বাজেটে মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থান মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত – দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Originally posted in সময়ের আলো on 19 May 2022

আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আদায়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সময়ের আলোর সিটি এডিটর শাহনেওয়াজ। সাক্ষাৎকারের বিশেষ অংশ নিচে দেওয়া হলো-

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়াও করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করা উচিত। যুবকদের জন্য কমপক্ষে ১ হাজার টাকা যুব ভাতা দেওয়ার বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় আনতে হবে। সময়ের আলোকে আগামী বাজেট সম্পর্কিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই সুপারিশ রাখেন।

তিনি বলেন, আগামী বাজেট সম্পর্কে জনমনের প্রত্যাশা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কারণ, কোভিড উত্তর অর্থনীতির যে পুনরুজ্জীবন গত ২০২১ সালের শেষে দেখা গেছে। আবার ২০২২ সালের শুরুতে নতুন ধাক্কা খেয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি। যার ফলে খাদ্য, জ্বালানি, সার ও অন্যান্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্য চলাচল ও সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের বেশ কিছু সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার আভাস দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বৈশি^ক, অঞ্চল ও দেশের চলমান পরিস্থিতির চাপ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণও হতে পারে। যে কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটকে আরও বেশি জনসম্পৃক্ত করার বিষয়টি সরকারকে গভীরভাবে ভাবতে হবে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী বাজেটে দুটি মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। একটি হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্যটি মূল্যস্ফীতি। কারণ, করোনা উত্তর পরিস্থিতিতে প্রচ্ছন্ন ও প্রত্যক্ষ কর্মহীনতা বেড়েছে। অনেকের আয় কমেছে। তারা সঞ্চয় ভেঙেছেন। তাই আগামী বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি। জিডিপির লক্ষ্যমাত্রার পরিবর্তে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রাই আগামী বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে। বিনিয়োগ ও এসএমইকে সমর্থন দেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আগামী বাজেটে দ্বিতীয় লক্ষ্য হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা। সাধারণ মানুষ, নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন এখন খুবই বিপর্যস্ত। যে হারে তাদের ব্যয় বেড়েছে, সেই হারে আয় বাড়েনি। বরং অনেকাংশে কমেছে। সরকার প্রত্যক্ষ সহায়তার মাধ্যমে কীভাবে মানুষের জীবনে স্বস্তি আনবে তা বাজেটে পরিষ্কারভাবে আসতে হবে। মানুষের নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়াকে ঠেকাতে হবে। আগামী বাজেট প্রথাগত বাজেট তৈরির প্রক্রিয়ায় কিছুটা ব্যত্যয় ঘটানো প্রয়োজন। অসাধারণ সময়ে একটি ব্যতিক্রমী বাজেট দরকার।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সঞ্চয় সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে সঞ্চয়ের হার নেমে এসেছে। চলতি আয়ে তাদের ভোগের জন্য বাধ্য হচ্ছে। মোট কথা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা আর্থিক কষ্টের মধ্যে প্রবেশ করেছে। এই কষ্টের কথা চিন্তা করে বাজেটে এর পরিত্রাণের একটি পথরেখা থাকা উচিত। আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রান্তিক ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ প্রণোদনা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আগামী বাজেটে সরকারকে মোটা অঙ্কের টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। যার পরিমাণ হতে পারে ৯০ হাজার কোটি টাকা। তবে ভর্তুকির টাকা যেন মেগা প্রকল্প খাতে ব্যয় না হয়। সরকার পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ঠিক নয়।

কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেটে অনেক সময়ে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প অবহেলিত থেকে যায়। এই এসএমই অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। তাই আগামী বাজেটে এসএমইর দিকে নজর দিতে হবে। যুবসমাজের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে আগামী বাজেটে। যুবকদের জন্য ভাতার প্রচলনের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন আগামী বাজেটে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য যদি আরও বাড়তে থাকে তা হলে আমাদের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের টান পড়বে। ইতোমধ্যে ব্যাংকের ডলার ছাড়ার সক্ষমতা অনেকাংশে কমে এসেছে। তাই টাকা ও ডলারের বিনিময় হারে পার্থক্যের বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে।

ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য তথ্যভান্ডার গড়ে তুলতে হবে। দুস্থ মানুষদের আরও খাদ্য ও অর্থ সাহায্য দেওয়া উচিত। যেসব বিষয় নেতিবাচকের প্রভাব রয়েছে তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি বাজেটে প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন। পিছিয়ে পড়া ও অনগ্রসর মানুষের প্রতি বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি সমর্থন থাকা উচিত। কৃষির ওপর গুরুত্ব দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টি বাজেটে লক্ষ্য রাখতে হবে। ধান-চালের সংগ্রহ বিষয়টি সঠিকভাবে কার্যকর করা প্রয়োজন। বিশেষ করে উচ্চফলনশীল উৎপাদনের দিকে নজর বাড়ানো দরকার আগামী বাজেটে।