Originally posted in আমাদের সময় on 26 April 2023
জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৪ ভাগের ১ ভাগের বয়স এখন ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। এই হিসাবে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জনসংখ্যার মধ্যে ৪ কোটি ৭৪ লাখ তরুণ। প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারি এসব উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে তরুণদের প্রস্তুত করতে হবে। তাদের মানবসম্পদে পরিনত করতে না পারলে দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
তরুণদের দক্ষ জনসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)। সংস্থাটির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর কারণে কোনো কোনো পেশার সুযোগ সংকোচিত হলেও নতুন নতুন পেশার উদ্ভব হয়েছে। নতুন পেশা চিহ্নিত করে দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদানের পদক্ষেপ নিয়েছে এনএসডিএ। এ ছাড়া, প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে নতুন নতুন পাঠ্যক্রম, প্রচলিত প্রশিক্ষণ কোর্সের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছে এনএসডিএ।
প্রসঙ্গত, দেশের যুবসমাজের একটি বড় অংশ প্রশিক্ষণ ছাড়াই দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত থেকে উপার্জন করছেন। তারা সংশ্লিষ্ট পেশায় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। কিন্তু প্রশিক্ষণের সনদ না থাকায় এসব কর্মী যথাযথ মূল্যায়ন পান না। এই অভিজ্ঞ কর্মীদের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের আরও উন্নত কাজে যুক্ত হয়ে বেশি উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টির কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এনএসডিএ।
ডিজিটাল সেবা প্রদানের উদ্যোগও নিয়েছে এনএসডিএ। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জাতীয় দক্ষতা পোর্টাল তৈরিতে। এটির কাজ শেষ হলে দেশে ও বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা সম্পর্কিত তথ্য, প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণার্থীর সনদসহ বিস্তারিত সব তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করা যাবে। পাশাপাশি এ পর্যন্ত ৩১৯টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন এবং ৭৮টি প্রতিষ্ঠানকে কোর্স এক্রিডিটেশন প্রদান করেছে এনএসডিএ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আমাদের সময়কে বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিনত করতে সরকার নানা সময়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সে অনুযায়ী তাদের তৈরি করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কর্মমুখী করা হচ্ছে। উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে। বিদেশে পাঠানোর আগে তাদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’ সময়োপযোগী চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনের তাগিদে এই তরুণ গোষ্ঠীকে গড়ে তুলতে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে বলেও জানান মন্ত্রী।
এদিকে তরুণ জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করতে না পারলে তারা দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে যে তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে, তা দেশের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। এই জনগোষ্ঠীকে যথাযথ পরিচর্যা করতে পারলে বিশাল সম্পদে পরিণত হবে। তিনি বলেন, সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগুলোকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই তরুণ জনশক্তি বাংলাদেশের জন্য বড় একটি সুযোগের জানালা। একদিকে এদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা, উদ্যোক্তা তৈরি করা, স্বকর্মের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অন্যদিকে শিক্ষার মানোন্নয়ন দরকার। স্থানীয় ও বৈদেশিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ করে গড়ে তোলা। এসব দিকে নজর দিতে হবে।
এ জন্য সরকারের অনেক প্রকল্প থাকার কথা মেনে নিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এর সঙ্গে আরও কিছু সংযুক্ত করা দরকার। যেমন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসছে। সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি করা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নতুন উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি মেয়েদের নার্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া। আন্তর্জাতিক বাজারে নার্সের চাহিদা বেড়েছে।’ সেবা খাত, মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান তৈরি করার দিকে জোর দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতকেও সম্পৃক্ত করার পরামর্শ তার।