র তথ্যে জানা যায়, রানা প্লাজার ঘটনার পর পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে ৩১ শতাংশ শ্রমিকদের নিরাপত্তা উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে। বাকিরা পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছে। অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের পাশাপাশি সরকার পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৬৭ জন পরিদর্শক নিয়োগ করেছেন। এ জন্য বিজিএমইএ ১০ জন প্রকৌশলী নিয়োগ করেছে। তারা পোশাক কারখানার জন্য ব্যবহৃত ভবনগুলোর নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করবেন। পাশাপাশি ৩৫ জন অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। তারা পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি আগুন সৃষ্ট দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষার জন্য ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নামে একটি মিড-লেভেল কারখানা ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেছে। এ কর্মসূচির আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১ হাজার ৬২১টি কারখানার ১৩ হাজার ৫১৫ জনকে অগ্নি সুরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নিরাপদ কর্মপরিবেশে উৎপাদন উপযোগী একটি পোশাকপল্লি নির্মাণে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বাউশিয়ায় ৫৩১ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। পোশাকপল্লিটি স্থাপনের জন্য চীনের দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সহজ শর্তের ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা গার্মেন্ট কারখানাগুলোকে পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের জন্য এ পোশাকপল্লি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে আড়াইশ পোশাক কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। এ পল্লি থেকে বছরে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হবে বলে উদ্যোক্তারা আশা করছেন। অন্যদিকে বিজিএমইএ শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য রাজধানীর মিরপুরে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি জেনারেল হাসপাতাল তৈরির প্রকল্প নিয়েছে। শ্রমিকদের জন্য নতুন করে নিুতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শীঘ্রই বিশ্বে ‘শীর্ষ ব্র্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। গার্মেন্ট খাত এখন চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। কিন্তু সরকার ও অন্যদের সহযোগিতায় সমস্যা কাটিয়ে উঠছি। বেশি দিন নেই যখন বাংলাদেশের আরএমজি বিশ্বে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান ২০১৪-এর তথ্য মতে, ২০১৩ সালে বিশ্বে পোশাক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশ বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। যা এর আগে ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। সে সময় বার্ষিক রপ্তানি ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারে। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরও পোশাক খাতে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। এ খাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া আছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জন্য ইতিবাচক, বিশ্বে বেসিক গার্মেন্টের চাহিদা প্রতি বছর বাড়ছে। আর বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ৪০ শতাংশই বেসিক গার্মেন্ট। বিজিএমইএ বলছে, সাত বছর পর বিশ্বের পোশাক শিল্পের বাজার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৬৫ হাজার কোটি ডলারে। যা বর্তমানে ৪৫ হাজার কোটি ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশের আছে ৫ শতাংশ অংশ। এটি ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে পারলেই ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।এদিকে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর পোশাক রপ্তানিতে জার্মানি ২য় বৃহত্তম বাজার। জার্মানির শ্রম ও সামাজিকবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জর্জ আসমোসেন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে জানান, ইইউ জিএসপি স্থগিত করেনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি স্থগিত করাকে সমর্থনও করেনি। জার্মানি সতর্কতার সঙ্গে বাংলাদেশের পোশাক খাতের পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখছে। অর্থাৎ শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা পোশাক খাতে নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ না থাকাকে দুর্বলতা মনে করেন। এ জন্য তারা অ্যাপারেল বোর্ড গঠন প্রয়োজন বলে মনে করেন। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্য বিষয়ে গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে আগামী ৩-৪ বছরে এ খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে বিশ্বমন্দায় প্রধান বাজারগুলোতে রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কায় নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ বাড়ানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও নতুন বাজার সম্প্রসারণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রতি বছর নতুন বাজারে রপ্তানি আয় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। নতুন বাজার হিসেবে তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, আফ্রিকা, ব্রাজিল, মধ্যপ্রাচ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, চিলি, উরুগুয়ে, পর্তুগাল, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্তত ২৫টি দেশকে রপ্তানিকারকরা বিবেচনা করেন। জানা যায়, উদ্যোক্তারা নির্দিষ্ট কয়েকটি বাজারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এখন নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, অ্যাপারেল সামিটে ৫০ বিলিয়ন ডলারের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে, আমরাও চাই এটি অর্জিত হোক। এ জন্য শ্রমিকদের সম্মান ও পর্যাপ্ত মজুরি দিতে হবে। কর্মপরিবেশ ভালো করতে হবে। একই সঙ্গে মালিকদের পোশাক বিক্রির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত দাম পাওয়ার জন্য ক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষির দক্ষতা বাড়াতে হবে। বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, অবকাঠামো, যোগাযোগ, গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হলে ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে প্রথম স্থান অর্জন করতে পারবে। সরকারকে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোতে সাহায্য করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে আরও ৩০ লাখ শ্রমিকের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় অর্থনীতিতে যে খুব একটা চাপ পড়েছে বা পড়বে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। আমাদের নতুন বেশ কিছু বাজার তৈরি হয়েছে। তবে কিছু ব্যাংকিং সমস্যা আছে। এ জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হবে।