Originally posted in বনিক বার্তা on 1 February 2023
আইএমএফের ঋণ নিয়ে মতামত
সুখবর স্বস্তি দেবে তবে পূর্ণ সমাধান দেবে না
আইএমএফের ঋণ অনুমোদন—সুখবর, এটা স্বস্তি দেবে। তবে পূর্ণ সমাধান দেবে না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে সংস্কারগুলো জমে থাকা সংস্কার, আমরা এতদিন বলেছি—করে নাই, কিন্তু আইএমএফের কাছে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে। সেই সামষ্টিক অর্থনীতির নীতি ব্যবস্থাপনায় যদি উন্নতি না হয়, তাহলে এ টাকাকে টেকসইভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সমস্যা থেকেই যাবে। আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা, চুক্তি ও শর্তাবলিতে আমাদের আর্থিক খাত গুরুত্ব পেয়েছে। কর-জিডিপি বাড়াতে হবে, এটা আমরাও বলতাম, সেটা এসেছে। সাম্প্রতিককালে আয়কর আইনও পাস করা হয়েছে। বিনিময় হারগুলো এখনো সেভাবে সমন্বিত হয়নি। সরকার এখনো ভীতিতে আছে যে বিনিময় হার সমন্বিত করলে টাকার দরপতন হবে। তাতে মূল্যস্ফীতি হতে পারে, সেই আশঙ্কা রয়েছে। একই রকমভাবে সুদের হারও সমন্বয় হয়নি।
আমি আশ্চর্য হয়েছি পুরো কাজের ভেতরে ব্যাংক খাতের সংস্কারের ব্যাপারে কোনো জোরালো বক্তব্য এখন পর্যন্ত দেখিনি। এক্ষেত্রে কি বলা হয়েছে যে নন-পারফর্মিং লোন কমাতে হবে। করপোরেট গভর্ন্যান্স থেকে ইনসাইডার লেন্ডারদের বাদ দিতে হবে। এগুলো কোনো কিছু বলা হয়েছে, এমনটা আমরা জানি না। ব্যাংক খাতের সংস্কারের বিষয়টি যদি গুরুত্ব না পায়, তাহলে এ রকম একটা মন্দাক্রান্ত পরিস্থিতিতে সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ভোগ তিন জায়গায়ই দুর্বলতার সৃষ্টি হবে। বিনিয়োগ সচল রাখা যাবে না। সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে তারল্যের সমস্যা হবে। শেষ বিচারে গিয়ে ভোগ এবং কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য পরিস্থিতিতে আঘাত করবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আগামী দিনে সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিমালা এখন আইএমএফ-নির্ভর হয়ে গেল। যেটা আমাদের জাতীয়ভাবে ঠিক করার কথা ছিল। এত বড় জিনিস হচ্ছে, এটার জন্য আমাদের জনপ্রতিনিধিরা আদৌ ওয়াকিবহাল কিনা সন্দেহ আছে। আমাদের সংসদ আছে, পুরো সংসদে আলোচনা না হোক অর্থবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তো ছিল। কী কী সংস্কার করতে হবে, এ বিষয়ে কেন সেখানে আলোচনা হলো না? এ ঋণ নেয়ার ফলে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শেষ করার ক্ষেত্রে এবং নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শুরু করার ক্ষেত্রে কী কী তাত্পর্য আছে, সেই আলোচনার প্রয়োজন ছিল। নীতি সার্বভৌমত্ব পুরোটাই হেফাজত করে দিলাম। টাকা দিয়েছে যখন, এখন সেটা একটু ভালো করে যেন ব্যবহার করি।