Originally posted in কালের কণ্ঠ on 22 April 2025
বৈদেশিক বিনিয়োগ আসছে না বললেই চলে। যা আসছে তা যৎসামান্য। গত আট মাসে ২০৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ কম হয়েছে। আর গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বিনিয়োগ কমার যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তা রাজনৈতিক কারণে হয়েছে।
আগামী দিনে বিনিয়োগ আনার জন্য ক্ষেত্র তৈরির সময় হয়েছে। এরই মধ্যে বিনিয়োগ সম্মেলন হয়ে গেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগেও আগ্রহী ছিল।
তবে এই আগ্রহ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর জন্য নজর দিতে হবে। এখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ নিষ্কণ্টক জমির বন্দোবস্ত করেছে। এতে জমির অবকাঠামো নিশ্চিত সহজ হবে।
তবে এক দরজায় সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এসব সেবার মূল্য অনেক বেশি আছে, এটি কমাতে হবে। দুর্নীতির কারণে আগে থেকেই সেবার মূল্য বেশি ছিল। এসব সমস্যা সৃষ্টির মূলে প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষমতা। এই দক্ষতার দুর্বলতায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি দ্রুত করতে হবে।
বিনিয়োগ আকর্ষণে বন্দর ও কাস্টমস সুবিধা নিশ্চিত করতে সহজীকরণ করতে হবে। পাশাপাশি লজিস্টিক সুবিধা বাড়াতে নীতির বাস্তবায়ন করতে হবে। সার্বিকভাবে ব্যবসার পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। এসব বিষয়ে নজর দিলে বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হবে।
দেশে অনেক বিনিয়োগ আসার কথা। অথচ কম্বোডিয়ার চেয়েও কম বিনিয়োগ আসছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করার এখন সুযোগই নেই। বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হবে।
আশার কথা হলো, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। বিশেষ করে চীনের বিনিয়োগ আমাদের দেশে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে আরো পাঁচ বছর শুল্ক সুবিধা থাকবে। এ কারণে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ আসবে। এই বিনিয়োগ টানতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাস্তবায়নে ওয়ানস্টপে সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যয় কমিয়ে প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি বিরোধ নিষ্পত্তি দ্রুত ও সহজ করতে হবে। এসব বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগ আসার বড় সম্ভাবনা আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যায়। এসব ক্ষেত্রে জিরো টলার্যান্স নীতি অনুসরণ করতে হবে, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসব বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা পায়। বিদেশি বিনিয়োগ টানতে প্রস্তুতিমূলক কাজ করে যেতে হবে। এখনো স্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা আছে বলে মনে করে অনেক বিনিয়োগকারীরা। রাজনৈতিক সরকার এলে তখন স্থিতিশীলতা আসবে। তার জন্য আগামী দিনে বিনিয়োগ পেতে প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে। এখন বিনিয়োগকারীরা প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। তারা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছে। এসব বিনিয়োগের আগ্রহ বাস্তবায়ন করতে পারলেই দেশের বিনিয়োগ বাড়বে।
লেখক : সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)