Originally posted in সমকাল on 9 January 2024
নতুন একটি বছর শুরু হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন একটি সরকার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার আগে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনমানের অবনমন ঘটেছে, যা কাটিয়ে ওঠা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে; যা চাহিদা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সহায়তা করবে। তবে সরবরাহ নিশ্চিতের বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজন হলে সময়মতো আমদানি করে মজুত বাড়ানো উচিত। বাজারে সিন্ডিকেট ও মধ্যস্থতাকারীদের অন্যায্য হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।
ডলার সংকটের কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে আমদানিতে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে হবে। এ জন্য ডলার সংকট দূর করতে হবে। ব্যাংকিং খাত ও রাজস্ব খাতে সক্ষমতা বাড়িয়ে সরকারের আয় বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ব্যাংকিং সিস্টেমের উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে ঋণখেলাপি কমাতে হবে।
বর্তমানে সব ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি প্রয়োগ করতে হবে। খেলাপি ঋণ, কর ফাঁকি, অর্থ পাচার, হুন্ডি-হাওলা, সিন্ডিকেশন ইত্যাদি কার্যক্রম দেশের অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণের পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায়োগিক দিকে আরও নজর দিতে হবে। সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার পাশাপাশি সাশ্রয়ীভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। পরিষেবা প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এসব ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম নিতে হবে। কিন্তু সংস্কার কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী এ ধরনের সংস্কার কাজ নিতে দেয় না। অনেক সময় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা প্রয়োগে এসব গোষ্ঠীই বাধা সৃষ্টি করে। এ জন্য স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে নতুন সরকারকে দেশের স্বার্থে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফেরাতে দৃঢ়তার সঙ্গে কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বর্তমানে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। এসব সংস্কার বাস্তবায়নে তাদের পক্ষ থেকেও জোর তাগিদ রয়েছে। কিন্তু শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণের কারণেই সংস্কার করব– এটি ভাবলে ফল পাওয়া যাবে না। নিজেদের অর্থনীতির ভালো ব্যবস্থাপনার জন্যই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। তাই এসব ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী শ্রম ইস্যু আলোচিত হচ্ছে। সারাবিশ্বে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র নতুন নতুন শ্রম অধিকার স্মারক গ্রহণ করেছে। এসব কারণেই আমাদের দেশেও শ্রমিকদের শোভন কর্মসংস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি এবং শোভন মজুরিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ জন্য উদ্যোক্তাদের দক্ষতার সঙ্গে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। অনেক দেশের সরকার শ্রমিকদের জন্য আবাসন, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়। বাংলাদেশ সরকারও এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। একই সঙ্গে ক্রেতাদেরও পণ্যের ন্যায্যমূল্য দিতে হবে।
লেখক : সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি