Published in মানব জমিন on Thursday 2 July 2020
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে জাতীয় পুঁজির বিকাশ যেটি দেখি, তার মধ্যে যে ক’জন মানুষের নাম স্মরণীয় তাদের মধ্যে লতিফুর রহমান অন্যতম। বিশেষ করে, বাংলাদেশের ভেতর থেকে পুঁজি পাচারের যে ব্যাপক প্রবণতা দেখা যায় সেখানে লতিফুর রহমান এবং তার প্রতিষ্ঠান দেশের ভেতরেই পুঁজি গঠনে জোরদার ভূমিকা রেখেছে। আর এই পুঁজি গঠন প্রক্রিয়ায় আমরা দেখি তিনি শিল্প এবং সেবা উভয় খাতে করেছেন। নিজের অর্জিত মুনাফা বিনিয়োগ করে একের পর এক নতুন নতুন শিল্প গড়েছেন। চা বাগান থেকে শুরু করে ওষুধ কোম্পানি পর্যন্ত। তিনি এটা করেছেন বিদেশি পুঁজিকে অ্যাকুইজিশন বা অধিগ্রহণ করণের মাধ্যমে এবং বিদেশি কোম্পানিকে ফ্র্যাঞ্চাইজিংয়ের মাধ্যমে।
আমরা প্রায়শ বলি মিডিয়া মালিক এবং কর্মরতদের পেশাগত স্বার্থের দ্বন্দ্বের কথা। লতিফুর রহমান প্রমাণ করেছেন আলোকিত মালিকানার মাধ্যমে মিডিয়া হাউজকে পেশাগত স্বাধীনতা দেয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে মিডিয়া জাতীয় ভূমিকাও পালন করতে পারে।
আর সেই ভূমিকা পালন করতে গিয়ে যদি কোনো ঝুঁকি আসে সেটাকে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।
লতিফুর রহমানের এটা করা সম্ভব হয়েছিল তার অন্যতম কারণ তিনি সরকারের সঙ্গে কোনো ব্যবসা করতেন না। তিনি নিজে আমাকে বলেছেন, যদি সরকারের কাছ থেকে কোনোরকম বাণিজ্যিক বা আর্থিক সুবিধা কেউ নেয় তাহলে তার পক্ষে স্বাধীন মিডিয়া চালানো সম্ভব নয়। বিভিন্ন সরকারের আমলে তাকে বিভিন্নভাবে কর ব্যবস্থাপনা বা অন্যান্য প্রশাসনিক হয়রানি ও হেনস্তা করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি।
সবাই জানেন ব্যক্তি লতিফুর রহমান কেমন অমায়িক ভদ্রলোক ছিলেন। প্রায় তিন দশক পারিবারিকভাবে এবং বৃহত্তর সামাজিক গণ্ডিতে তাকে ঘনিষ্ঠভাবে আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। একাধিক মর্মান্তিক পারিবারিক দুর্যোগের ভেতরও কীভাবে একটি মানুষ তার মনোবল অটুট রাখতে পারেন তা দেখে বিস্মিত হয়েছি। নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কীভাবে উচ্চমূল্যায়িত করতেন তাও লক্ষ্য করেছি।
তার মৃত্যুতে দেশ একজন মহান নাগরিক এবং শিল্প ও বাণিজ্য খাত একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বকে হারালো শুধু তাই নয় আমার মতো অনেকেই উদার মানবিকগুণ সম্পন্ন একজন অভিভাবককে হারালো।