Dr Debapriya Bhattacharya on Japanese Bay of Bengal Industrial Growth Belt (BIG-B) initiative

Published in Shokaler Khobor on Monday, 8 September 2014.

উন্নয়ন সম্ভাবনার চাবিকাঠি হতে পারে বিগ-বি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সঙ্গে পুরনো বন্ধুতা আরও জোরদার করে গতকাল ফিরে গেছেন বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে। তার বাংলাদেশ সফরকে এই অঞ্চলের ভূ-অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এবারের

সফরের সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। কেউ কেউ বলছেন বাংলাদেশের ভূ-অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভাবনার চাবিকাঠি হতে পারে এই উদ্যোগ। এ ছাড়া বিগ-বির আওতায় বিদ্যুেকন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যকার সড়ক, রেল ও নৌ-যোগাযোগ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হলে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগও আসবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

মাত্র সাড়ে ২২ ঘণ্টার সফর শেষ করে গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় এক বিশেষ বিমানে করে কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন শিনজো ও তার সফরসঙ্গীরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও সচিব শহিদুল হক তাদের বিদায় জানান। এর আগে দুই দিনের সফরে শনিবার দুপুরে সস্ত্রীক ঢাকায় আসেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে ছিল জাপানের ২২টি প্রাইভেট কোম্পানিসহ মোট ১৫০ জনের একটি প্রতিনিধি দল।

তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়েছে এই বিগ-বি ধারণাটি। প্রথমটি শিল্প ও বাণিজ্য, দ্বিতীয়টি জ্বালানি এবং তৃতীয় স্তম্ভটি হল পরিবহন ব্যবস্থা। একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ী প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পরিবহন ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা এই স্তম্ভগুলোর মূল লক্ষ্য। এই উদ্যোগের আওতায় দুই প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহ, অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নসহ নগর উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতের বিকাশে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়াও দুই প্রধানমন্ত্রী সামুদ্রিক সম্পদ টেকসই উপায়ে ব্যবহারেও সম্মত হয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে ব্লু ইকোনমি বা সাগর অর্থনীতির বিকাশে একসঙ্গে কাজ করার কথা আলোচিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে ‘বিগ-বি’ প্রকল্পকে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভাবনার চাবিকাঠি উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হতে প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়াও আগ্রহ রয়েছে চীন ও আমেরিকার। সেক্ষেত্রে জাপানের এই সাহায্য বাংলাদেশে আগ্রহী বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব সুসংহত করল। সামগ্রিক অর্থে এই উদ্যোগ ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে।

তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, খেয়াল রাখতে হবে সমন্বিত এই উদ্যোগটি যেন প্রতিযোগিতামূলক হয়। এ ছাড়া প্রকল্পের অতিমূল্যের বিষয়েও বাংলাদেশকে নজর রাখতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল আজীম বলেন, বিনিয়োগ সব সময়ই ইতিবাচক। ফলে জাপানের বিগ-বি উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রকল্পে জাপান যেন আমাদের বিদ্যমান অবকাঠামো বিশেষ করে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি ব্যবহার না করে তারা নিজেরাই প্ল্যান্ট এবং অবকাঠামো তৈরি করে নেয়, যাতে করে পরবর্তী সময়ে আমরা সেগুলো কাজে লাগাতে পারি। এ ছাড়া জাপানে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার লোকাল মার্কেট রয়েছে। দুটি দেশের সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণের ফলে এই মার্কেটে বাংলাদেশের প্রবেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হল।

তিনি বলেন, বিগ-বি’র আওতায় বিদ্যুেকন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যকার সড়ক, রেল ও নৌ-যোগাযোগ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হলে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে।