Khondaker Golam Moazzem talks about unsatisfactory developments following the Rana Plaza collapse

Published in Prothom Alo on Saturday, 25 October 2014.

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
ব্যর্থতা আসলে সব পক্ষের

শুভংকর কর্মকার

khondaker-golam-moazzem2

 

সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর দেড় বছর পার হয়েছেএখনো হতাহত ব্যক্তিরা পুরো ক্ষতিপূরণ পাননিকারখানা পরিদর্শনের কাজ চলছেএসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

প্রথম আলো: রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তায় কোনো পরিবর্তন কি এসেছে?

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: ভবন ধসের পর পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নত করার কাজটি দেশি ও বিদেশি চাপের মুখে শুরু হয়। তবে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা ও সরকার এটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনার অধীনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশের ক্ষেত্রে কারখানা পর্যায়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে। অ্যাকর্ডের পরিদর্শনে ৮০ হাজার ত্রুটি খুঁজে পাওয়া গেছে, যার অধিকাংশই অগ্নি ও বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত ত্রুটি। আবার ২ শতাংশ কারখানা ভবনের কাঠামোতে দুর্বলতা রয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে আছে। তাই সংস্কারকাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হবে। অন্যথায় চাপের মুখে অর্জিত সীমিত অগ্রগতি দিয়ে শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে প্রাথমিক অগ্রগতি নিয়ে এখনই সন্তুষ্টি প্রকাশের সুযোগ নেই। বরং উল্টোটা করলে সঠিকভাবে সংস্কারকাজ শেষ করার ক্ষেত্রে ভুল বার্তাও দিতে পারে।

প্রথম আলো: ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই ঝুলে আছে। এ ক্ষেত্রে মালিক ও ক্রেতাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখা যায়নি। কেন এমনটা হলো?

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবার ও আহত শ্রমিকদের প্রাথমিক অনুদান বা সাহায্য বাবদ এককালীন অর্থ প্রদান করা হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই সামান্য। দেশীয় আইনে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি এখনো অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে সরকার, বিজিএমইএ, মালিক ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করাকেই দায়ী করা যায়। বিশেষ করে ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে বিজিএমইএর দায়সারা ভাব চোখে পড়ার মতো। তবে সুস্পষ্ট কাঠামোর আলোকে বিদেশিদের উদ্যোগে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের বিষয়টি প্রশংসনীয়। ক্রেতাদের সহযোগীর অভাবে সেটির আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। হাইকোর্টের উদ্যোগে ক্ষতিপূরণের একটি উদ্যোগও মাঝপথে থেমে গেছে। অন্যদিকে সরকারের কাছে থাকা প্রায় ১০৫ কোটি টাকা শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের উদ্দেশ্যে ব্যবহারের প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। আসলে বাস্তবায়নের এই ব্যর্থতা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। সবার দায় এড়ানোর প্রবণতা ও সুস্পষ্ট আইনের অভাব যুক্ত হওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথম আলো: ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা এড়াতে সরকার কিংবা বিজিএমইএ কিংবা মালিকপক্ষ রানা প্লাজা ধস থেকে শিক্ষা নিয়েছেন বলে কি আপনার মনে হয়?

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: পোশাকশিল্পের উন্নয়নে সরকার, মালিক ও আইএলও গঠিত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করছে রানা প্লাজা ধস থেকে সংশ্লিষ্টরা কতটুকু শিক্ষা নিয়েছে। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো ধরনের অবহেলা, দীর্ঘসূত্রতা বা অজুহাত তোলা শিক্ষা গ্রহণের অনিচ্ছাকেই প্রকাশ করবে। মোট কথা, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উদ্যোগ যদি চাপের মুখে বাস্তবায়ন হয় এবং বাস্তবায়নে সদিচ্ছার অভাবে থাকে তবে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। কয়েক মাস ধরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, তাতে নিশ্চিত করে বলা যায়, ক্রেতারা বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ নিয়ে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। সুতরাং এ সংস্কারকাজ সঠিকভাবে শেষ না হলে ক্রেতাদের মনোভাব পরিবর্তন হবে না। এতে দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বাড়তে পারে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক, সিপিডি