এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশি পণ্যে বর্তমানের চেয়ে গড়ে অতিরিক্ত ৬.৭% শুল্ক আরোপ হবেঃ মোস্তাফিজুর রহমান

Published in সমকাল  on Sunday, 18 March 2018

এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী করণীয় :অন্য দেশের অভিজ্ঞতা

রফতানি বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই

এলডিসি থেকে উত্তরণ  

সমকাল প্রতিবেদক

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরে বাংলাদেশের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশ্ববাজারে রফতানির প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো। কারণ বিভিন্ন দেশে এলডিসি হিসেবে যে শুল্ক্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে, তা আর থাকবে না। ফলে রফতানি আয়ে এর প্রভাব পড়তে পারে। এমন অবস্থায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে রফতানি আয় বাড়ানো জরুরি। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলডিসি উত্তরণ পর্যায়ে এবং পরবর্তী সময়ে রফতানি আয় বাড়াতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই। আগামী ১০ বছর বহুমুখীকরণের উদ্যোগ জোরদার করা সরকারের অন্যতম কাজ হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্য রফতানি করলেও তৈরি পোশাক খাত থেকে মোট রফতানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি আসে। আর পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশ অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার সুবিধা পায়। একইভাবে কানাডা, ভারত, চীনসহ আরও কিছু দেশে এ ধরনের সুবিধা পায়। উন্নয়নশীল দেশ হলে ইইউতে জিএসপি সুবিধা পাবে না। অন্য দেশেও এ সুবিধা নাও থাকতে পারে। এসব মাথায় রেখে অন্য পণ্যে রফতানি বাড়ানো এবং পোশাকের নতুন নতুন বাজার দরকার।

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সেমিনারে সংস্থাটির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ৪০ দেশে অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অনেক দেশে এ সুবিধা হারাবে। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে এসব দেশের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা করতে হবে। এর আওতায় বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে যে জিএসপি পায় তাও থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ব্রেক্সিটের মতো ঘটনা বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের সুযোগকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। বাংলাদেশ এলডিসি দেশ হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সিদ্ধান্তের আওতায় বিভিন্ন দেশ থেকে যে কোটা ও শুল্ক্কমুক্ত যে সুবিধা পায় তাও কমবে।

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশি পণ্যে বর্তমানের চেয়ে গড়ে অতিরিক্ত ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শুল্ক্ক আরোপ হবে। ইইউ বাজারে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ইইউভুক্ত নয় এমন দেশের বেলায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং কানাডার বেলায় তা দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, রফতানি ২৭০ কোটি ডলার কমবে। যা ২০১৫ সালে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের রফতানির ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। জাতিসংঘের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের হিসেবে বাংলাদেশের রফতানি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম সমকালকে বলেন, এখন এলডিসি থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো। এ প্রক্রিয়া শেষ হবে ২০২৪ সালে। এরপরে আরও তিন বছর বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক বাজারের সুবিধাগুলো পাবে। তবে এরপরে বাংলাদেশের জন্য অন্যতম ঝুঁকি হচ্ছে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে জিএসপি সুবিধা থাকবে না। এতে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে। এ জন্য বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রফতানি বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণ দরকার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বাজার ইইউতে রফতানি কমবে। এমনকি কানাডা, ভারত ও চীনের বাজারে এখন এলডিসি হিসেবে যে সুবিধা রয়েছে, তা থাকবে না। এলডিসি দেশ হিসেবে ডব্লিউটিও কৃষি ও শিল্পে ভর্তুকী ও শুল্ক্কবিষয়ক সুবিধাও থাকবে না। আবার ওষুধ রফতানিতে যে ছাড় আছে তাও থাকবে না। ফলে রফতানি আয় কমার আশঙ্কা রয়েছে। তবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে পারলে সমস্যা হবে না।