Originally posted in বিডিনিউজ২৪ on 25 September 2024
তিন মাসেই কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার
ব্যাংকগুলোতে এক লাখের বেশি থাকা এমন অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৩৪ হাজার ৪৮১টি ব্যক্তির।
মাত্র তিন মাসে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি জমা রাখা হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন হাজার; মার্চ প্রান্তিকের চেয়ে জুন শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজারটি।
কোটি টাকার বেশি রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেশ কিছুদিন থেকেই বাড়ছে। লাখের ওপর এমন অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য মিলছে গত কয়েক বছর ধরেই।
জুন শেষের তথ্য অনুযায়ী, ৩৪ হাজার ৪৮১টি ব্যক্তি অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার বেশি জমা আছে। আর এমন অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৪০ হাজার ২৮৯টি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার। এর বাইরে প্রায় ৪৪ হাজারটি বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যক্তি, কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান-সব মিলিয়েই ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকা বা এর বেশি টাকা থাকার এ পরিসংখ্যান দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার ব্যাংক হিসাব নিয়ে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকে এক কোটির ওপর টাকা রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজারটি। তিন মাস আগে মার্চ প্রান্তিক শেষে এমন ব্যাংক হিসাব ছিল ১ লাখ ১৬ হাজারটি। এ হিসাবে এক কোটি টাকার বেশি আমানতের অ্যাকাউন্ট বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ৮৯৪টি।
বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাস পরপর ‘শিডিউলড ব্যাংকস স্ট্যাটিসটিক্স’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ওই বছরের জুন শেষে দেশে কোটি টাকার বেশি অ্যাকাউন্ট ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি।
পরপর দুই বছরের জুন প্রান্তিকের হিসাবের ব্যবধানে দেখা যাচ্ছে, এক বছরেই দেশে কোটি টাকার বেশি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৫৪৪৬টি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংক খাতে আমানত দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার আমানত ১ কোটি টাকার ওপর অ্যাকাউন্টধারীদের, যা মোট আমানতের প্রায় ৪২ শতাংশ।
জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রশ্ন রেখে বলেন, কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বাড়তে থাকা আসলে কীসের ইঙ্গিত।
“ব্যক্তির আয় সাধারণত ফিক্সড থাকে। ফলে তাদের অ্যাকাউন্টগুলো কোটি টাকার অ্যাকাউন্টে রূপান্তরের সম্ভাবনা কম। অত্যাধিক মূল্যস্ফীতির কারণে ছোট-বড় ব্যবসাগুলো এখন খুব বেশি ভালো করতে পারছে না, তারা নতুন করে বড় ধরনের বিনিয়োগেও যাচ্ছে না। ফলে মূল্যস্ফীতির এই সময়ে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বাড়ার সুযোগ কম ছিল।”
এমন প্রেক্ষাপটে নামে-বেনামে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “ব্যাংকে ডিপোজিট বাড়া অবশ্যই ভালো খবর। তবে কয়েক মাস আগে আমরা মতিউরকাণ্ডের কথা শুনেছি।
“এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির টাকা নামে-বেনামে জমা রাখার তথ্যও উঠে আসছে। ফলে কোটি টাকার যেসব অ্যাকাউন্ট বাড়ছে; সেগুলো রিয়েল কি না, এটা যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন।”
কোটি টাকার ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট বাড়ার আরেকটি অর্থ হল-‘সমাজে বৈষম্য বাড়ছে’ বলেও মন্তব্য করেন ফাহমিদা খাতুন।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গত ৪-৫ বছর ধরেই কোটি টাকার বেশি পরিমাণের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়ছে। এগুলোর বড় অংশই প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যবসায়ের।
“মূল্যস্ফীতির সময়ে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এটা সত্য। পাশাপাশি এটাও সত্য, বড় ব্যবসায়ীদের প্রফিটের পরিমাণও বেড়েছে আগের তুলনায়। ফলে এসব অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণ বাড়তে পারে।”