Published in প্রথম আলো on Monday 13 January 2020
গত এক বছরে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের তুলনায় বাংলাদেশ মুদ্রার কম অবমূল্যায়ন হয়েছে—কথাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, গত এক বছরে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন খুব কম হয়নি। তাই বলা যায়, ‘রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে মুদ্রার অবমূল্যায়ন খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করেনি। বরং বৈশ্বিক চাহিদার কারণে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমাদের ক্রেতাদের অনেক ক্ষেত্রে কম মূল্য অফার করতে হচ্ছে। এটা কেবল আমাদের দেশের জন্য নয়, অন্য দেশের ক্ষেত্রেও হচ্ছে।’
মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলে আমদানি ব্যয় বাড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন পেট্রোলিয়াম, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়ামের দাম ভবিষ্যতে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভূরাজনৈতিক যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, এটির দাম বাড়তে পারে। গত অক্টোবরে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৫২ দশমিক ৪ ডলার। জানুয়ারিতে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৬০ ডলার। অর্থাৎ এই সময়ে দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এর অর্থ বিশ্ববাজারে যদি এভাবে পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের সরকার যে পেট্রোলিয়াম আমদানি করে তার ব্যয়ও বাড়তে পারে। এর মধ্যে বর্তমানে সরকারের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি অনেক কম, সাড়ে ৩ শতাংশ। (বাজেটে লক্ষ্য ৪০ শতাংশ)। ফলে পেট্রোলিয়ামে বাড়তি ব্যয় হলে অন্য খাতে অর্থায়ন চাপের ভেতর পড়বে। এ অবস্থায় যদি মুদ্রার অবমূল্যায়ন অতিরিক্তভাবে করা হয় তাহলে তা আমদানি ব্যয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই কৃত্রিমভাবে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করার চেয়ে স্বাভাবিকভাবে যেভাবে হচ্ছে সেটাই ঠিক আছে।
সরকার রপ্তানি খাতে বিভিন্নমুখী যেসব প্রণোদনা দিচ্ছে, সেগুলোর মাধ্যমে এই খাতগুলো এমনিতেই দাঁড়িয়ে যাওয়ার কথা ছিল। যেহেতু প্রবৃদ্ধি কমছে তাতে বলা যায়, এই প্রণোদনাগুলো এসব খাতের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সিপিডির পরামর্শ হলো এই খাতে ভিন্নভাবে প্রণোদনা দেওয়া যায়, এভাবে ঢালাওভাবে না দিয়ে। লক্ষ্যভিত্তিকভাবে প্রণোদনা দেওয়া যায়। পণ্য বহুমুখীকরণ, বিশেষায়িত, নতুন ধরনের পণ্য রপ্তানির ওপর প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ প্রণোদনার ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে।
গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)