আরসিইপি দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ ও উন্নয়নের একটি ভেল্যু চেইন ও উৎপাদন নেটওয়ার্ক তৈরি হবে: মোস্তাফিজুর রহমান

Published in কালের কন্ঠ on 16 November 2020

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক জোটে নেই বাংলাদেশ

চীনের নেতৃত্বে মুক্ত বাণিজ্যে এশিয়া

দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১৫ দেশ মিলে গঠন করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল। চীন নেতৃত্বাধীন নতুন এই বাণিজ্যিক জোট থেকে দূরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যোগ দেয়নি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ ভারত, নেই বাংলাদেশও। ভিয়েতনামের হ্যানয়ে অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিশ্বনেতারা যোগ দেন।

গতকাল রবিবার রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) নামক এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ১০ দেশ এবং চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নুয়েন শুয়ান ফুক বলেন, ‘আমি খুশি যে দীর্ঘ আট বছরের জটিল আলোচনা শেষে অবশেষে আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছলাম। আরসিইপি চুক্তিটি এখন সদস্য দেশগুলোর নিজ দেশে অনুমোদিত হবে তারপর সেটি বাস্তবায়ন হবে, যা করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’ তিনি জানান, বিশ্ব অর্থনীতির ৩০ শতাংশ ধারণকারী এই দেশগুলোতে রয়েছে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ, রয়েছে ২০২ কোটি ভোক্তা।

বিশ্লেষকরা এই চুক্তিকে চীনের নেতৃত্বে একটি ক্যু হিসেবে অভিহিত করছেন। তাঁদের মতে, এই চুক্তি বিশ্ববাণিজ্যে মৌলিক এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। এই চুক্তির ফলে প্রথমবারের মতো পূর্ব এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে এসেছে। ভারতের এই চুক্তিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সস্তা চীনা পণ্য তাদের বাজার ছেয়ে যাবে এই ভয়ে গত বছর তারা আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন এই বাণিজ্যিক জোট শুরুতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক বাদ দেবে এবং বাকি খাতগুলো থেকেও শুল্কও ১০ বছরের মধ্যে তুলে দেওয়া হবে।  বৃহত্তর চীনে আইএনজির প্রধান অর্থনীতিবিদ আইরিজ প্যাংগ বলেন, ‘আরসিইপির মাধ্যমে বেইজিং, ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে তার নির্ভরতা কমাতে পারবে, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে।’

আরসিইপিতে যোগ দেয়নি বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরিফা খান বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি এই চুক্তিতে যোগ নাও দেয় তাতে বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ আসিয়ান বাংলাদেশের বড় আমদানি বাজার, রপ্তানির নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ এই চুক্তিতে যোগ দিলে আমদানি শুল্ক থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাত। তিনি এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) শাখার ইনচার্জ ছিলেন।

তবে এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশের উচিত হবে দ্রুত এ ধরনের মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে যোগ দেওয়া ও বড় বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর করা। কারণ বাংলাদেশ যখন এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে তখন অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা প্রয়োজন হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানিতে আরসিইপির প্রভাব পড়বে। কারণ এই চুক্তির অন্যতম সদস্য ভিয়েতনাম, যারা তৈরি পোশাকে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা আরসিইপি মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাবে, যা আমরা পাব না।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আরসিইপি দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ ও উন্নয়নের একটি ভেল্যু চেইন ও উৎপাদন নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। বিশেষত চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এই দেশগুলোতে বিনিয়োগ করবে মুক্তি বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা পাওয়ার আসায়। ফলে এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের এফডিআই আকর্ষণে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’ সূত্র : এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি।