Published in প্রথম আলো on Monday, 27 February 2017
কারখানার ত্রুটি সংস্কারে গড় খরচ ৫ কোটি টাকা
বৈদ্যুতিক, অগ্নি ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধনে পোশাক কারখানাগুলোকে গড়ে ৬ লাখ ১৪ হাজার মার্কিন ডলার বা ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। বাড়তি বিনিয়োগের জন্য ৫২ শতাংশ কারখানা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসার নিশ্চয়তা পেয়েছে। তবে কোনো কারখানাই বাড়তি ক্রয়াদেশ পাচ্ছে না।
রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতের সংস্কারকাজের অগ্রগতি নিয়ে ‘পেইনস অ্যান্ড গেইনস’ নামের এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ৩৩ পোশাক কারখানার ওপর করা গবেষণাটি পাওয়া গেছে, সংস্কারকাজে তাদের মোট ব্যয় হচ্ছে ২ কোটি ২ লাখ ডলার বা ১৬২ কোটি টাকা। কারখানার আকার ও ত্রুটির সংখ্যাভেদে সংস্কারকাজে ৩ লাখ ১৯ হাজার ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯ লাখ ১০ হাজার ডলার ব্যয় হচ্ছে।
রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে গতকাল রোববার আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় গবেষণাটির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন। তিনি নিজে ‘পেইনস অ্যান্ড গেইনস’ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দ্য ডেইলি স্টার ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাবের যৌথ আয়োজনে গোলটেবিল আলোচনাটি হয়। এতে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময়ের আলোচনায় পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সংস্কারকাজের অর্থায়ন, কারখানা স্থানান্তরে প্রতিবন্ধকতা, শ্রমনিরাপত্তা ও অধিকার, মজুরি বৃদ্ধি, পোশাকের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে অর্থবহ সামাজিক সংলাপের আয়োজনের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সুরক্ষা ও প্রযুক্তির উন্নয়নে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তবে পোশাকশিল্পে যন্ত্রের চেয়ে মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তাহলে কেন আমরা শ্রমিক ও মজুরি ইস্যুতে বেশি বিনিয়োগ করব না?’
মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সামাজিক সংলাপের আয়োজন করতে হবে। সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তা না হলে আশুলিয়ার মতো ঘটনা, প্রপাগান্ডা ইত্যাদি এড়ানো যাবে না।
আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে পোশাকশ্রমিকদের মাসিক মজুরি ৬৮ ডলার। মিয়ানমারে ৮৫ ডলার। এটার মানে কী? আমরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাই। তাহলে কি শ্রমিকেরা সব সময় আপসই করে যাবেন?’
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে ক্রেতারা আমাদের চাপ দিলেও ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও ভারতের মতো প্রতিযোগী দেশকে কিছু বলছে না। তাতে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকছে না।’
এ বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, শিল্প উদ্যোক্তাদের কষ্টটা বাস্তব। তবে লাভটা সম্ভাবনার বিষয়। এটি অর্জন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প এগোচ্ছে। ভবিষ্যতেও এসব ঝুঁকি থাকবে। তবে বাংলাদেশ প্রতিনিয়তই টিকে থাকার সাহস দেখিয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পোশাকশিল্পের মান, সুরক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে। সেগুলো হলো—উৎপাদনশীলতা বাড়বে, শ্রমিকেরা মজুরি ও মজুরিবহির্ভূত সুবিধা পাবেন ও মালিকদের মুনাফা হবে। তিনি আরও বলেন, পোশাকের দাম বাড়াতে প্রয়োজনে কোন ক্রেতা কত দেয়, সেটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে পারেন মালিকেরা। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া উচিত।
আরও বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক শাহেদুল আনাম খান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান জামিল আজহার ও উপদেষ্টা গোলাম রহমান, নিউ এজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বিজিএমইএর পরিচালক মিরান আলী, বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক নাজনীন আহমেদ, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি কামরান টি রহমান প্রমুখ।