Professor Mustafizur Rahman and Dr Debapriya Bhattacharya on BCIM connectivity

Published in Jugantor on Thrusday, 6 February 2014.

আঞ্চলিক ইকোনমিক করিডোরে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

মিজান চৌধুরী

আঞ্চলিক ইকোনমিক করিডোরে (বিসিআইএম) বাংলাদেশ সম্পৃক্ত হলে বছরে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া যাবে। বাণিজ্যনীতি সহজীকরণের ফলে শুল্কমুক্ত থেকে বাংলাদেশ এ সুবিধা নিতে পারবে। বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে বিসিআইএম হলে চারটি দেশের মধ্যে বছরে ৪৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এই বাণিজ্য বৃদ্ধি থেকে বাংলাদেশ ওই শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

বিসিআইএম নিয়ে এশীয় প্যাসিফিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং নেটওয়ার্ক অন ট্রেডের গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই আর্থিক সুবিধার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সংস্থাটি বিসিআইএম হলে কোন দেশ কি সুবিধা পাবে তার ওপর একটি স্টাডি করেছে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে- চারটি দেশের মধ্যে যদি বাণিজ্যনীতি আংশিক উদারীকরণ করে তাহলে সর্বনিু ৩ হাজার ১২০ কোটি টাকার শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে বাংলাদেশ। জানা গেছে, সম্প্রতি বিসিআইএম নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে চারটি দেশের মধ্যে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, আমরা বিসিআইএম নিয়ে কাজ করছি। আশা করি শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হবে। অবশ্য বিসিআইএম নিয়ে আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। মূলত বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হবে।

ওই বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালের মে মাসে বিসিআইএমের আওতায় ইকোনমিক করিডোর গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চীন একটি খসড়া প্রেরণ করে। ওই খসড়ার ওপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মতামত দিয়েছে। পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীতিগত সমর্থন দিয়েছে। ওই কার্যপত্রে আরও বলা হয়, বিসিআইএমের মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়বে। চারটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে পরিবহনব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। ইতিমধ্যে সড়ক পথের রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। রেল ও নৌপথের রুট চিহ্নিত করতে হবে। এজন্য অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে গভীর সমুদ্র বন্দরের উপযোগিতা বহুলাংশে আরও বাড়বে।

বিসিআইএমের সর্বচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ভারতের বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটি অবস্থানে যেতে পারব। বিসিআইএম কানেকটিভিটি হলে সবাই সুবিধা পাবে।

এদিকে গত জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিসিআইএমের সর্বশেষ বৈঠক। অবশ্য ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করে সরকারি ও বেসরকারি একটি প্রতিনিধি দল। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম আহমেদ যুগান্তরকে জানান, বাংলাদেশের নির্বাচনকে ভারত সমর্থন দেয়ার বড় একটি কারণ হচ্ছে বিসিআইএম। অর্থনীতির দিক থেকে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারবে বিসিআইএম। বিসিআইএম হলে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া যুক্ত হতে পারবে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তানও যুক্ত হবে। বৈঠকের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিসিআইএম নিয়ে আলোচনা বেশি এগিয়েছে।

বিসিআইএম করিডোর হল বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের সঙ্গে কানেকটিভিটি। দীর্ঘদিন থেকেই চারটি দেশ এ লক্ষ্যে কাজ করছে। গত বছরের ডিসেম্বরে চারটি দেশের প্রতিনিধিরা চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে মিলিত হয়ে এ ব্যাপারে একটি চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন করে।

কুনমিংয়ে আলোচনার সময়ই মূলত রুটটি ঠিক করা হয়। চারটি দেশই রুটটির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। রুটটি হল- চীনের কুনমিং থেকে ভারতের কলকাতা হয়ে মিয়ানমারের মানদালায় এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম। জানা যায়, বিসিআইএমের পরবর্তী আলোচনা চলতি বছরের জুনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা বৈঠকেই বিসিআইএম কানেকটিভিটি চূড়ান্ত রূপ পেতে পারে।

চার দেশে ৫৭০ কোটি টাকার বাণিজ্য বৃদ্ধি : বিসিআইএম হলে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মায়ানমারের মধ্যে ৫৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। যদি সব দেশের বাণিজ্যনীতি উদারীকরণ হয়। পাশাপাশি বাণিজ্যনীতি পরিমিত উদারীকরণ হলে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে ৪১০ কোটি মার্কিন ডলারের এবং আংশিক উদারীকরণ হলে বাণিজ্য বাড়বে ২৭০ কোটি ডলার। ওই স্টাডিতে বলা হয়, বিসিআইএম হলে বিসিআইএমের বাইরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য তৈরি হবে সর্বোচ্চ ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার এবং সর্বনিু ১৮০ কোটি ডলারের। পাশাপাশি বাণিজ্য বিকেন্দ্রীকরণ বা বহুকরণ হবে ১৮০ কোটি ডলার এবং নিুে ৯০ কোটি ডলারের। বিসিআইএমের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট অতিরিক্ত যুক্ত হলে এবং সঙ্গে চীন ও মিয়ানমার থাকলে এই বাণিজ্য ১২০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছবে। তবে বাণিজ্যনীতি পরিমিত উদারীকরণ হলে বাণিজ্য বাড়বে ৯০০ কোটি ডলারে।

সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ : বিসিআইএমে অন্তর্ভুক্ত হলে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৭০ কোটি মার্কিন ডলার (দেশীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা) এবং সর্বনিু ৪০ কোটি ডলারের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। তবে বলা হয়, যে দেশের অর্থনীতির আকার বড় ওই দেশ এই শুল্ক সুবিধা বেশি ভোগ করতে পারবে। সে হিসাবে ভারত সর্বোচ্চ ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে ৩৬০ কোটি ডলারের শুল্কমুক্ত সুবিধার বাণিজ্য করতে পারবে। চীন শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা নিতে পারবে ৬০ কোটি ডলার থেকে ১২০ কোটি ডলার এবং মিয়ানমার ভোগ করতে পারবে ৩০ লাখ থেকে ১০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত।

বাংলাদেশের রাজস্ব আয় কমবে না : বিসিআইএমে অন্তর্ভুক্ত হলে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হারাবে ভারত। অপর দিকে বাংলাদেশের কোনো রাজস্ব ক্ষতি হবে না। বিসিআইএমের অপর তিনটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাজস্ব সুবিধা দিতে গিয়ে ভারতের রাজস্ব বর্তমান আয়ের চেয়ে ৫৪ শতাংশ হ্রাস পাবে। এটি সর্বনিু ৩৬ শতাংশ হতে পারে। অপর দিকে চীনের রাজস্ব কমবে ৫৭ শতাংশ, মিয়ানমারের ৫৫ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ বিসিআইএমে সম্পৃক্ততার পর যে বাণিজ্য সুবিধা পাবে বিপরীতে যা রাজস্ব আয় কমবে উভয় মিলে সমান থাকবে। ফলে বাংলাদেশের কোনো রাজস্ব ক্ষতি হবে না।

কল্যাণমূলক আর্থিক সুবিধায় দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ : চারটি দেশের মধ্যে কল্যাণমূলক সুবিধার দ্বিতীয় স্থানে থাকছে বাংলাদেশ। বিসিআইএমের মধ্যে কল্যাণমূলক সুবিধা ভোগ করবে ভারত। আর্থিক দিক থেকে এই সুবিধার মূল্যমান হচ্ছে প্রায় ২৭ কোটি মার্কিন ডলার। সবচেয়ে কম সুবিধা পাবে মিয়ানমার। তাদের ক্ষেত্রে কল্যাণমূলক সুবিধার আর্থিক মূল্য হচ্ছে ৫০ লাখ ডলার। তবে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ কল্যাণমূলক আর্থিক সুবিধা ভোগ করতে পারবে ৭ কোটি মার্কিন ডলারের।

বিসিআইএমে রফতানির জন্য ১৫টি পণ্য শনাক্ত : বিসিআইএম অঞ্চলে রফতানির জন্য ১৫টি পণ্যকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রয়েছে শস্যকণা, চামড়া, শুকনা খাবার, ছাগলের মাংস, হস্তশিল্প, সিনথেটিক ফেব্রিক্স। এটি মূলত চীনের বাজারে রফতানির জন্য শনাক্ত করা হয়। পাশাপাশি ভারতের বাজারের জন্য শনাক্ত করা হয়, এন হাইড্রোঅক্সাইড অ্যামোনিয়া, লিড এসিড, সবজি, পাট, টেক্সটাইল পণ্য।

বিসিআইএম নিয়ে গবেষণাকারী সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, বিসিআইএমের মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও স্পেশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে। চীন ও ভারত থেকে বছরে ১১০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করতে হয়। এসব পণ্য আমদানিতে পরিবহন ব্যয় বড় বিষয়। বিসিআইএমের ফলে পরিবহন ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে। চারটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজীকরণ করা হলে আমদানি ও রফতানি ব্যয় কমবে। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে পর্যটন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সুবিধা বাংলাদেশ পাবে। গভীর সমুদ্র বন্দর হলে এর অবকাঠামো ব্যবহার করা যাবে বিসিআইমের মাধ্যমে। শুল্কের চেয়ে অশুল্ক বাধা বেশি। ফলে বাণিজ্য সহজীকরণ করা হলে অশুল্ক বাধাগুলো দূর হবে।


Published in Kaler Kantho on Thrusday, 6 February 2014.

বিসিআইএম নিয়ে সরকারের গবেষণাপত্র: অর্থনৈতিক হাব হবে বাংলাদেশ

আরিফুর রহমান

চীন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বহুল আলোচিত অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে বদলে যাবে বাংলাদেশের চেহারা। বিকাশমান দুই দেশ ভারত ও চীনের সংস্পর্শে সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সব দিকেই লাভবান হবে দেশ। বিকশিত হবে এই দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। কমবে দারিদ্র্যের হার, সমৃদ্ধ হবে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য। দূর হবে বাণিজ্য বাধা। তিন দেশ থেকেই পাওয়া যাবে জ্বালানি সহযোগিতা। ভৌগোলিক কারণে অন্য তিন দেশ থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। বিসিআইএম নিয়ে তৈরি করা সরকারের এক ধারণাপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তবে ওই ধারণাপত্রে কিছু আশঙ্কা এবং উদ্বেগের কথাও আছে। এতে বলা হয়েছে, জোটভুক্ত এই চার দেশের মধ্যে ভারত ও চীন প্রতিযোগী দেশ। উভয় দেশই অর্থনৈতিকভাবে বিকাশমান। আগামী বিশ থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে ভারত ও চীন হবে বিশ্বের পরাক্রমশালী দুটি দেশ। তাই স্বাভাবিকভাবে দুই দেশের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই থেকেই যাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যেও দ্বিপক্ষীয় জটিলতা রয়েছে। রোহিঙ্গা এখনো অমীমাংসিত ইস্যু। এসব জটিলতা উতরাতে পারলে আশিয়ান ও ব্রিকসের মতো বিসিআইএম শক্তিশালী জোট হবে বলে ধারণাপত্রে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক। আরেক জোট বিমসটেকেরও করুণ দশা। এবার নতুন জোট গড়ে সুফল পেতে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডর চালুর জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন এই জোট গঠনের প্রক্রিয়া বেশ এগিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরই বাস এই চার দেশে। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশই কর্মক্ষম। এই চার দেশের মোট জিডিপি ৫.৭ ট্রিলিয়ন, যা বৈশ্বিক জিডিপির ১০ শতাংশ। চার দেশেই প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। রয়েছে পানি ও জ্বালানি সম্পদ। এ ছাড়া প্রতিটি দেশেরই আলাদ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- সেবা খাতে বাংলাদেশ ও ভারত অনেক সমৃদ্ধশালী। শিল্পে এগিয়ে চীন। কৃষিতে মিয়ানমার। তাই অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে এক দেশের সম্পদ বা প্রযুক্তি অন্য দেশ ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হতে পারবে।

১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বিসিআইএম গঠনের উদ্যোগ শুরু করে চীন। প্রথম ধাপে ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত চার দেশের সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে পারস্পরিক সংলাপ এবং ধারণা আদান-প্রদান হয়। ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত হয়েছে সরকারি পর্যায়ে আঞ্চলিক সংলাপ। আর ২০০৯ থেকে গত বছর পর্যন্ত হয়েছে চার দেশের কূটনৈতিক আলোচনা। সর্বশেষ গত বছর ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর বেইজিংয়ে চার দেশের প্রতিনিধির মধ্যে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ছয় মাসের মধ্যে চারটি দেশ অর্থনৈতিক করিডর নির্মাণের সম্ভাবনা ও সুযোগ নিয়ে সমীক্ষা চালাবে। জুনের আগেই সেই প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। চার দেশই এখন ওই সমীক্ষার কাজ করছে।

ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, চার দেশের মধ্যে বাণিজ্য খুবই কম। অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদী ও জলপ্রপাত ব্যবহার বাড়বে। আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। একই সঙ্গে বাণিজ্য সহজীকরণ, আইটি এবং বিনোদনেও পরিবর্তন আসবে। তবে এই করিডর চালু হওয়ার পথে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এর মধ্যে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধা, দুর্বল বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা এবং প্রথাগত জটিলতা অন্যতম। এ ছাড়া মুদ্রা বিনিময় এবং চার দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা নিয়েও জটিলতা আছে।

বিসিআইএম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কালের কণ্ঠকে বলেন, চার দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। বাংলাদেশের জ্বালানি খাত সমৃদ্ধ হবে। পাশাপাশি দেশে মানবসম্পদ বাড়বে। তাঁর মতে, এই জোটের মধ্য দিয়ে একটি বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এতে সড়ক, রেল, নৌ, বিমানসহ সব খাতেই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে জোটভুক্ত চার দেশেই ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহার বাড়বে। আর জ্বালানি ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো বড় আকারে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে। সেখান থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আনতে পারবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।

অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। এর সুবিধা পাবে চার দেশই। রেল, নৌ, সড়ক ও আকাশ পথেও যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হবে। করিডরের আওতায় কুনমিং থেকে মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের মধ্যে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মিয়ানমারের মাধ্যমে বাংলাদেশ যদি চীনের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে আবির্ভূত হবে।

অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে চার দেশেরই জীবনযাত্রার মান বাড়বে। কৃষি, সেচ, প্রযুক্তি লেনদেন, শিল্প পার্ক দারিদ্র্য কমাতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনে চার দেশ একই প্রযুক্তি ব্যবহার বা আদান-প্রদান করতে পারবে। অন্যদিকে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ময়লা শোধানাগার নির্মাণ, সুপেয় পানির ব্যবহারও বাড়বে। অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে শিক্ষা, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যসেবা, খেলাধুলা একাডেমিক শিক্ষা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার হবে। একই সঙ্গে পর্যটন খাতও বিকশিত হবে। অর্থনৈতিক করিডর চালু করতে রুট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে কলকাতা থেকে যশোরের বেনাপোল হয়ে ঢাকা। এরপর সিলেট হয়ে শিলচর, ইমপাল-কা-লে-মান্দালাই-রুইলি, তেংচং-ইরাই লেক, ডালি হয়ে কুনমিং গিয়ে শেষ হবে।