Originally posted in কালের কন্ঠ on 18 April 2021
– ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি
করোনায় অর্থনৈতিকভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। করোনাভাইরাস সমাজের অন্যান্য পেশাজীবী মানুষের তুলনায় দরিদ্র ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের ওপর বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। আবার অনেকের আয়ও কমে গেছে। এই সময় বাল্যবিয়ে বেড়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ছেলে-মেয়ের পড়ালেখাও। করোনার মধ্যে নারীরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে তাঁরা সামাজিকভাবেই একটা চাপের মুখে পড়েছেন। সরকারঘোষিত কভিডের কারণে বিপর্যস্ত নারীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু সেটা সম্পর্কে ৫৮.৬ শতাংশ নারীই জানেন না। বাকি ৪১.৪ শতাংশ নারী এই প্যাকেজ সম্পর্কে অবগত। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনার প্রকোপে গত বছর মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী ও ১৯ শতাংশ মহিলা গার্মেন্টকর্মী তাঁদের চাকরি হারিয়েছেন। এতে ব্যাপক দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া লকডাউনের মধ্যে দেশে ৪৯ শতাংশ নারী নিরাপদে ছিলেন না। জরিপে এই অতিমারির মধ্যেও ৫৮ শতাংশ বাল্যবিয়ে বেড়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই একজন মায়ের বাচ্চা জন্ম হওয়ার মতো সামাজিক সমস্যাগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা গ্রামে মাত্র ২ শতাংশ শিশু কভিডের মধ্যে অনলাইন ক্লাস করতে পেরেছে। গত বছর অক্টোবরে টেলিফোনের মাধ্যমে ৩৪টি জেলার ৭০ জন মহিলা উদ্যোক্তার ওপর একটি সার্ভে করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৫১.৪ শতাংশ এসএসসি পাস, ২৪.৩ শতাংশ এইচএসসি, ১৭.১ শতাংশ অনার্স ও ৪.৩ শতাংশ মাস্টার্স পাস। তাঁদের ২৭ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা কোনো না কোনো বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত। আর বাকি ৭২.৯ শতাংশ কোনো অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত নেই। কোনো বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় ব্যাংক কিংবা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ নিতে বেগ পেতে হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ নারী বলেছেন, তাঁদের ব্যবসা সামনে এগিয়ে নেবেন ও ৪১.১ শতাংশ নারী ব্যবসা পুরোপুরি গুটিয়ে নেবেন।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যেন তাঁরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব থেকে উপকৃত হতে পারেন। কভিড-১৯-এর কারণে বাল্যবিয়ে এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, ব্যাবসায়িক জোটগুলোর সহযোগিতায় নারীদের ব্যাংকিংয়ের মূলধারায় প্রবেশ বৃদ্ধি করতে হবে। কভিডের সময় সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকমের সহায়তা পাওয়া গেছে। ফলে এই ডাটার মধ্যে উঠে এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে নারীদের কতটুকু সাহায্য ও সহযোগিতা করা হয়েছে। এসব তথ্য পাওয়ার জন্য গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের ওপর সার্ভে করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছিলেন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা।
তিনি বলেন, অনানুষ্ঠানিক খাতগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আকার এক লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের থেকে ভর্তুকি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। করোনার সঙ্গে কিন্তু ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের আয়ও কমে গেছে অনেকাংশে। এতে তাদের জীবনমানও কমেছে।
এই সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সময় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার। ৯ শতাংশ সুদে ব্যক্তিকে ৪ শতাংশ সুদ ও সরকারকে ৫ শতাংশ সুদ বহন করতে হতো।