Published in কালের কন্ঠ on Friday, 30 December 2016
উন্নয়ন মেলায় অংশ নিচ্ছে এনবিআর
নতুন বছরের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন মেলায় প্রথমবারের মতো অংশ নিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তিন দিনের (৯-১১ জানুয়ারি) এ মেলায় উপস্থিত এনবিআর কর্মকর্তারা গত এক বছরে নিজেদের উন্নয়ন কার্যক্রম বর্ণনা করবে। এর পাশাপাশি রাজস্ব বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শও দেওয়া হবে। কোথায়, কোন কর্মকর্তার কাছে কোন রাজস্ব দপ্তরের আওতায় সংশ্লিষ্ট করদাতা ওই সেবা পাবে তা জানানো হবে।
এনবিআরের তিন শাখা আয়কর, ভ্যাট বা মূসক এবং শুল্ক শাখার কর্মকর্তারা তিনটি পৃথক বুথে উপস্থিত হয়ে ২০১৬ সালে সংশ্লিষ্ট শাখার উন্নয়ন কার্যক্রম বর্ণনা করবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলায় উন্নয়ন মেলায় এনবিআর এবারে অংশগ্রহণ করবে। সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে রাজস্ব আদায় এবং করদাতার সংখ্যা বাড়ানো বড় ধরনের সাফল্য। সরকারের এ উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে উন্নয়ন মেলায় এনবিআর থাকছে।
তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন মেলায় পৃথক তিনটি বুথে এনবিআরের আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক শাখায় গত এক বছরে নেওয়া উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম বর্ণনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার কমিশনারদের মধ্যে যারা অধিক দক্ষ তারা এ বিষয়ে নেতৃত্ব দেবে।
মেলা প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, শুধু এই মেলায় নয়, সারা দেশে যত উন্নয়ন মেলা হবে সব মেলায় এনবিআর থাকবে। আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক—এই তিন শাখার কার্যক্রম বর্ণনায় পৃথক তিনটি বুথ থাকবে। এবারের উন্নয়ন মেলায় এনবিআরের বুথে স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য করশিক্ষণ ফোরাম থাকবে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, উন্নয়ন মেলায় এনবিআরের অংশগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য তাদের নেওয়া গত এক বছরের উন্নয়ন কার্যক্রম সাধারণ জনগণকে জানানো। জনগণকে রাজস্ব প্রদানে সচেতন করা ও উৎসাহিত করা। মেলায় রাজস্ব বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থাকবে। বিশেষভাবে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজস্ব সম্পর্কে জানানো হবে। মেলার আগেই রাজস্ব বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতা করা হবে। প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হবে। ফলাফল সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানানো হবে। একইভাবে উপস্থিত স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ইচ্ছা করলে উন্নয়ন মেলায় এনবিআর আয়োজিত কুইজে অংশ নিতে পারবে। বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হবে।
মেলায় যেকোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনসংক্রান্ত তথ্য কোথা থেকে কিভাবে গ্রহণ করবে সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন মেলায় উপস্থিত ভ্যাট কর্মকর্তারা ভ্যাট বিষয়ে সেবা নিতে আসা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে। আমদানি-রপ্তানি, ব্যাংকে এলসি খুলতে বা বন্দর থেকে পণ্য ছাড়িয়ে নিতে বা বন্দরে সঠিক আইনি পদ্ধতিতে কিভাবে পণ্য রপ্তানি করবে সে বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে অনলাইনে সেবা নেওয়ার পদ্ধতি জানানো হবে। এবারের উন্নয়ন মেলায় ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে এনবিআর প্রযুক্তিনির্ভর সেবাগুলো নিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবে। এ ছাড়া আদালতে দীর্ঘদিন অনিষ্পন্ন মামলা নিষ্পত্তিতে উৎসাহিত করতে উন্নয়ন মেলায় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। বিকল্প বিরোধের সুফলগুলো উপস্থিত সাধারণ জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে।
উন্নয়ন মেলায় কেউ ইটিআইএন গ্রহণে এলে তাত্ক্ষণিক ইটিআইএন পেতে কী করতে হবে সে বিষয়েও পরামর্শ দেবেন এনবিআর কর্মকর্তারা। এ ছাড়া আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ এবং রিটার্ন ফরমের কোথায় কিভাবে তথ্য সংযুক্ত করতে হবে সে বিষয়েও পরামর্শ দেবে মেলায় উপস্থিত এনবিআর কর্মকর্তারা।
এনবিআরের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজস্ব প্রদানে উৎসাহিতে এনবিআর বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছে। আমি মনে করি এসব কার্যক্রমের মধ্যে বেশি সুফল পাওয়া যাচ্ছে মেলা আয়োজনের মাধ্যমে। এনবিআরের অসাধু কর্মকর্তাদের হয়রানি এড়াতেই মূলত সাধারণ মানুষ মেলায় রাজস্ব পরিশোধ করছে। এটা প্রমাণিত যে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে সাধারণ মানুষ রাজস্ব প্রদানে আগ্রহী হয়।