কর ফাঁকি বন্ধে জিরো টলারেন্স জরুরি : মোস্তাফিজুর রহমান

Published in ভোরের কাগজ on Tuesday, 5 June 2018

আলী ইব্রাহিম

অর্থনীতি-বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, কর ফাঁকি বন্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জিরো টলারেন্স নীতিতে অবিচল থাকতে হবে।  ব্যক্তি হোক কিংবা করপোরেট প্রতিষ্ঠান হোক, কর ফাঁকিবাজ যেই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।  গত রবিবার ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন তিনি।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কর নীতিতে সংস্কার আনা হয়েছে।  তবে এর সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না।  রাজস্ব আয়ের অন্যতম উইং কাস্টমসে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাস্টমস আইন প্রণয়নের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গেছে, এ ছাড়া ভ্যাট আইন এই অর্থবছরে হচ্ছে না।  সুতরাং রাজস্ব আদায় বাড়াতে ব্যক্তি করদাতা থেকে করপোরেট করের ক্ষেত্রে ফাঁকিবাজি বন্ধ করতে হবে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বরাবরের মতো এবারো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।  এই অর্থ তো করদাতাদের অর্থ।  এতে করদাতাদের ওপড় করের বোঝা বেড়ে যাবে।  এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।  ননপারফরমিং লোন আদায়ের ক্ষেত্রে জোর দেয়া।  তবে আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে ক্ষতিকে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়েছে।  অহরহ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে।  পার্শবর্তী দেশ ভারতে ডিপোজিট ও হাইরিস্ক লোনের একটা আইন তৈরি করেছে।  দেশের প্রেক্ষাপটে আইনের বাস্তবায়ন খুবই কম।  অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অতিরিক্ত ডিপোজিট এবং হাইরিস্ক লোনের ক্ষেত্রে যেসব কড়াকড়ি করা প্রয়োজন তা নেই।  এসব অনিয়ম বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জোরালো কোনো পদক্ষেপ দেখছি না আমরা।  বছরের পর বছর ধরে তা চলে আসছে, যা অর্থনীতির জন্য রং সিগন্যাল।

সিপিডির এই  সম্মানীয় ফেলো আরো বলেন, প্রকল্প নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভালোভাবে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি হয় না।  প্রকল্পের বিভিন্ন ফেজে এসে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে একটা জটিলতা বিদ্যমান রয়েছে।  এ ছাড়া প্রকল্প বরাদ্দের পরিমাণ অনেক ক্ষেত্রে অপ্রতুল থাকে।  এতে নির্দিষ্ট সময়ে একদিকে যেমন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয় না, অন্যদিকে বাড়ে প্রকল্প ব্যয় এবং সময়।  এতে সরকারের অর্থেও অপচয় হয়।  বছরের পর বছর এসব সংস্কৃতি চলে আসছে।  এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের হার ক্রমশ কমে আসছে।  বাজেট বাস্তবায়ন মানসম্মত হতে হবে।  বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।  অনেক ক্ষেত্রে আইন সংস্কার করা হয়েছে, তবে এসব আইনের বাস্তবায়ন নেই।  এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে মামলার জট খুলতে হবে।  বিশাল অঙ্কের রাজস্ব এর সঙ্গে জড়িত।  দ্রুত সময়ে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে।  করের আওতা বাড়াতে হবে।  নতুন নতুন খাতকে করের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।  আর কর আদায়ের ক্ষেত্রে মনোযোগ বাড়াতে হবে এবং যথাযথ আইনের প্রয়োগ করতে হবে।