Originally posted in The Business Standard on 26 June 2024
অর্থবছরের ১১মাসে রেকর্ড ৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, মূলত গত অর্থবছরে থেকে বৈদেশিক ঋণের আসল পরিশোধের চাপ বেড়েছে। চলতি অর্থবছর এবং আগামী অর্থবছরে আসল পরিশোধের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়বে।
বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের আসল পরিশোধের সময় শুরু হওয়া এবং বিশ্বব্যাপী উচ্চ সুদ হারের প্রভাবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে, অর্থাৎ জুলাই থেকে মে সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ তার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের মোট পরিশোধ করেছে ৩.০৬৮ বিলিয়ন ডলার— যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ঋণ পরিশোধ।
গত অর্থবছরের একই সময়ে সুদ ও আসল মিলিয়ে বাংলাদেশ পরিশোধ করেছিল ২.৪৬৭ বিলিয়ন ডলার— যা পুরো অর্থবছর শেষে ২.৬৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
চলতি অর্থবছরে থেকে ডাবল লাইনের সঙ্গে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) ও ডিজিটাল কানেক্টিভিটি স্থাপনে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় আসল পরিশোধ শুরু হয়েছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, মূলত গত অর্থবছরে থেকে বৈদেশিক ঋণের আসল পরিশোধের চাপ বেড়েছে। চলতি অর্থবছর এবং আগামী অর্থবছরে আসল পরিশোধের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়বে।
ইআরডি তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত সরকার আসল বাবদ পরিশোধ করেছে ১.৮ বিলিন ডলার— যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ছিল ১.৫৮ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, বাংলাদেশকে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য উচ্চ সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন –রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতে সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) বেড়েছে। বর্তমানে এসওএফআর ৫ শতাংশের বেশি— যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির আগে ১ শতাংশের এর কম ছিল। আবার বাংলাদেশের বাজারভিত্তিক ঋণও ক্রমগত বাড়ছে। এ কারণে বাংলাদেশকে এখন সুদ বাবদ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে সুদ পরিশোধ বড়েছে ৪২ শতাংশ। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, সরকার চলতি অর্থবছরে সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ১.২৫ বিলিয়ন ডলার— যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৮২.৮৬ মিলিয়ন ডলার।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ঋণ পরিশোধ বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটি বাড়তেই থাকবে। গত তিন বছরে ধরে ঋণ পরিশোধ প্রতি বছরে ৫০০-৬০০ মিলিয়ন ডলার করে বাড়ছে।
তিনি বলেন, “আমাদের হিসাবে আগামী অর্থবছরে ৩.২ বিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে হবে। এখন আমাদের ঋণ করে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। কিন্ত বাজেটের সময় অর্থবমন্ত্রী ম্যাক্রো ইকোনোমিক স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন, সেখানে ইআরডির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে— আগামী অর্থবছরে ২.৭ বিলিয়ন ডলার লাগবে ঋণ পরিশোধে। এখন প্রাথমিক যে প্রাক্কলন করা হয়, তা শেষ পর্যন্ত আর ঠিক থাকে না।”
তিনি আরও বলেন, ঋণ ব্যবস্থাপনা একটি জটিল সন্ধিক্ষণে প্রবেশ করছে। ২০২৩ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধে সরকারকে ২৫,৫৮৪ কোটি টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল। ২০২২ অর্থবছরেও সরকার ৫,৭৫৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, সরকার শুধু তার রাজস্ব আয় তার বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, “পুরো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এখন ঋণের ওপর নির্ভরশীল, এটি ঋণ পরিস্থিতির ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করছে।” এখানে মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে উপস্থাপিত পরিসংখ্যানগুলোকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধে ২.৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে— যেখানে বাজেটে ৩.২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে।”
পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য সরকারকে একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিগুলোকেও এ প্রক্রিয়া শুরু করার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত সরকার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ৭.৯২ বিলিয়ন ডলারের— যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫.৯৭৪ বিলিয়ন ডলার।
উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে জুলাই থেকে মে সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এই সংস্থাটির সঙ্গে সরকার ১১ মাসে ২.৬৯ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করেছে।
এরপর জাপানের কাছে থেকে ২.০৩ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১.৪১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে সরকার।
অন্যদিকে, অর্থবছরের জুলাই থেকে মে সময়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো ৭.০২ বিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করেছে— যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬.৯৮ বিলিয়ন ডলার।
১১ মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। এই দেশ থেকে ছাড় হয়েছে ১.৮ বিলিয়ন ডলার। এডিবি ১.৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ১.৪ বিলিয়ন ডলার।