Professor Mustafizur Rahman on shrinking agro land

Published in Kaler Kantho on Tuesday, 5 August 2014.

দ্রুত কমছে কৃষিজমি রক্ষার ব্যবস্থা নেই

আপেল মাহমুদ

আমিনবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইদ্রিস দেওয়ানের গ্রামের বাড়ি সাভারের বলিয়ারপুরে। একসময় তাঁদের ১২০ একর কৃষিজমি ছিল। দ্রুত নগরায়ণ আর শিল্পায়নের দরুন বর্তমানে তাঁদের কৃষিজমি নেই বললেই চলে। যে জমিতে একসময় সবুজ ফসলের সমারোহ ছিল, সেখানে এখন কলকারখানা আর বহুতল ভবন। ইদ্রিস দেওয়ান বলেন, ‘৩০-৩৫ বছর আগে বলিয়ারপুরে দেওয়ান পরিবারের সবাই কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রতিটি ঘরে ছিল ধানের গোলা। এখন গোলা ভরা ধানের গল্প অতীত হয়ে গেছে। বর্তমানে দেওয়ানবাড়ির সাত হিস্যার কেউই কৃষিকাজ করে না। নেই তাদের কোনো কৃষিজমি।‘

সাভারের এই দেওয়ান পরিবারের মতো প্রায় একই রকম চিত্র পাওয়া যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সারা দেশে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাসিক ও বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে নির্বিচারে। গবেষক ও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর যে হারে কৃষিজমি কমছে, তাতে ১০ বছরের মধ্যে কৃষিজমির সংকট চরম আকার ধারণ করবে। এতে হুমকির মুখে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। কৃষিপণ্যের জন্য বিদেশনির্ভরতা বাড়বে। দেউলিয়া হয়ে শহরমুখী হবে কৃষকরা। মানুষের চাপ বাড়বে নগরীর ওপর। নতুন নতুন বস্তি আর খুপরি ঘরে ছেয়ে যাবে শহরের অলিগলি।

কৃষিজমি রক্ষার জন্য দেশে কার্যকর কোনো আইন নেই বললেই চলে। ভূমি-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমির শ্রেণি পরিবর্তনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিধান ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনে নেই।

জানা গেছে, ইউরোপের দেশগুলোতে পরিকল্পিতভাবে জমির ব্যবহার করা হয়। পাশের দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কৃষক ছাড়া অন্য কেউ কৃষিজমি কিনতে পারে না। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও হিমাচলে কৃষকরাই কেবল কৃষিকাজের জন্য কৃষিজমি কিনতে পারে। হরিয়ানায় কৃষিজমির এলাকাকে নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করা আছে। সেখানে জমি কিনে কৃষিকাজের বাইরে অন্য কোনো কাজ করতে গেলে সরকারের অনুমতি লাগে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০১০ সালে কৃষিজমি রক্ষার জন্য কঠোর আইন করাসহ ১০ দফা সুপারিশ উত্থাপন করলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রতিবছর শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে তিন হাজার হেক্টর কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ১০ বছরে দেশে কৃষিজমি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষার ১৪১৮ বঙ্গাব্দের বার্ষিক সংখ্যায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবদুল বায়েস ও মাহবুব হোসেন লিখেছেন, সাম্প্রতিককালে অতি দ্রুত অগ্রসরমাণ অকৃষিজাত কর্মকাণ্ডের কারণে ক্রমাগতভাবে কৃষি হারাচ্ছে চাষযোগ্য জমি। বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ২২৫ হেক্টর কৃষিজমি হারাচ্ছে কৃষিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে। একদিকে জনমিতিক চাপ এবং অন্যদিকে অকৃষিজাত কর্মকাণ্ডের বর্ধিষ্ণু চাহিদা ক্রমাগতভাবে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ সংকুচিত করে চলেছে। গবেষণাপত্রে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ শতাংশ চাষাবাদযোগ্য জমি হারিয়ে যাচ্ছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর কমছে দুই লাখ একর আবাদযোগ্য জমি। অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত জানান, ১৯৭২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫৬ একর কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে গেছে। বর্তমানে এ পরিমাণ আরো বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে কৃষিজমি থাকবে না, কৃষকও থাকবে না। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কৃষিজমি বিলুপ্তির প্রবণতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের পর ১২ বছরে গড়ে ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর করে কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। অথচ বছরে জনসংখ্যা বাড়ছে প্রায় ২৫ লাখ।

তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে কৃষিজমি কমার হার কিছুটা কম দেখা যায়। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৯৮৬ সালে কৃষিজমি ছিল ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর। ২০০০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭১ লাখ ৯ হাজার হেক্টরে। ২০০৩ সালে তা কমে আসে ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে। এ হিসাবে গড়ে প্রতিবছর ৪০ হাজার একর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে।

যেভাবে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে : কৃষিজমি কমে যাওয়ার জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ণ, যত্রতত্র শিল্পায়ন ও আবাসন গড়ে ওঠাকে দায়ী করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে, নদীভাঙন, ব্যাপক হারে ইটভাটা নির্মাণ ও রাস্তাঘাট তৈরি করায় যে পরিমাণ কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে, তা দেশের মোট জমির ১ শতাংশ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে চিংড়ি চাষের ফলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কৃষিজমি হ্রাস পেয়েছে। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় দিনের পর দিন চিংড়ি চাষ বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত আদমশুমারির তথ্য থেকে কৃষিজমি কমে যাওয়ার একটি চিত্র পাওয়া যায়। ২০০১ সালে করা আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে বসতবাড়ির সংখ্যা দুই কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিন কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩০। আগে দেশে বসতবাড়িতে জমির পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৫২ হাজার একর। পরে তা বেড়ে হয়েছে ছয় লাখ ৭৭ হাজার একর।

রাস্তাঘাট নির্মাণেও কৃষিজমির ওপর চাপ পড়ছে ব্যাপক হারে। বিশ্ব উন্নয়ন সূচক ২০০৯ থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দিকে ২০ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করত। ২০০৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৭ শতাংশ। বর্তমানে তা ৩২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে। এসবের বেশির ভাগই গড়ে উঠছে কৃষিজমির ওপর। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার ২০০১ সালের হিসাবে দেশে মহাসড়ক ছিল তিন হাজার ৮৬ কিলোমিটার। বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

একসময় দেশের শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল। সেখানে বর্তমানে মৎস্য খামারের বিপ্লব চলছে। কৃষিজমির ওপর গড়ে উঠেছে হাজার হাজার খামার। বেশির ভাগ খামারই গড়ে তোলা হয়েছে কৃষকদের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে। অন্যদিকে শিল্প-কারখানার ফলে ঢাকার সাভার ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা এবং ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ জেলায় কৃষিজমি কমে যাচ্ছে দ্রুত হারে। প্রায় প্রতিদিনই কৃষিজমির ওপর অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা ও আবাসিক স্থাপনা গড়ে উঠছে।

শিল্প মালিকদের চাপে সব জমি বেচে দিতে হয়েছে : বস্ত্রশিল্পের পীঠস্থান নরসিংদীর বাবুরহাট (শেখের চর) এলাকার বাসিন্দা ইমানউদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘বর্তমানে বসতবাড়ি ছাড়া আমাদের কোনো জমি নেই। অথচ একসময় বাপ-দাদার ৬০ বিঘা কৃষিজমি ছিল। ১০০ বছরেও আমরা চাল, ডাল ও শাকসবজি কিনে খাইনি। শিল্প-কারখানার মালিকদের চাপে পড়ে সব জমি তাঁদের কাছে বেচে দিতে হয়েছে।’

নরসিংদীর শিলমাণ্ডী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কৃষিজমির ওপর একাধিক বস্ত্র কারখানা গড়ে উঠছে। পাশেই ধানক্ষেতে সেচকাজ তদারক করছেন বৃদ্ধ ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘কারখানার জন্য আমার শেষ সম্বল এক কানি (৩৩ শতাংশ) জমি জোর করে কিনে নিতে চাইছে কারখানার মালিক। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে সেটা তার হাতে তুলে দিতে হবে। আমার বাবার প্রায় ৫০ কানি কৃষিজমি ছিল। সেই জমিতে উন্নতমানের গেণ্ডারি (আখ) ও সোনামুগ ডাল ফলত। ইতিপূর্বে সে জমিও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি।’

নগরায়ণে গেছে তালুক : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি গ্রামের চন্দন রায় বলেন, ‘একসময় আমার পরিবার এলাকার ছোটখাটো তালুকদার ছিল। চাষাবাদ করেই প্রতিবছর দু-তিন লাখ টাকা আয় করতাম। নগরায়ণের কারণে সেসব জমি কমতে কমতে কয়েক গণ্ডায় এসে ঠেকেছে।’

এমন আরো অনেক গৃহস্থ পরিবার কৃষিজমি বিক্রি করে এখন কারখানার শ্রমিক হিসেবে বেঁচে আছে।

৫০ হাজার একর জমিতে ইটভাটা : পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইটভাটা সমিতি সূত্রে জানা যায়, দেশে ছোট-বড় প্রায় ছয় হাজার ইটভাটা রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে। এসবের মধ্যে অনুমোদন রয়েছে চার হাজার ৫১০টির। গড়ে প্রতিটি ভাটায় ইট তৈরি হয় ৭৫ লাখ। সে হিসাবে এসব ইটভাটায় বছরে তিন হাজার ২৪০ কোটি ইট হয়, যার জন্য মাটি লাগে ১৩ কোটি টন। ঢাকার আশপাশের একাধিক ইটভাটা মালিক জানান, তাঁরা কৃষিজমি থেকে দুই ফুট গভীর করে মাটি কিনে থাকেন। এ কারণে সেসব জমিতে কোনো ফসল ফলে না। এতে সারা দেশে ১১ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে।

বছরে হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর নদীভাঙনে এক হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এ ধারা চললে ২০২৫ সালের মধ্যে তিন হাজার ৫৭৫ বর্গকিলোমিটার জমি নদীতে চলে যাবে, যার অর্ধেকই কৃষিজমি। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে দুই হাজার ৭৬৬ হেক্টর, ২০০৮ সালে দুই হাজার ১৭৮ হেক্টর এবং ২০১০ সালে এক হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।

কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন বেশি চট্টগ্রামে : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগে প্রতিবছর ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর, রাজশাহী বিভাগে ১৫ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, ঢাকা বিভাগে ১৫ হাজার ১৩১ হেক্টর, খুলনা বিভাগে ১১ হাজার ৯৬ হেক্টর, রংপুর বিভাগে আট হাজার ৭৮১ হেক্টর এবং বরিশাল বিভাগে ছয় হাজার ৬৬১ হেক্টর কৃষিজমি অকৃষিতে পরিণত হচ্ছে।

কাগুজে আইন : কৃষিজমি রক্ষার জন্য দেশে কার্যকর কোনো আইন নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ আইনই কাগুজে। কৃষিজমি রক্ষার জন্য ২০১০ সালের দিকে ‘জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি’ এবং ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আইন বাস্তবায়িত হয়নি। এসব আইনে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন না করার কথা বলা হয়েছে। পরিবর্তন করলেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও এ আইন প্রয়োগ হওয়ার নজির নেই।

জানতে চাইলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, জমির সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে চলতি বছরেই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এ নীতিমালায় কৃষি, অকৃষি, শিল্প, মৎস্য, উন্নয়ন ও আবাসিক খাত আলাদাভাবে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। কৃষি ও কৃষকদের জন্য কৃষি জোন ঘোষণা করে কৃষিজমি রক্ষার ওপর জোর দেওয়া হবে। সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ নিজের মতো কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে নীতিমালায়। এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞদল কাজ করছে।

একাধিক এসি ল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি) বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনে জমির শ্রেণি বিভাগের বিধান থাকলেও তা শুধু ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) আদায়ের কাজে ব্যবহার করা হয়। মালিকানা পর্চায় ও খাজনার রসিদে জমির শ্রেণি উল্লেখ থাকে। জমির শ্রেণি পরিবর্তনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিধান ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনে নেই। তবে দেশে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কোনো আইন প্রণয়ন করা হলে তা কার্যকর করার জন্য পর্চা বা খাজনার রসিদ প্রামাণিক দলিল হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

সাভারের আমিনবাজার রাজস্ব সার্কেলের এসি ল্যান্ড মো. শামসুল আরিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী কেউ নদী-নালা, খাল-বিল, রাস্তাঘাট প্রভৃতির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবে না। প্রাকৃতিক কারণে যদি এসবের শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো আইন নেই। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিতে হয়। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, মূলত খাজনা ফাঁকি রোধ করার জন্য এই বিধিনিষেধ রাখা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ : সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে যে হারে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে, তা সত্যিই অ্যালার্র্মিং (উদ্বেগজনক)। তবে যে হারে দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে কৃষিজমি রক্ষা করাও কঠিন। সে জন্য জমির জোনিং করতে হবে। আবাসন খাত কিংবা শিল্প খাতের জন্য অকৃষি জমি বরাদ্দের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। তা ছাড়া কেউ যদি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে বেশি করে ট্যাক্স ধার্য করলে অনেকেই কৃষিজমিতে অন্য কোনো কাজ করতে নিরুৎসাহ হবে।

নগরবিদ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই নীতিমালা মেনে ভূমি ব্যবহার করা হয়। পরিকল্পনা ও আইনের বাইরে সেসব দেশে এক ইঞ্চি জমিও ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ এ দেশে আইনের কোনো বালাই নেই। আইন থাকলেও তা মেনে চলার মানসিকতা কারো নেই। তবে কৃষিজমি রক্ষার জন্য এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা দরকার।

বুয়েটের নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সারোয়ার জাহান বলেন, ব্যাপক হারে কৃষিজমি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো অপরিকল্পিতভাবে ভূমির ব্যবহার। কোন জমি কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে সে ব্যাপারে কার্যকর নীতি থাকতে হবে। তা না হলে কৃষিজমি রক্ষা করা যাবে না। এ জন্য তিনি স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন। কারণ তারা দেশের আনাচকানাচে থাকা সব শ্রেণির জমিজমার খোঁজখবর রাখে। তাদের মাধ্যমে জমির শ্রেণি বিভাগ করতে পারলে সেটা অধিকতর কার্যকর হবে। তিনি বলেন, দেশে অনেক পতিত জমি আছে। সেসব জমি অকৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হলে আর কৃষিজমির ওপর এত চাপ পড়বে না। তা ছাড়া দেশে সমন্বিত উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে উন্নয়ন না করে জোনভিত্তিক উন্নয়ন করা হলেও জমির অপচয় রোধ হবে। আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক স্থাপনা নিচের দিকের চেয়ে ওপরের দিকে সম্প্রসারণের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

ড. সারোয়ার জাহান বলেন, বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০ লাখ বাংলাদেশি চাকরি করছেন। তাঁরা বছরে ১৫ হাজার কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। তাঁদের এই বিপুল পরিমাণ অর্থের অধিকাংশই জমিজমা ক্রয়ের পেছনে খরচ করা হচ্ছে। এসব জমির ওপর স্থাপনা নির্মাণ করে অনেক কৃষিজমি সংকুচিত করা হচ্ছে। প্রবাসীদের পাঠানো এসব টাকা উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা গেলে একদিকে যেমন কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন কমবে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে তা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে।

 

Published in Daily Sun on Tuesday, 5 August 2014.

Arable lands shrinking rapidly for lack of steps

Apple Mahmud

Idris Dewan, who is a retailer in Amin, Bazar hailed from Baliarpur of Savar. Previously, they had 120 decimals of agricultural land. But those agricultural lands have shrunk due to raid urbanisation and industrialisation. The green crops are replaced by high-rise buildings, mills and factories. “All members of Dewan family were dependent on agriculture 30-35 years ago,” said Idris. He said none of the family members is connected with agriculture and they have no arable land now.

This is the case with all cultivable lands across the country. The agricultural lands are declining rapidly. In absence of the necessary government steps, the agricultural lands are being used for housing and industrial purposes by changing the class.

The researchers and experts said the way the agricultural lands are decreasing, the country will face acute shortage of arable land and food within 10 years. The country’s dependence on imported food will rise resulting in rush of farmers towards the cities. The lanes and by-lanes of cities will be infested with slums.

The officials concerned said there is no law in the country to protect the agricultural land. Similarly, there is no provision in the land management laws to take steps against changing the class of land from agricultural to residential and industrial one.

It has been learnt the lands are used in the planned ways in the European countries. Only farmers can buy lands in Karnataka, Maharastra, Gujrat and Himachal states. Besides, in Hariana, the government’s permission is needed to use agricultural land for other purposes.

In Bangladesh, in 2010, the parliamentary standing committee on planning ministry placed a 10-point recommendation including formulating law to protect the cultivation land. But the recommendations are yet to be implemented. A report of the committee said the country is losing 3,000 hectares of agricultural lands every year. If the situation continues, the country will lose all agricultural lands within 10 years.

A report of Bangladesh Development Study said the country has been losing 225 hectares of lands per day. Meanwhile, a research paper of Centre for Policy Dialogue shows that 2 lakh acres of cultivable lands are declining every year.

The way agricultural lands are vanishing

Unplanned urbanisation, indiscriminate industrialisation and housing projects are responsible for shrinkage of agricultural lands. Some other researches said erosion of river and construction of brick fields and roads are aggravating the situation. On the other hand, prwan cultivation in Khulna, Bagerhat, Satkhira and other areas in the southern region are responsible for fall in cultivable land.

According to a report of 2001, the highway was 3,086 kilometer which has become double now. Agricultural lands are fading away in Savar, Keraniganj, Narayanganj, Narsingdi, Gazipur and Manikganj for construction of mills and industries.

Landowners sold their lands on coercion

Imanuddin Mandal, a resident of textile industry’s centre Baburhat under Narsingdi, said they have no land except the homestead right now. He claimed that his ancestors had 60 bighas of land. “We did not buy rice, dal and vegetable from market in 100 years. But, we had to sell our lands due to pressure by the industry owners.” An on- the-spot visit shows that some textile industries have been set up on agricultural lands at Shilmondi village of Narsingdi.

Similarly, Chandan Roy, a resident of Sonmandi village under Sonargaon upazila of Narayanganj, said they had huge chunk of land in the past. But they are surviving by working in the factory, after selling cultivation lands.

A report of Department of Environment said brick factories have been constructed on 50,000 acres of lands across the country. A huge quantity of 13 crore tons of mud is being used for making bricks in those fields. As a result, 11,000 hectares of lands lay uncultivated.

A report of Bangladesh University of Engineering and Technology (BUET) one thousand hectares of land is devoured by river erosion every year. If this process continues, about 3,575 square kilometres of land will go to river bed by 2015, of which 50 percent is arable land.

According to information of Centre for Environmental and Geographic Information Services (CEGIS), 2,766 hectares in 2007, 2,178 hectares in 2008 and 1,655 hectares in 2010 of land were devoured by the rivers.

Sources of the Agriculture Extension Department said 17,968 hectares in Chittagong division, 15,945 hectares in Rajshahi division, 15,131 hectares in Dhaka division, 11,096 hectares in Khulna division, 8,781 hectares in Rangpur division and 6,661 hectares in Barisal division turned into un-arable land.

There are no effective laws in the country to protect agricultural land. Most of the laws are paper-based. Government had taken an initiative to formulate National Land Use and Development Act in 2010 but it was not implemented yet.

When asked State Minister for Agriculture Saifuzzaman Javed told Kaler Kontho, “A national policy will be finalized in current fiscal for ensuring coordinated use of land. Work has been going on to separate agriculture, industry, fish, development and housing sector under the policy.”

On the other hand, Assistant Commissioner (Land) said actually Land Management Law is used only to collect land development tax. Classification of land is mentioned in the toll receipt of owner.

Md Shamsul Arif, AC Land of Aminbazar Revenue Circle of Savar told Kaler Kontho, “Nobody can change the category of river, canal, khal, beel and roads according to the Land Management Law. Concerned Deputy Commissioner (DC) will take measure if the category of land changes naturally. There is no direct law against category change of agriculture land so the Deputy Commissioners can give permission to change the category of land.”

CPD Executive Director Mostafizur Rahman told Kaler Kontho, “It is very much alarming that agricultural lands are shrinking. It is very tough to protect such land because population of the country has been increasing rapidly. For protecting agricultural land zoning system should be implemented.”

Prof Dr Sarwar Zahan, DURP, BUET said, “The main cause of declining of agriculture land in large scale is unplanned use of land. Effective policy should be formulated for using the agricultural land. Otherwise we cannot protect our agricultural land.”

Dr Sarwar Zahan said, “Some 80 lakh Bangladeshi citizens have been working in different countries across the globe. They remitted about 15000 crore dollars to Bangladesh. Most of the money has been used to purchase land which was used to construct buildings causing shrinkage of agricultural land of the country.”