Originally posted in প্রথম আলো on 19 February 2022
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আর্থিক খাতে যোগ্যতা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। স্বাধীনতাবিরোধী, ঋণখেলাপি, করখেলাপি, বিলখেলাপি, দুর্নীতিবাজেরা যেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সে বিষয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনকে দৃঢ় অবস্থান দেখাতে হবে। আর মধ্যরাতে ব্যাংকগুলোর সভা করে ঋণখেলাপিদের দায়মুক্তি দিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া নৈতিকতাবিরোধী।
আজ শনিবার এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের সদিচ্ছা’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানান হয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যে পরিমাণ ঋণ আদায় করা হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি অবলোপন করা হচ্ছে। ব্যাংক খাতে ১০ শতাংশ ঋণখেলাপির যে তথ্য দেওয়া হয়, তা সঠিক নয়। কোনো ঋণখেলাপি যাতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি)) সদস্য হতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যাংকমালিকদের সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে ঋণখেলাপি ও আর্থিক খাতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে হবে।
আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদিচ্ছা ও যোগ্যতার অভাব রয়েছে, এমন মন্তব্য করে দেবপ্রিয় বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এড়িয়ে চলেন। গণতন্ত্র ও সুশাসনের পাশাপাশি আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ টেকসই হবে না।
অনেক দৃশ্যমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাবে শ্রীলঙ্কার মতো দেশকে বাংলাদেশ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে বলে স্মরণ করিয়ে দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা দিনে দিনে ক্যানসারের রূপ ধারণ করছে, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির পরিধি সংকুচিত করছে। আর্থসামাজিক খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকলেও আর্থিক খাতের অনিয়ম আমাদের জন্য একটি কালো অধ্যায়।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে গত এক দশকে ৩২ জন ২৪ কোটি টাকা করে বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে গোল্ডেন ভিসা সংগ্রহ করেছে। অভিবাসী ভিসা নামে এই সুবিধাটি অতিধনীরা নিয়ে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে গোল্ডেন ভিসার নামে এই অর্থ কীভাবে গেল? তিনি অর্থ পাচার প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠনের সুপারিশ করেন।
আজকের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকেরা যৌথভাবে বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি ও সনদ দেওয়া হয়।