খুব অল্প সময়ে এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলা করা কঠিন – ড. ফাহমিদা খাতুন

Originally posted in নয়া দিগন্ত on 2 September 2024

সংবিধানে সংস্কার আনতে হবে

রাষ্ট্র সংস্কার, অপরাধীদের বিচার এবং নির্বাচনকে অগ্রাধিকারে রাখলেও বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে কিভাবে সাড়া দিবে এটা গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অধিকার সংগঠন- রাইট টু ফ্রিডমের (আরটুএফ) ‘বাংলাদেশ : দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক ওয়েবিনারে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা এমন অভিমত জানিয়ে বলেছেন, পররাষ্ট্রনীতি সরকারের অনুকূলে থাকলেও ভারতের সাথে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। একই সাথে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। সরকারকে জন আকাক্সক্ষার কথা মাথায় রেখে দেশে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্র তৈরির পরামর্শ রয়েছে তাদের। এজন্যে ভেঙে পড়া সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কারে অবিলম্বে কাজ শুরুর ওপর গুরুত্ব দিয়ে গুম, খুন এবং দুর্নীতির সাথে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনতে বলা হয়েছে। একই সাথে সরকারের সংস্কার এজেন্ডা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘ন্যাশনাল চার্টার’ স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জাস্ট নিউজ

শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আরটুএফের প্রেসিডেন্ট অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলাম। সংস্থাটির বোর্ড মেম্বার ও ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেপুটি মিশন প্রধান জন এফ ড্যানিলোয়িচের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান। ওয়েবিনারে আলোচকদের পরিচিতি তুলে ধরেন রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক মুশফিকুল ফজল আনসারী।

বাংলাদেশের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এটি আরটুএফের প্রথম প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠান।

মাইলাম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি ছোট একটা ইতিহাস বলে আজকের এই সেশনের সূচনা করতে চাই। কারণ যদিও আমি প্রবীণ কিন্তু অনেক কিছু দেখেছি।’ ৯০-এর দশকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা এরশাদ পতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিগত ৩৫ বছরে তিনবার বাংলাদেশকে নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হয়েছে। আমরা এক অর্থে একই জায়গাতে ফিরে এসেছি আবার। আপনাদের সরকারকে এক জায়গায় রাখতে হয়েছে আবার জনগণকে আরেক জায়গায় ফিরে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নোবেলজয়ী ড. ইউনূস সরকারের সাফল্য কামনা করেন।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম তার বক্তব্যে বলেন, ‘হাসিনা সরকার সন্ত্রাসীদের একটা সাম্রাজ্য বানিয়ে বসেছিল। যারা এই সন্ত্রাসে জড়িত তাদের অবশ্যই সাজা দিতে হবে। ৫ আগস্টের আগে হাসিনা যে দুঃশাসন চালিয়েছে তা যেন আর না ফিরে আসে। তিনি বলেন, তারা (শেখ হাসিনা সরকার) আট থেকে নয় শতাধিক মানুষকে হত্যা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে সংখ্যাটা হাজারের বেশি হবে। শিশু-তরুণ-বৃদ্ধসহ সব শ্রেণীর মানুষ এই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছে। দ্বিতীয় অপরাধ হলো, বিগত ১৫ বছর ধরে তানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। সহিংসতা, গ্রেফতার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, আয়নাঘর তৈরি- তারা এসব অকল্পনীয় কাণ্ড ঘটিয়েছে। এগুলো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। এগুলোর অবশ্যই বিচার হতে হবে।’

সুজন সম্পাদক আরো বলেন, ‘দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা পাচার করা হয়েছে। এই পাচারকারীদের শাস্তি দিতে হবে। এদের শাস্তিটা হলো একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি। যেসব প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে সেগুলো আবার সুসংগঠিত করতে হবে। হাসিনা পুলিশকে তার ব্যক্তিগত বাহিনী বানিয়ে বসেছিল। দল এবং নিজের স্বার্থে সে পুলিশকে ব্যবহার করেছে। পুলিশ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ভূমিকা পালন করেনি। এ প্রতিষ্ঠানটির অধঃপতন হয়েছে। আমলাতন্ত্রের অবস্থাও খুব বাজে। যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে। দ্বিতীয়, এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে সাজাতে হবে। এগুলোকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। এগুলো না করে এই অন্তর্বর্তী সরকার সঠিকভাবে কোনো কাজ করতে পারবে না। তৃতীয়ত, বিভিন্ন জায়গায় বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। যাতে পুরনো সরকার আবার ফিরে আসতে না পারে।’

ড. বদিউল আলম বলেন, ‘আমরা যদি ব্যাপক পরিবর্তন আনতে চাই তাহলে প্রথমে এই সরকার ঘোষণা দিতে হবে যে তারা বিপ্লব পরবর্তী সরকার। অতীতে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা যুক্তিযুক্ত নয়, এটা তাদের বলতে হবে এবং নতুন করে শুরু করতে হবে। আরেকটা কাজ তারা করতে পারে তা হলো বর্তমান সংবিধান সংশোধন করা, তারা গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আনতে পারে, যেমন প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে আসা এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ করা। আমাদের এ বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য হয়তো সংবিধানে কিছু বিষয় সংশোধন করতে হবে এবং কিছু বিষয় নতুন করে যোগ করতে হবে।’

সুজন সম্পাদক বলেন, এই সরকার প্রয়োজনে রেফারেন্ডাম করতে পারে অথবা তাদের নিজস্ব সংস্কার এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হতে পারে। সরকার তাদের সংস্কার এজেন্ডার কথা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘ন্যাশনাল চার্টার’ স্বাক্ষর করতে পারে। এরপর পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। যে দল ক্ষমতায় আসবে তারা সেই চার্টার বাস্তবায়নে বাধ্য ধাকবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, জনগণের প্রজেক্ট বাস্তবায়নে দুর্নীতি, ট্যাক্স জিডিপির নিম্ন হার, ব্যক্তিগত এবং বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়া, দুর্বল অর্থনৈতিক খাত, ব্যাংকে খেলাপি ঋণ, অবৈধ টাকার সরবরাহ, বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং বৈষম্য। খুব অল্প সময়ে এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলা করা কঠিন।’

ফাহমিদা বলেন, ‘আগের সরকারের সময়ে ৩০টি ডাটাতে ঘাটতি ছিল। কারণ এগুলোতে সংখ্যার পরিমাণ বেশি করে দেখানো হয়েছিল যেগুলোর বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই। প্রবৃদ্ধির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশ দেখানো হলেও তার সুবিধা কিন্তু এদেশের নাগরিকেরা সমানভাবে পায়নি।’

উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা চার সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভারতে রয়েছেন। মিয়ানমার পরিস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেখানে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে দেখেছি। দেশটির যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ছে। এগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে কিভাবে সাড়া দিবে এটা গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতিটা এই সরকারের অনুকূলে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইউনূস ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ। তিনি একজন তারকা খ্যাতির মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ তাকে খুব সম্মান করে। বিশ্বের মনোযোগ এবং শ্রদ্ধা পেতে তাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। অন্যদিকে, বাংলাদেশ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি, কারো সাথে পক্ষপাত না থাকায় বড় শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশটির গুরুত্ব রয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এই অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কাজ করতে চাইবে।’

নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে কুগেলম্যান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ হলো- দেশ পরিচালনায় তাদের কম অভিজ্ঞতা রয়েছে, এই সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব যাকে দেয়া হয়েছে তিনি অবসরপ্রাপ্ত একজন কূটনীতিক, তিনি সম্মানিত কিন্তু সাবেক একজন কূটনীতিক এবং বাংলাদেশে এখন এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে যা বিশ্ব নেতাদের এবং বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করবে, দেশটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হয়তো আরো স্থিতিশীল হবে কিন্তু এখন তা নাজুক রয়েছে। এই বিষয়গুলো বিশ্বের বিনিয়োগকারী এবং অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলবে।’

তিনি বলেন, ‘সামনের সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কটা কেমন হবে তা নিয়ে ভাবাটা দেশটির পররাষ্ট্রনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। দেশটির বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত পরিসরের অংশীদার রয়েছে। যেমন অবকাঠামোতে উন্নয়নে কাজ করা চীন এবং জাপান, বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র এবং জ্বালানি সরবরাহকারী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অংশীদারদের সাথে সম্পর্ক মজবুত রাখতে হবে। এই অংশীদারদের এখন কিছু উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশকে এটা দেখাতে হবে যে তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।

যদিও অনেক পদক্ষেপে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে তবুও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশন ড. ইউনূসের জন্য বড় সুযোগ। আমার ধারণা তিনি বিশ্বের বৃহৎ প্ল্যাটফর্মে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে আসবেন। সেখানে তিনি তার সরকারের লক্ষ্য, ভিশন, সংস্কার নিয়ে পরিকল্পনা এবং গণতন্ত্রসহ অন্যান্য বিষয়ে কথা বলতে পারেন। আমি মনে করি তিনি সেখানে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলবেন। কোন কোন জায়গায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে কথা বলবেন। তিনি সেখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মানবিক চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবেন। তিনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানাতে পারবেন। বিষয়টা দুটো কারণে গুরুত্বপূর্ণ, প্রথমত, মিয়ানমারের যুদ্ধ ক্রমাগত বাড়ছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেখা গেছে বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। দ্বিতীয়ত, এখানে দাতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যাবে কারণ গাজা, ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং অন্যান্য কারণে তাদের দৃষ্টি অন্য দিকে সরে গিয়েছিল। কত কয়েক বছর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়টি দাতাদের কাছে যেভাবে গুরুত্ব পেয়েছিল সেটি গুরুত্ব হারিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জের বিষয়ে কথা বলার একটা ভালো সুযোগ পাবেন ড. ইউনূস।’

ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রসঙ্গে কুগেলম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলা দরকার। এটা বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে জটিল সম্পর্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাই একমাত্র ঘনিষ্ঠ দেশ এবং বন্ধু যেটি না পারছে নতুন সরকারকে আলিঙ্গন করতে, না পারছে স্বাগতম জানাতে। যদিও ড. ইউনূস এবং মোদির মধ্যে সংক্ষিপ্ত কথা হয়েছে তবুও সেটা বিশদ বলা যায় না। বাংলাদেশ ভারতের সরকারকে একটা বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারে যে, তারা নতুন করে যাত্রা শুরু করতে চায়। ভারত তাদের পররাষ্ট্রনীতি, অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং শাসনব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আমি মনে করি বাংলাদেশের উচিত নয় ভারতের সাথে দরকষাকষিতে ব্যর্থ হওয়া। তাদের এই অংশীদারিত্বের প্রয়োজন রয়েছে। বাণিজ্য, সীমান্ত এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে এই সম্পর্ক প্রয়োজন। ভারতের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের চাইতে বাংলাদেশের কার্যকর একটা সম্পর্ক দরকার।’

শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেন না। তার এই অবস্থান দেশটির সাথে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলবে- এমন প্রশ্নের জবাবে কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয় হাসিনা শাসনামল পরবর্তী এই সময়ে হাসিনা যত দীর্ঘ সময় ভারতে থাকবেন বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিকের বিষয়টি ততই কঠিন হয়ে পড়বে। ভারত হাসিনাকে কত সময় আশ্রয় দিবে সেটা বলা মুশকিল তবে ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত তাদের বন্ধুকে ফিরিয়ে দেবে না এবং যত সময় প্রয়োজন তত সময় আশ্রয় দিবে। আমি মনে করি ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক কার্যকর রাখার বিষয়টিতে বাস্তববাদী হবে যদিও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতে উদ্বেগ রয়েছে। আর এ কারণেই ভারত সরকার চাইবে হাসিনাকে আশ্রয় দিবে এমন কোনো দেশ খুঁজে নিতে। এতে কত সময় লাগবে তা জানি না। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনাকে ফেরত চাইবে কিনা তা জানি না। তাকে দেশে পাঠালে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে। এটা ভারতের জন্য খুব কঠিন একটা বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ভারত সরকার চাইবে না হাসিনা দীর্ঘ সময় তাদের দেশে অবস্থান করুক। কারণ তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং পরবর্তী যে সরকার আসবে তাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে চায়। কিন্তু একইসাথে আমি মনে করি ভারত এমন কিছু করবে না যাতে হাসিনা অস্বস্তি অনুভব করেন এবং এমনটা ভাবেন যে তাকে যেকোনো সময় দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে।’