Originally posted in সমকাল on 31 December 2023
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান সমকাল-এর সঙ্গে কথা বলেছেন নতুন বছরে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে। সেখানে উঠে এসেছে আগামী নির্বাচন, রাজনীতিতে বিভাজন, ভূরাজনীতির বিভিন্ন দিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহেরীন আরাফাত
আমরা একটি নতুন বছরে প্রবেশ করছি। একপক্ষ নির্বাচন করছে, অন্যপক্ষ সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছে। সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে আপনার মতামত জানতে চাইছি।
অনেক দিন ধরেই আমাদের দেশে এ রকম একটি রাজনৈতিক অবস্থান চলছে, যেখানে একপক্ষ নির্বাচন করছে, অপরপক্ষ সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে। বহু বছর ধরে রাজনীতি আমাদের সমাজে একটা বিরাট বিভাজন ও সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে, যেখানে দুটি পক্ষ একদম বিপরীতমুখী রয়েছে। দুই পক্ষই সচেষ্ট কেমন করে প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে পারে।
স্বাধীনতার পর আমরা ভেবেছিলাম, এর আগের ২৫ বছরে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা রাষ্ট্রের চার মূল নীতি– গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা– বিষয়ে একটি জাতীয় মতৈক্য সৃষ্টি করতে পেরেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসকরা সেই জাতীয় মতৈক্য ভেঙে দিল।
১৯৯১ সালের পর যখন আমরা আবার গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করলাম, তখন ভেবেছিলাম দুটি প্রধান দলের মধ্যে নীতিগত পার্থক্য থাকবে কিন্তু গণতন্ত্রের মূল বিষয়গুলো– যেমন নির্বাচনী ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হাতবদল, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মানবধিকার– এসব বিষয়ে সব দলের মধ্যে একটা মতৈক্য সৃষ্টি হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা প্রায় ৩০ বছরে এটি করতে পারেনি। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী সব দেশেই নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে সব পক্ষের মধ্যে মতৈক্য আছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে নেই। তারা সবাই নির্বাচন করতে পারছে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে বিভিন্ন দলের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল হচ্ছে। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে আমরা একটা সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারিনি। আমরা এখন পর্যন্ত একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারিনি, যেখানে রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূলনীতিগুলো সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। যদি কোনো দেশে ক্ষমতাসীন দল অগণতান্ত্রিক উপায়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করার প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে তো সে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। গণতন্ত্রের মূল কথাই হলো বহুমত, বহুদলের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
নতুন বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?
এখন রাজনৈতিক সমস্যা, সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। সরকার একটা নির্বাচন করে ফেলতে পারে, কিন্তু এই নির্বাচন তো আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা, সংকটগুলোর সমাধান করবে না। যতদিন পর্যন্ত আমরা একটা সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারব ততদিন পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক সংকট চলতেই থাকবে। রাষ্ট্রযন্ত্র ও দলীয় শক্তি ব্যবহার করে দেশে একরকম শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, কিন্তু রাজনীতির মূল সমস্যাগুলোর সমাধান না করলে রাজনৈতিক অস্থিরতার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।
অর্থনীতিতে এই রাজনৈতিক অস্থিরতার কেমন প্রভাব পড়বে?
এখন আমাদের অর্থনীতি প্রধানত বেসরকারি খাতভিত্তিক। বেসরকারি খাত চাইবে কোনোরকম রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন না হয়। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশের সব দলের মধ্যে একটি রাজনৈতিক বোঝাপড়া না হয়, বিশেষ করে নির্বাচন প্রশ্নে, ততদিন পর্যন্ত ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা দুঃশ্চিন্তা থাকবেই। আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা অতীতে অনেক অস্থিরতার মধ্যেও ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা তেমন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারিনি। এখন আমরা নানা দিক থেকে অনেক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সেগুলো সমাধানের জন্য বেশ কিছু সংস্কারের প্রয়োজন হবে। অনেক শক্তিশালী গোষ্ঠী এসব সংস্কারের বিপক্ষে থাকবে। যদি গণতন্ত্র, সুশাসন, আইনের শাসন, মানবাধিকার এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকে, তাহলে এসব সংস্কার করা কিছুটা সহজ হবে।
অর্থনীতি নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধীদের মধ্যে বিতর্ক আছে। সরকারের দাবি, তারা দেশের ব্যাপক উন্নতি করেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকৃত অর্থনীতির উন্নয়নকে নির্দেশ করে না। আপনার বিশ্লেষণ জানতে চাইছি।
দেশে উন্নয়ন হয়েছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটাও আমাদের প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার। তবে এ উন্নয়ন নিয়ে যেসব বিতর্ক করা হচ্ছে, সেটাও ঠিক। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে। আমাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের গুণগত মানের দিকে তেমন নজর দেওয়া হচ্ছে না। আমরা আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারছি না। দুর্নীতি দমন হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ছে। আমাদের উন্নয়নকে স্থিতিশীল করতে হলে বৈষম্য দূর করতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মান বাড়াতে হবে। দুর্নীতি দমন, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ; অন্যদিকে চীন, ভারত, রাশিয়া। আগামী বছর ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ওপর বিদেশিদের কেমন প্রভাব থাকবে?
বিদেশিদের প্রভাব আগামী বছরও চলবে। ভূরাজনীতি এখানে নতুন একটা মোড় নিচ্ছে– চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের মধ্যে দারুণ একটা প্রতিযোগিতা চলছে, সেটা অচিরেই থেমে যাবে না। এটা চলবে। চাপ প্রয়োগ করে তারা নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশকে পাশে রাখতে চাইবে। যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে কয়েকটি ইস্যুকে ব্যবহার করছে– নির্বাচন, শ্রমিক অধিকার, মানবাধিকার, গণতন্ত্র। নির্বাচন হয়ে গেলেও শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, গণতন্ত্র– এসব ব্যাপারে বাংলাদেশ যে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে আছে, তা থেকে যাবে। সেটা কমার কোনো লক্ষণ আমি দেখছি না। ভূরাজনীতিতে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়ার মধ্যে যে সংঘাত, সেটা শেষ হয়ে যাচ্ছে না; বরং আরও তীব্র হচ্ছে। ফলে আমাদের ওপর চাপ কমবে না।
সস্তা শ্রম বিদেশিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ বা বাংলাদেশ থেকে উৎপাদিত পণ্য নেওয়ার একটা বড় কারণ ছিল। তবে বর্তমান বাজারমূল্য ও নিত্যপণ্যের লাগাতার ঊর্ধ্বগতি সেই বাস্তবতা অনেকখানি বদলেছে। শ্রমিকদের মজুরি কাঠামোর দাবি ও বর্তমান বাস্তবতাকে কীভাবে দেখছেন?
আমাদের দেশে শ্রমিকদের যে মজুরি দেওয়া হচ্ছে, সেটা প্রতিযোগী অন্যান্য দেশ থেকে অনেক কম। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত আমাদের থেকে অনেক বেশি মজুরি দেয় শ্রমিকদের। অতএব, শুধু সস্তা শ্রম দিয়ে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকব– এই নির্ভরতা কমিয়ে বরং আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কী করে আমাদের কারখানাগুলো আরও বেশি আধুনিকীকরণ করতে পারব, বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে আরও দরকষাকষি করে আমাদের শ্রমের দাম বাড়াতে পারব– এসব দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। শুধু শ্রম সস্তা করে শিল্পের বিকাশ সম্ভব হবে না। এখন জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে এই মজুরি দিয়ে শ্রমিকরা তাদের সংসার চালাতে পারছেন না। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো যদি শ্রমিকদের বেশি মজুরি দিয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারে, তাহলে আমরা কেন করতে পারব না?
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বা বরাদ্দ চাহিদা অনুযায়ী বাড়েনি। এর কেমন প্রভাব পড়তে পারে?
আমাদের মনে রাখতে হবে একদিকে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ ও বরাদ্দ অপ্রতুল, অন্যদিকে আমাদের বাজেটে সরকার যে বরাদ্দ দিচ্ছে তাও অনেক সময় সঠিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না। স্বাস্থ্য খাত অনেক সময় বাজেটের বরাদ্দের অর্থ খরচ করতে পারছে না। অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য যেসব খাতে অর্থ খরচ করছে, যেমন অবকাঠামো নির্মাণে, এগুলো দিয়ে গুণগত মান বাড়ানো যাচ্ছে না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মান উন্নয়ন করার তেমন পরিকল্পনা নেই। সুশাসনের অভাব। আমাদের দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধির জন্য যেমন প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার তার অভাব রয়েছে। দেশে ও বিদেশে শ্রমবাজারে কী পরিবর্তন আসছে, কেমন চাহিদা, তার সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের এখানে শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। আমরা যদি জনশক্তি খাতকে শক্তিশালী করতে চাই, তাহলে আমাদের জনশক্তি খাতকে আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। শুধু অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়েই এসব খাতের সমস্যার সমাধান হবে না। গুণগত মান বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।
শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে নারী নির্যাতনও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর কারণ কী?
নারী নির্যাতন শুধু যে বাংলাদেশেই বেড়েছে তা না, পৃথিবীর অনেক দেশেই আমরা দেখেছি নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। আগের তুলনায় শ্রমবাজার বা রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে, কিন্তু নারীদের এই অগ্রসরতার পর অনেক দেশে, সমাজে আবার একটা পশ্চাদপসরণ হয়েছে। এখন একটা রক্ষণশীল ধারা দেখা যাচ্ছে। সেটা যে শুধু আমাদের দেশে তা নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, এমনকি আমেরিকাতেও আমরা দেখি নারীরা সত্তর ও আশির দশকে যেসব অধিকার পেয়েছিলেন, তা এখন আবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। ফলে নারীদের অধিকার আবার সংকুচিত হচ্ছে। আসলে নারীর সমঅধিকার যেসব দেশে ভালোভাবে সমাজে গ্রহণযোগ্য হয়েছে, সেখানে পুরুষদের আচরণ ও রুচিরও পরিবর্তন এসেছে। নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এসব দেশে নারীর অনেক ক্ষমতায়ন হয়েছে। সেখানে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গিও অনেক পাল্টেছে। আমরা যদি নারীদের ক্ষমতায়ন করতে চাই, শুধু মেয়েদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বাড়ালেই চলবে না, তার সঙ্গে নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন করতে হবে। নারী নির্যাতন জিরো টলারেন্সে আনতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে ব্যাপক প্রচারণা ও অন্যান্য কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমাদের তরুণ অনেকেই গত দুই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতা তরুণদের চিন্তা-চেতনায় কেমন প্রভাব ফেলবে?
আমাদের তরুণ সমাজও রাজনৈতিক বিভাজনের দ্বারা বিভক্ত। একটা ভাগ আছে, যারা দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। যারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আছে, তারা নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। বর্তমানে যে ব্যবস্থা চলছে, এর সঙ্গে তারা মানিয়ে নিয়েছে। আর যে তরুণরা দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়, তারা দেশের ভবিষ্যতের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না, তারা যে কোনো মূল্যে বিদেশে চলে যেতে যাচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য একটা বিরাট প্রশ্নের ব্যাপার। আমরা যতই বলি আমাদের দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু আমাদের চিন্তা করে দেখতে হবে যে দেশে যদি এতই উন্নতি হয়ে থাকে, তরুণরা কেন দেশে না থেকে বিদেশে যেতে চায়? মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া থেকে তো তরুণরা যে কোনো উপায়ে বিদেশে চলে যাওয়ার কথা চিন্তা করছে না। তারা ভাবছে, তাদের দেশের মধ্যেই অনেক সুযোগ আছে তাদের জন্য। তরুণদের যদি আমরা দেশের মধ্যে না ধরে রাখতে পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ উন্নতি কী করে হবে?
আগামী বছর নিয়ে আপনার চাওয়া সম্পর্কে জানতে চাই।
আমি চাইব আগামী বছর যেন আমাদের বহু বছরের পুঞ্জীভূত সমস্যাগুলোর সমাধানের কিছু পথ আমরা বের করতে পারি। আমাদের দেশের এবং বিশ্বের প্রায় অনেক দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে খুব একটা তাড়াতাড়ি যে কোনো সমস্যার সমাধান হবে তা নয়। তবে আমরা যে পথে হাঁটছি তা থেকে ভিন্ন পথে হাঁটা আরম্ভ করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নতির প্রয়োজন আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে যারা ধনী তাদের আরও বেশি ধনী হতে হবে। বরং আমি চাইব যারা ধনী নয়, তাদের জীবনের মান আরও উন্নত হবে। আমি চাইব আমাদের রাজনীতি যেন প্রভাবশালীদের বলয় থেকে মুক্তি পায়, যেন দেশের জনসাধারণের নাগরিক হিসেবে সমঅধিকার দৃশ্যমান হয়। আমি চাইব যাতে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সবাই নির্ভয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা পায়। আমি চাইব আমাদের তরুণ সমাজ শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি কিংবা ব্যবসায় সাফল্যের কথা না ভেবে ভাবতে শুরু করে কেমন করে তারা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সমাজকে একটি আলোকিত পথের দিকে নিয়ে যেতে পারবে। বর্তমানে আমরা একটি প্রচণ্ড আস্থার সংকটের মধ্যে আছি, যেখানে জনসাধারণ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর শ্রদ্ধা এবং আস্থা রাখতে পারছে না। বর্তমান অবস্থান থেকে আগামী বছর ভালো হবে, এমন স্বপ্ন দেখতে হলে প্রথমেই আমাদের সেই আস্থার জায়গাটি সৃষ্টি করতে হবে।