ভ্যাট বাড়ানো অবিবেচনা প্রসূত – দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Originally posted in ভোরের কাগজ on 20 January 2025

অন্তর্বর্তী সরকার অবিবেচকভাবে ভ্যাট বাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক খাত বেশি মনোযোগ পাচ্ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কারে কোনো মনোযোগ নেই। আমরা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি- কীভাবে অবিবেচকভাবে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। কর সংগ্রহ করতে হলে ক্রমান্বয়ে প্রত্যক্ষ কর প্রদানকারীর কাছে যেতে হয়। আমরা প্রত্যক্ষ কর আহরণে কোনো পরিকল্পনা দেখি নাই। যারা কর দেয় না তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়া হয় সেটা জানা গেল না। আমাদের এটা চিন্তিত করেছে। আগামী গরমে জ্বালানি পরিস্থিতি আরো জটিল হবে, এ আশঙ্কা করছি।

দেবপ্রিয় বলেন, এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধির ধারা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা যদি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে আমরা যারা সংস্কারকে গতিশীল করতে চাই তারা ধৈর্যহারা হয়ে যাবেন। সংস্কারের পক্ষের মানুষগুলো অর্থনৈতিক অস্বস্তি ও নিরাপত্তার অভাব থেকে সুষম সংস্কারের পক্ষ থেকে সরে যেতে পারে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিআইসিসির কার্নিভাল হলে ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ২০২৪’ আয়োজিত ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর : অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের প্রথম সেশনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বিডা’র নির্বাহী সভাপতি (সিনিয়র সচিব) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনসহ শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সমাপনী অধিবেশনে সিপিডি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য রাখেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা না পেলে সংস্কার পক্ষের মানুষ ধৈর্যহারা হবে। এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধির ধারা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা যদি নিশ্চিত করতে না পারি; তাহলে যারা সংস্কারকে গতিশীল করতে চায় তারা ধৈর্য হারা হয়ে যাবে। সংস্কারের পক্ষের মানুষগুলো অর্থনৈতিক অস্বস্তি ও নিরাপত্তার অভাব থেকে সুষম সংস্কারের পক্ষ থেকেও সরে যেতে পারে। তিনি বলেন, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার যতটা মনোযোগ পাচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ততটা মনোযোগ পাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো অর্থনৈতিক ম্যানিফেস্টো নেই। অনেকেই বলছেন অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ সরকার আগের সরকারের মতোই কাজ করছে। রেকর্ড পরিমাণ আমন উৎপাদন করেও সংগ্রহ অভিযানে সাফল্য নেই জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সংগ্রহ অভিযানে আগে যেমন দুর্নীতি ছিল, তা এখনো আছে। কৃষক তার ফসলের মূল্য পাচ্ছে না। সামাজিক সুরক্ষা বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে আছে। এ সরকার কী ধরনের অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার রেখে যাবে- এমন প্রশ্নও তোলেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, সুষম অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই অর্থনীতি

গড়ে তুলতে যে ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো বা সংস্কার দরকার সে রকমের কোনো রূপরেখা আমরা দেখলাম না। অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সংশোধিত বাজেট দিতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, এটা না থাকার কারণে অন্যান্য বাজেটের কিছু সূচক পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। আগামী বাজেটকে কেন্দ্র করে সরকারের অর্থনৈতিক আলোচনা দরকার। প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে, কর্মসংস্থানে সমস্যা রয়ে গেছে।

এ সময় অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি চলতি বছর ৪ শতাংশ হতে পারে। আর নতুন বাজেট ৮ লাখ কোটি টাকার বেশি করার সুযোগ নেই। কেননা আগামীতে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ- নীতি, রাজনীতি ও প্রকৃতি।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, দেশের অর্থনীতি নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিনিয়োগ অন্য দেশে চলে যাবে। ৩৪ বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করি, এমন টানাপোড়েন আমার পুরো ব্যবসায়িক সময়জুড়ে দেখিনি।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের দাম বাড়িয়ে এর আওতা বাড়ানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। দীর্ঘদিন ধরে টিসিবির পণ্যের দাম সমন্বয় করা হয়নি জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এটা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হতে পারে। আমরা রাজনীতিবিদ না। আমরা কি দীর্ঘমেয়াদে ১৭৫-১৮০ টাকায় তেল কিনে ১০০ টাকায় বিক্রি করব? নাকি ১২৫-১৩০ টাকা করে এক কোটির জায়গায় দেড় কোটি বা দুই কোটি টাকায় প্রসারিত করব? এই চিন্তাগুলো আমাদের সাহসের সঙ্গে করতে হবে। যদি তা না করি তাহলে আমরাও একই বৃত্তে থেকে যাব।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, সরকার কোনো একটি খাতকে গুরুত্ব না দিয়ে সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করবে বলে আশা করি। ১০০ ইকোনমিক জোন হবে না, সরকারিভাবে সেটা পাঁচটিতে নামিয়ে এনেছি।