বিনিয়োগ বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Published in যুগান্তর on Sunday 9 June 2019

 

গত কয়েক বছরে দেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। এর অন্যতম কারণ বিনিয়োগের জন্য পুঁজি সংগ্রহের দুটি খাতেই (ব্যাংক ও পুঁজিবাজার) বিশৃঙ্খলা চলছে। এ অবস্থায় আগামী বাজেটেও বিনিয়োগ বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া মোটাদাগে সরকারের অন্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে পুরো আর্থিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে। বাজেট হতে পারে আর্থিক ব্যবস্থা সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের দর্শনকে ধারণ করে বাজেট হওয়া উচিত। যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন –  মনির হোসেন

 

যুগান্তর : এবারের বাজেটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিবেচনায় এবারের বাজেটে বড় চ্যালেঞ্জ তিনটি। এগুলো হচ্ছে- রাজস্ব বা সম্পদ আহরণ, বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা।

এর মধ্যে রাজস্ব বা সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক- এ দুটি উৎসই চ্যালেঞ্জে। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে, রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবে আদায় তার চেয়ে অনেক কম। এ বছরও ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। প্রতিবছরই এই পার্থক্য বাড়ছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হারের হিসাবেও রাজস্ব ঘাটতি পার্থক্য বাড়ছে। ফলে অভ্যন্তরীণভাবে সম্পদ আহরণের এই সীমাবদ্ধতা, স্বাভাবিকভাবেই সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যুক্তিযুক্ত নয়। অন্যদিকে সহজ শর্তে বৈদেশিক অনুদান ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি দেখি না।

ফলে প্রতিবছরই জিডিপির ৪ শতাংশের মতো ঘাটতি থাকছে। আর এই ঘাটতির বড় অংশই সঞ্চয়পত্র ও কিছুটা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। এসব ঋণের সুদ খুব বেশি। ফলে সরকারের দায়দেনা পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে। এতে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বছরের শেষ তিন মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বেশি হারে বাস্তবায়ন প্রবণতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ফলে সম্পদ সরবরাহের ক্ষেত্রে সহজ শর্তের অনুদান ব্যবহার করতে না পারলে বাজেটের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এক্ষেত্রে বাজেট প্রণেতাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের হিসাব-নিকাশ দেয়া হয়, কিন্তু সেগুলো বাস্তবভিত্তিক নয়।

বাজেটের দ্বিতীয় বিষয়ের (বিনিয়োগ বাড়ানো) ক্ষেত্রে বলতে হয়, গত কয়েক বছর ধরে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। এটি সবাই স্বীকার করছে। ফলে বিনিয়োগ বাড়ানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ বেসরকারি বিনিয়োগে অর্থায়নের বড় দুটি উৎস মুদ্রাবাজার বা ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা নেই। ব্যাংকগুলোর পুঁজিস্বল্পতা রয়েছে। খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আরও একটি সমস্যা হল সুদের হার বিনিয়োগ সহনীয় নয়। আর হুকুম দিয়েও এই সুদের হার কমানো যায়নি। উল্টো সরকার নতুন যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা ঋণখেলাপিদের উৎসাহিত করবে। এতে ভালো গ্রাহকদের এক ধরনের শাস্তি দেয়া হবে। অর্থাৎ সরকারের এই পদক্ষেপ ঠিক উল্টো পথে যাত্রা। এতে সামগ্রিকভাবে সুশাসনের ঘাটতি তৈরি হবে। ফলে ব্যাংকিং খাতে যদি আমূল সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়া হয়, তাহলে সুদের হার কমানোর হুকুম দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কারণ এই সমস্যা অনেক গভীরে।

এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ ও কার্যক্রম এবং সরকারের সদিচ্ছা। তবে এটি শুধু বাজেটের মধ্য দিয়ে করা যাবে না। বাজেট দিয়ে সূচনা করা যাবে। আমাদের প্রত্যাশা হল, বাজেটে এমন কোনো সুবিধা যেন না দেয়া হয়, যাতে ঋণখেলাপি পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করে। একইভাবে সমস্যা রয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এখানেও স্বচ্ছতা ও জবাবহিদিতা নেই।

এক ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী এটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বিভিন্নভাবে এই বাজারে কারসাজি হচ্ছে। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সমস্যাটিকে স্বীকার করে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাজেটে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কিছু সুবিধা দেয়ার কথা আসছে। কিন্তু এই সুবিধায় শেয়ারবাজারের মৌলিক সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। ফলে পুঁজিবাজারেও বড় ধরনের সংস্কার দরকার। এ কারণে আমাদের বক্তব্য হল বাজেটে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না, যা পুঁজিবাজারের সমস্যাকে আরও গভীরতর করে।

বাজেটের তৃতীয় চ্যালেঞ্জ বৈদেশিক লেনদেনের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আর্থিক লেনদেন ও চলতি হিসাব- এ দুটোতেই ঘাটতি বাড়ছে। পাশাপাশি চাপ বাড়ে দেশের মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর। বর্তমানে অন্য দেশগুলোর তুলনায় টাকার বিনিময় হার বেশি। এটি কমিয়ে সমন্বয় করা দরকার। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে এটি স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। এতে রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও ক্রমান্বয়ে বৈদেশিক লেনদেনের দায় বাড়ছে। যদিও বর্তমানে এই দায় স্বস্তির জায়গায় আছে। কিন্তু আগামী দুই-তিন বছরে এটি অস্বস্তিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবসায়ীদের রফতানির জন্য কিছু প্রণোদনা দিতে পারে সরকার। কিন্তু এতে সাময়িক কিছুটা সমাধান হলেও গভীর থেকে সমস্যার সমাধান হবে না। কয়েকদিন পর আবার একই সমস্যা সৃষ্টি হবে। প্রণোদনার জন্য চাপ আসবে। ফলে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না, যার জন্য রফতানিতে বাড়তি সমস্যা সৃষ্টি হবে। সামগ্রিকভাবে বক্তব্য হল টাকার বিনিময়ের হার সমন্বয় না করে সাময়িকভাবে কিছু সুবিধা দিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা অর্থনীতির সুষ্ঠু নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তবে রেমিটেন্স (প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ) বাড়ানোর জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের কিছু সুবিধা দেয়া যেতে পারে।

 

যুগান্তর : আর্থিক ব্যবস্থায় সংস্কারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই, আপনি কী মনে করেন?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : বাজেটের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় ব্যয় ও সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে কিছুটা সমন্বয় ও উন্নতি হতে পারে। কিন্তু ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, বৈদেশিক লেনদেন, মুদ্রার বিনিময় হার, মূল্যস্ফীতি ও কৃষিসহ আরও যে সব সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংস্কার দরকার। বর্তমান সরকারের প্রথম বছর যাচ্ছে, কিন্তু সংস্কারের জন্য আমরা কোনো হাঁকডাক দেখিনি। সবকিছু গতানুগতিকভাবে চলছে।

কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখতে হলে ভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চেতনা ও পদক্ষেপের ভেতরে বাজেটকে স্থাপন করতে হবে। বাজেট দিয়ে সব সমস্যা সমাধান হবে না। কিন্তু বাজেটকে বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নেয়া যেতে পারে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অনেক কিছু রয়েছে। কিন্তু বাজেটের মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহারের দর্শনকে ধারণ করা যাবে কিনা সেটি বড় প্রশ্ন। আমরা তার জন্য অপেক্ষা করছি।

 

যুগান্তর : ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের জন্য এ বছর অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল ভ্যাট আইন। এটি তিন ধাপে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা এর সঙ্গে একমত নই। আমরা মনে করি, ভ্যাটের হার কমিয়ে সমানভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। বিভিন্ন হারের কারণে কর আহরণ, প্রয়োগ, সুবিধা দেয়া ও হিসাব রাখার ক্ষেত্রে আগে যে সব সমস্যা ছিল, সে সমস্যা থাকবে। অন্যদিকে এই আইন চালু হলে আগের চেয়ে কর বেশি পাবে, না কম পাবে, সেটিও পরিষ্কার নয়। এরপরও ভ্যাট আইন চালু হোক এটা আমরা চাই। কিন্তু এখনও আইনটি চালুর প্রস্তুতি শেষ হয়নি। ফলে আগামী ৫ বছরে কীভাবে এটি কার্যকর হবে, সে পদক্ষেপগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে। অন্যদিকে ভ্যাট একটি পরোক্ষ কর, এটি আদায়ের ক্ষেত্রে জোর দেয়া হবে, কিন্তু প্রত্যক্ষ কর আদায় হবে না- এটি যৌক্তিক নয়। কারণ দেশের মোট করের ক্ষেত্রে মাত্র ২৫ থেকে ২৬ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর। এটি বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

 

যুগান্তর : অর্থনীতিতে বড় সমস্যা বৈষম্য। এটি কমানোর ব্যাপারে বাজেটে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : বৈষম্য কমানোর ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, শুধু আয়কর দিয়ে বৈষম্য কমানো যাবে না। প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো হলেও খুব বড়ভাবে বৈষম্য কমবে না। এক্ষেত্রে সম্পদের ওপর কর বসাতে হবে। উত্তরাধিকারের মাধ্যমে যে সম্পদ পাওয়া গেছে, সেটির ওপর কর বসাতে হবে। পৃথিবীর যে সব দেশে বৈষম্যবিরোধী রাজস্ব ব্যবস্থা হয়েছে, এর সব দেশই সম্পদের করকে গুরুত্ব দিয়েছে। বর্তমানে সম্পদের ওপরে সারচার্জ রয়েছে। তাই এ বছর পরিষ্কারভাবে সম্পদের ওপর কর বসানো উচিত। বর্তমানে যেসব কর বসানো বা ছাড় দেয়া হচ্ছে, সেগুলোও বৈষম্য বাড়ায়।

 

যুগান্তর : এ বছর বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোন খাতে বেশি জোর দেয়া উচিত?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে মাত্র ১ শতাংশ। এই হারে ব্যয় দিয়ে বাংলাদেশের মতো দেশে দারিদ্র্য ও বৈষম্য করা সম্ভব নয়। এতে ঘুরেফিরে আবার গরিব মানুষ সৃষ্টি হবে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, গরিব মানুষের শিক্ষার হার বেড়েছে, কিন্তু তার গড় অর্জন একটি সচ্ছল পরিবারের চেয়ে কম। সাধারণভাবে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ বছর।

এটি পৃথিবীর গড় আয়ুর চেয়ে বেশি। কিন্তু এখনও একটি সচ্ছল পরিবারের চেয়ে গরিব পরিবারে মাতৃমৃত্যুর হার দ্বিগুণ। এর মানে হল গরিবের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা না দিতে পারলে বৈষম্য দূর হবে না। একটি মানুষ কীভাবে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতায় টিকবে, তা নির্ধারিত হয় অনেক আগে। প্রথমত সে কোন উত্তরাধিকার নিয়ে জন্মেছে। দ্বিতীয়ত সে কী অর্জন করেছে। এ কারণেই মানুষের অর্জনের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এটি বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এজন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।

 

যুগান্তর : দেশ থেকে টাকা পাচারের বিভিন্ন তথ্য আসছে। এটি রোধে বাজেটে কী ধরনের পদক্ষেপ থাকা উচিত?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : সাধারণভাবে বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ নেই। অপরদিকে তারাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে এটি হচ্ছে তা বোঝা দরকার। এই টাকা পাচারের কয়েক কারণ হতে পারে। যেমন তারা বিনিয়োগের পরিবেশ পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছে না। অথবা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি তাদের আস্থা নেই। সামগ্রিকভাবে কেন উচ্চবিত্তরা দেশে টাকা রাখে না, সেটি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। আবার যদি এ ধরনের কাজ আইনের আওতায় না এনে প্রশ্রয় দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে বাজেটের আকার বাড়িয়ে লাভ নেই। এ অবস্থার উত্তরণে আমরা বড় ধরনের সংস্কারের কথা বলছি। বাজেট নিয়ে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্যই সংস্কার দরকার।

 

যুগান্তর : বিভিন্ন মহল থেকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, আপনার মন্তব্য কী?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : আমি মনে করি করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর যৌক্তিক হবে না। কারণ বাংলাদেশে খুব কম মানুষই কর দেয়। ফলে করের ভেতরে যারা এসেছেন, তাদেরকে করের আওতা থেকে বের করে দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করি না। এক্ষেত্রে সর্বনিু স্তর ১০ শতাংশ। এটি কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা উচিত।

 

যুগান্তর : এ বছর কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পায়নি। আগামীতে উৎপাদনে এর কী প্রভাব পড়তে পারে?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : জিডিপির অন্যতম মৌলিক খাত হল কৃষি। চলতি মৌসুমে কৃষকের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায়নি। প্রশ্ন হল, এই অবস্থা কেন সৃষ্টি হল। আমরা পরিষ্কারভাবে দেখেছি, সরকারের নীতি এবং সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়ায় অবস্থা বেশি গুরুতর হয়েছে। কারণ মূল্য নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানি শুরু করল সরকার। কিন্তু কখন এই আমদানি বন্ধ করতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে বিষয়টি নজরদারি করার দায়িত্ব যাদের ছিল, তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি। সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এবার এর সুফল আর কৃষক পাবে না। অন্যদিকে কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা করেনি। আমরা পণ্য মূল্য কমিশন করার জন্য বারবার বলে আসছি। এতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাইরে উৎপাদক, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সমন্বয় করে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণ করতে পারে।