Published in আলোকিত বাংলাদেশ on Thursday, 14 December 2017
অর্থনীতি, শিক্ষাসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে সমাজসেবায় অনবদ্য অবদানের জন্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানকে ২০১৬ সালের খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা স্বর্ণপদক প্রদান করেছে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এইচ খান মিলনায়তনে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে তার হাতে এ পদক তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. আনিসুজ্জামান। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অধ্যাপক রেহমান সোবহানের বক্তব্য পত্রস্থ হলো।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন অবশ্যই একটি বিধিসম্মত প্রতিষ্ঠান। এর প্রেসিডেন্ট ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগে’র কার্যক্রমে আমাদের সঙ্গে সবসময় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আমি আনন্দের সঙ্গে বলছি এবং দেবপ্রিয়ও এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। ‘একজনও পিছিয়ে থাকবে না’ এর এজেন্ডার প্লাটফর্মে আমরা তুলে ধরব যে, অঙ্গীকার ও আত্মনিবেদনে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের মতো একটি সংস্থার চেয়ে
ভালো অংশীদার আর কোনটি হতে পারে?
মহান বিদ্বান ও লোকহিতৈষী খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার স্মৃতিতে উৎসর্গ এ অসাধারণ পুরস্কার পেয়ে আমি কতটা গর্বিত ও বিনয়ী বোধ করছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
আপনাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই আছেন, যাদের এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা রয়েছে। তারা জানেন যে, আমার মাতৃকুল থেকে নওয়াব সলীমুল্লাহ এবং আমার পিতৃকুল থেকে দেওয়ান ফজলে রাব্বী আমার পূর্বপুরুষ, যারা নিজেদের উৎসর্গ করে বাংলার মুসলিম সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এ মহান মিশনে অংশ নিয়েছিলেন। এজন্য খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা আমাদের পরিবারে অতি পরিচিত ও অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এর কারণ হলো, তারা যখন শিক্ষা বিস্তারের এ মিশনকে জাতীয় পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত থেকে মুসলিম সমাজে শিক্ষা বিস্তারের সামগ্রিক ধারণা ও মতামত দিয়ে যাচ্ছিলেন।
আমার পূর্বপুরুষ ও খানবাহাদুর স্যার স্বাধীন ভারতে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার বাস্তবতা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন। ভারত বর্ষের মুসলিম সমাজ ছিল এ উদ্বেগের প্রথম বিষয়। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া বাংলার মুসলিম সমাজ সম্পর্কে তারা আগেই সতর্ক করেছিলেন। তখনকার সে তথ্যাদি সংখ্যা ও আকাক্সক্ষার আনুপাতিক হারে শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে বাধ্য করেছিল। যার ফলে নওয়াব আবদুল লতীফসহ সেসব ব্যক্তি প্রথম দিকের বছরগুলোতে অত্যন্ত সৃজনশীল ভূমিকা পালন করেছেন।
খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা শিক্ষা বিভাগে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। একটি বাস্তবতা এর সঙ্গে একান্তভাবে যুক্ত হয়েছিল। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার সংগ্রামকে বেগবান করতে আমরা জনাব বাজিকের কাছ থেকে একটি দূরদর্শিতামূলক অনুদান পেয়েছিলাম। এর ফলশ্রুতিতে ঢাকা বিশ^বিদ্যায় প্রতিষ্ঠার ধারণা এগিয়ে যাচ্ছিল। অবশ্য এটি ছিল তার (খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার) সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বেশ কয়েক বছর পর।
তিনি এমন একটি প্রথাগত বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, যেখানে মানুষ প্রতিদান বা খ্যাতির প্রত্যাশা ব্যতিরেকে মানবসেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে। আত্মনিবেদনের ফল দেখে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরবর্তী জীবনে তিনি মানবসেবা ক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হন এবং বাকি জীবন মানবসেবায় ব্যয় করেন। অবশেষে তার ঐতিহাসিক অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা আজ যা দেখছি, তা ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনেই নিহিত রয়েছে।
নিজেদের প্রচেষ্টার ফল দেখার সৌভাগ্য অনেক মানুষেরই হয় না। এটি একটি বিরল সৌভাগ্য যে, আপনার স্বপ্ন এ মহান প্রতিষ্ঠানের কর্মের মধ্যদিয়ে আজ বাস্তবায়িত হয়েছে। শুধু তার জীবদ্দশাতেই নয়, বরং বর্তমানে হাজার হাজার মানুষ এবং পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্ম তার নাম গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করবে।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন অবশ্যই একটি বিধিসম্মত প্রতিষ্ঠান। এর প্রেসিডেন্ট ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগে’র কার্যক্রমে আমাদের সঙ্গে সবসময় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আমি আনন্দের সঙ্গে বলছি এবং দেবপ্রিয়ও এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। ‘একজনও পিছিয়ে থাকবে না’ এর এজেন্ডার প্লাটফর্মে আমরা তুলে ধরব যে, অঙ্গীকার ও আত্মনিবেদনে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের মতো একটি সংস্থার চেয়ে ভালো অংশীদার আর কোনটি হতে পারে?
এ সংস্থার উন্নয়ন ও ক্রমবিকাশ দেখার সৌভাগ্য আমার নিজেরও হয়েছে। আমার মনে পড়ে, প্রথম বছরগুলোতে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৭০ এর দশকে এর প্রারম্ভিক বিকাশ পর্বের কথা। যাত্রা শুরুর পর তখন এটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রচারণা ছাড়াই নীরবে এগোচ্ছিল। অন্যান্য এনজিও, যেমন- ব্র্যাক অথবা অন্যান্য সংস্থা, যেমন- গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে যেমন প্রচারণা হয়েছিল, সে রকম কিছুই নয়।
আমি এখানে একটি অসাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে আছি। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ৭ হাজার ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে। প্রযুক্তিতে দক্ষ হাজার হাজার মানুষ জনসেবা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রে দেশের প্রয়োজন মেটাবে। এটি স্বতন্ত্রভাবে খানবাহাদুর স্যারের রূপকল্পের একটি অংশ হতে পারে। এখান থেকে আপনি শুধু সুশিক্ষিত বাঙালির ধারাবাহিক প্রজন্মই পাবেন না, বরং প্রযুক্তিতে দক্ষ বাঙালির ধারাবাহিক প্রজন্মও আপনি পাবেন। তারা যেখানে সেবা প্রদান করবে, সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত থেকে সে সমাজ উন্নয়নে তারা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
আহ্ছানিয়া মিশনের কৃতিত্বের অবশ্যই অনেক স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। তবে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় তারা যে অসাধারণ কাজ করেছেন, এর চেয়ে বড় আর কিছুই নেই। এটি আধুনিক সুবিধাসংবলিত একটি হাসপাতাল। তারা এমন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছেন, যা বাংলাদেশের জনগণ পায় না। আপনি স্বল্পমাত্রায় এজাতীয় সেবা কিছু হাসপাতালে হয়তো পেতে পারেন। এটি একবিংশ শতাব্দীর আত্মনিবেদিত একটি হাসপাতাল বলেই এজাতীয় সেবা প্রদান করতে সক্ষম। শুধু সাময়িকের জন্যই নয়, বরং বছরের পর বছর মানুষ এটিকে মনে রাখবে। এ জটিল স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য তারা এর হাজার হাজার সুবিধাভোগী ও তাদের পরিবারের কৃতজ্ঞতা, দোয়া ও ভালোবাসা পাবেন।
আহ্ছানিয়া মিশনের একটি মহান অবদান ও উদ্ভাস হলো ক্যান্সার হাসপাতাল। তারা এমন চিকিৎসা-সুবিধা প্রদান করছেন, যা স্বল্প আর্থিক সংগতিসম্পন্ন সাধারণ জনগণের নাগালের বাইরে। আমাদের সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা যারা দুর্ভাগ্যবশত ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছেন অথবা তাদের পরিবারের কোনো সদস্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, চিকিৎসার জন্য তারা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক অথবা ভারতের বিভিন্ন স্থানে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যেও যেতে পারেন। অথচ হাজার হাজার, লাখ লাখ জনগণ রয়েছে, যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, কারণ তাদের সেই আর্থিক সংগতি নেই।
এ জটিল স্বাস্থ্যসেবাটি এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া যাবে, যেটির শুধু উত্তম হাসপাতালের যোগ্যতাই নেই, বরং সমাজের সতীর্থ সদস্য সাধারণ জনগণকে এ সেবা প্রদানে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধও বটে। তাদের রয়েছে এ বিশ্বাস ও আত্মনিবেদনের মূল্যবোধ যে, তারা সমাজের সবচেয়ে অভাবী লোকজনের প্রতি সামান্য কর্তব্য পালন করছেন। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি মানবিক সেবায় অসাধারণ অর্জনের জন্য আমি আবারও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন ব্যক্ত করছি।
আমি এখানে বলতে চাই, আমার সহকর্মী দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যে কথা বলেছেন, আমি পেশাজীবনের কয়েক মাস ব্যয় করেছি দারিদ্র্য ও অবিচারের সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে এবং সমাজের স্বল্প সুবিধাপ্রাপ্ত সদস্যদের বঞ্চনার সমস্যা নিয়ে লিখে। একসময় আমি পাকিস্তানি রাষ্ট্র কাঠামোর আওতায় বাংলাদেশের জনগণের বঞ্চনা নিয়ে কাজ করেছি। এখন আমার বয়স ৮২ বছর। আল্লাহর ইচ্ছায় আর কয়েক মাস পরই আমি ৮৩তম জন্মদিন পালন করব। জীবনসায়াহ্নে এসে আমার কর্মজীবনের দিকে ফিরে তাকালে এখনও দেখতে পাই, যা কিছু অর্জন করেছি অথবা জনগণের জন্য যেটি করতে পেরেছি, সেটি হলো আমরা সমস্যাগুলোর প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছি। অবশ্য আমার নির্ধারিত কাজে আমি শুধু সমস্যাগুলো শনাক্ত করতেই আগ্রহী ছিলাম না, বরং প্রেসিডেন্ট বরাবর যে প্রতিবেদনগুলো দাখিল করেছি তাতে পরিপূর্ণ ধারণা দিয়েছি। সে ধারণাগুলো ছিল সাম্যবাদী সমাজ গঠনের নিমিত্তে একগুচ্ছ বাস্তব ধারণা। এর কিছু কিছু স্বল্প পরিসরে আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃক বাস্তবায়ন করাও সম্ভব।
অবশেষে আমি নিজে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যা করতে পারি তা হলো, ধারণা বিনিময়। এ ধারণাগুলোর শেষ ফলাফল কখনও সঠিকভাবে দৃষ্টিগোচর হয় না। আমি স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে অত্যন্ত আশাবাদী ছিলাম; অবশেষে সেটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এ সংগ্রামে আমার প্রিয় বন্ধু ও সহকর্মী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অংশ নিয়েছিলেন। তিনি আজ এখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের সম্মানিত করেছেন। আমরা একত্রে এ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি; আমাদের সঙ্গে ৪০ জনের বেশি সৈনিক ছিলেন। এটি ছিল আমাদের অসামান্য অর্জন।
যদিও আমি অনেক ধারণা দিয়েছি; কিন্তু আমার বাকি জীবনের কর্ম মূলত একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ন্যায্য ও ন্যায়সংগত সমাজ গড়ার ধারণা। কিছুটা উন্নয়ন হলেও এ দাবি করতে পারব না যে, আমরা আমাদের কর্মে সফল হয়েছি। এ স্বপ্ন ও প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে এখনও অনেক কিছু করতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের কর্মকা-কে আমি ঈর্ষা ও কৃতজ্ঞতা উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখি। এর মতো আরও কিছু মহৎ সফল মানবহিতৈষী সংস্থা রয়েছে, যেমন- গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাক এবং এরকম অন্যান্য সংস্থা, যেগুলোর জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে খ্যাতি লাভ করেছে। সমাজ পরিবর্তনের মতো বড় স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সময়ে জনগণের প্রতি আপনাদের অবদান সফল হতেও পারে, আবার না-ও পারে। তবে দেশের লাখ লাখ সহজ-সরল বঞ্চিত নাগরিকের জীবনমান উন্নয়নে আপনাদের অবদান অনস্বীকার্য।
একসময় আমার বয়স যখন কম ছিল, তখন বিপ্লবী পরিবর্তনে আমার সন্দেহাতীত বিশ্বাস ছিল। আমরা ধৈর্যের সঙ্গে দেখেছি এবং বঞ্চিত ও অসম সমাজের ক্ষতগুলো আরোগ্যের চেষ্টা চালিয়েছি মাত্র। আজ এ বুড়ো বয়সে আমি যা করতে পারি, তা হলো শুধুই আপনাদের কাজের মূল্যায়ন। অবশেষে আপনাদের অবদানের ফল দেখতে পাবেন। এর প্রভাব শুধু হাজার হাজার নয়, বরং লাখ লাখ মানুষের জীবনে পড়বে এবং আপনাদের অবদানে তাদের জীবনের উন্নতি হবে। আমি মনে করি, আপনারা সবচেয়ে মহৎ অবদান রেখেছেন। শেষ পর্যন্ত আমি হয়তো পুরো পৃথিবী পরিবর্তন করতে পারব না, তবে এ পৃথিবীতে যখন এসেছিলাম, তখনকার চেয়ে অন্ততপক্ষে একটু হলেও ভালো অবস্থানে রেখে যেতে পারব। আমি মনে করি, এটিই গর্ব ও স্মৃতিচারণের সবচেয়ে মহৎ উৎস।
তাই বলতে পারি যে, আমি এক মহান শিক্ষাবিদ ও মানবহিতৈষীর স্মৃতিতে উৎসর্গ এবং ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের মতো একটি মহৎ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত এ স্বর্ণপদক পেয়ে নিজেকে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ, মনুষ্যত্ব এবং সত্যি বলতে কী সম্মানিত বোধ করছি। এতে রয়েছে তার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার গভীর ছাপ, যার ফলে এরকম একটি মহৎ প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়েছে, যার রয়েছে বিশাল অর্জন এবং যেটি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জন্য অনেক কিছুই করছে।
স্বর্ণপদকের সঙ্গে প্রদত্ত এ ছোট আর্থিক অনুদানটি আমি প্রতীচী ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের জন্য উৎসর্গ করছি, যেটির আমি চেয়ারম্যান। এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন আমার বন্ধু ও অর্ধশতাব্দীর সহকর্মী, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। অমর্ত্য সেনের মহান অবদান হলো, তিনি যখন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা লাভ করেন, তখন সেটি শুধু তার নিজ দেশ ভারতের সঙ্গে ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত নেননি, বরং তার পূর্বপুরুষের দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য আমরা সবাই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাই যখনই আমি সামান্য আর্থিক অনুদান পাই সেটি নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে তুলানা করা যাবে না। তবে বাংলাদেশের নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে তার প্রচেষ্টায় আমি সামান্য অবদান রাখতে চাই। এ কারণে আমি এ আর্থিক অনুদানটি প্রতীচীর জন্য উৎসর্গ করলাম।
অতএব, আমি আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট জনাব কাজী রফিকুল আলমকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনকে এবং ধন্যবাদ জানাই যারা এখানে সমবেত হয়েছেন তাদের সবাইকে।
আমি এ স্বর্ণপদকটি সযত্নে রাখব। আমি অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে পদক পেলেও সেগুলো আমার পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এটি স্বতন্ত্র। আবারও আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। এখানে আসার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, গবেষণা সংস্থা সিপিডির চেয়ারম্যান।