Professor Mustafizur Rahman on US Federal Reserve Interest rate and Bangladesh’s export competitiveness

Published in Jugantor on Tuesday, 20 May 2014.

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে

শাহ আলম খান

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি আরও প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমস মূল্যস্ফীতির হার কমাতে ঋণের সুদের হার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। এ খবর শুনেই বাংলাদেশের রফতানিকারকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা বলেছেন, ঋণের সুদের হার বাড়লে ব্যবসা খরচ বেড়ে যাবে। তখন তারা ব্যবসা কমাতে বাধ্য হবেন। এতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে হয় দাম কমাতে হবে, অন্যথায় রফতানির পরিমাণ কমাতে হবে। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে জিএসপি (জেনারালাইস্ট সিস্টেম অব প্রেফারেন্স) সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বাড়তি কর দিতে হচ্ছে। তার ওপর আবার সুদের হার বাড়লে আরও বেশি সমস্যায় পড়তে হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী যুগান্তরকে বলেন, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি পেলে বাণিজ্যিক ঋণের সুদের হারের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। যেহেতু ফেডারেল সুদের হারের ওঠানামার সঙ্গে বাণিজ্যিক সুদের হারের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। তাই এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড, রিটেইলার ও অন্যান্য ব্যবসায়ীর ব্যবসা খরচ বেড়ে যাবে। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের পোশাকের মূল্যের ওপর।

তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালের ২৭ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের জিএসপির ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। কিভাবে জিএসপি ফিরে পাওয়ার শর্তগুলো পূরণ করা যায় এর প্রভাবে ইতিমধ্যেই আমরা চাপের মুখে রয়েছি। তদুপরি অ্যাকোর্ড ও অ্যালায়েন্স এবং ন্যাপের কারখানা পরিদর্শন, কারেক্টিভ অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন- এসব খাতে আমাদের খরচ যখন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেট বৃদ্ধির হলে আমাদের পোশাক কারখানাগুলো ক্রেতাদের কাছ থেকে বর্ধিত মূল্য তো পাবেই না, বরং উল্টো দরপতনের মুখে পড়বে।

তবে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ না করলেও পুরোপুরি একমত নন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না যে এই ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাবে খুব একটা অভিঘাত আমাদের রফতানি বাণিজ্যে পড়বে বা এর ফলে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা কমে যাবে। কিন্তু আমাদের সতর্ক হতে বাধা নেই। যদি এ ধরনের পরিস্থিতি চলেই আসে, তবে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে যেভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী করা যায় সে উদ্যোগের পাশাপাশি প্রতিযোগী সক্ষমতাও যাতে ধরে রাখা যায় তার জন্য দরকষাকষি ধরে রাখাটা জরুরি। এর জন্য পণ্যের গুণগতমানও ধরে রাখতে হবে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৫৩০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়। এর মধ্যে প্রায় তিন কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করা হতো জিএসপি সুবিধার আওতায়। বাকি পণ্যে কোনো সুবিধা পাওয়া যেত না। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশে থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি করা হয় তৈরি পোশাক। এতে কোনো জিএসপি সুবিধা পাওয়া যায় না। জিএসপির আওতায় পণ্য রফতানি করলে ১৫ শতাংশ কর সুবিধা পাওয়া যায়। জিএসপি সুবিধার বাইরে পণ্য রফতানি করলে ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। যে কারণে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করায় এখন বেশি কর দিয়ে পণ্য রফতানি করতে হচ্ছে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ৪৯৯ কোটি ডলার। যা দেশটিতে বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বাজার। এছাড়াও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গত বছর জিএসপির আওতায় ৩ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের তামাক, ক্রীড়া সরঞ্জাম, চিনামাটির তৈজসপত্র ও প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য দেশটিতে রফতানি করছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি পেলে ব্যবসায় খরচ বৃদ্ধি পায়। পণ্যমূল্য বাড়ে। এতে আমদানি-রফতানি ব্যয়ও বাড়ে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বেলায়ও তাই ঘটবে। আর এমন পরিস্থিতিতে আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্যের মূল্য ধরে রাখা বা মুনাফা করা কতটা টেকসই হবে সেটি নির্ভর করবে বাণিজ্যকারী দেশ বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দরকষাকষির মাত্রার ওপর। এখন দেশের পোশাক শিল্পের নানা প্রতিকূলতায় কতটা দরকষাকষি করে মূল্য ধরে রাখা যাবে সেটি সময়ের অপেক্ষা। না পারলে তো অবশ্যই দুশ্চিন্তার কারণ হবে উদ্যোক্তা কিংবা দেশের রফতানির ক্ষেত্রে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম সম্প্রতি ঋণের সুদের হার বাড়ানোর কথা জানিয়েছে। এ লক্ষ্যে তারা বাজার থেকে ডলার তুলে নেবে। এ জন্য প্রায় ১০০০ কোটি ডলারের বন্ড কিনে নেবে। এতে বাজারে ডলারের সরবরাহ কমবে। অন্যদিকে সুদের হার বেড়ে যাবে। এ প্রক্রিয়ায় তারা সুদের হার শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকগুলোর দৈনিক ভিত্তিতে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিয়ে থাকে। যার সুদের হার শূন্য দশমিক ০৪ থেকে ০৬ শতাংশ। ওই হারে সুদের হার বাড়লে ঋণের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ব্যবসায়ীদের লাভ কমে যাবে। তখন ব্যবসায়ীরাও সতর্ক হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের বড় একটি অংশ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। এর ঋণের সুদের হারও বেড়ে যাবে। তখন ক্রেতারাও প্রয়োজন ছাড়া বিলাসী ব্যয় কমিয়ে দিতে বাধ্য হবে। এ প্রক্রিয়ায় তাদের মূল্যস্ফীতির হার কমানো হবে। এমনিতেই গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত টানা ১০ মাস দেশটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক দরপতনের মুখোমুখি হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্টের (ওটিইএক্সএ) প্রদত্ত তথ্য মতে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর সময়ে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশী পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে যৌক্তিক মূল্য থেকে ১ দশমিক ০৩ শতাংশ দরপতন হয়েছে। যদিওবা চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে কিছুটা মূল্যবৃদ্ধির ধারায় ফিরে এসেছে। তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ সুদের হার বৃদ্ধি পেলে এই দরপতন আরও তীব্র হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।