Originally posted in সমকাল on 4 October 2021
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস টানা কমলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৪১ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৬৭১ কোটি ডলার। এ হিসাবে তিন মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৩১ কোটি ডলার বা ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। শুধু সেপ্টেম্বরে কমেছে ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
ধারণা করা হচ্ছে, লোকজনের যাতায়াত শুরু হওয়ায় হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন বাড়তে পারে। মাঝে হুন্ডি একেবারেই কমে গিয়েছিল। এ ছাড়া করোনার প্রভাবে কাজ হারিয়ে যে হারে কর্মীরা দেশে এসেছেন, তার তুলনায় কম গেছেন। রেমিট্যান্স কমার প্রভাব ইতোমধ্যে মুদ্রাবাজারে পড়েছে। ডলারের দর বেড়ে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গতকাল ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, গত অর্থবছর করোনা শুরুর পর কাজ হারিয়ে কিংবা আতঙ্কের কারণে অনেকে জমানো টাকা নিয়ে দেশে ফেরেন। এ কারণে বেশ বড় প্রবৃদ্ধি হয় রেমিট্যান্সে। আবার সাধারণভাবে হঠাৎ করে কোনো কিছুতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হলে পরবর্তী সময়ে একই ধারা থাকে না।
গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সমকালকে বলেন, রেমিট্যান্সের আগের জাদু এখন আর নেই। করোনার প্রাদুর্ভাব কমার কারণে আন্তর্জাতিক যাতায়াত আবার শুরু হয়েছে। ফলে হুন্ডি আবার শুরু হতে পারে। এ ছাড়া এককালীন সঞ্চয় নিয়ে অনেকে ফেরত এসেছেন, যা আগের উচ্চ প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তিনি মনে করেন, রেমিট্যান্স পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরের বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ভোগ থেকে বিনিয়োগে আনার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা মোট ১৭৩ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই মাসে এসেছিল ২১৫ কোটি ডলার। এর মানে, একক মাস সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কমেছে ৪২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার বা ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্স গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। মোট রেমিট্যান্সের যা ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ কোটি ডলার বা ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ এসেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ডলার বা ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ এসেছে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে।
জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা সমকালকে বলেন, করোনার কারণে প্রবাসীদের অনেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। যে হারে দেশে ফিরেছেন, নতুনভাবে যেতে পেরেছেন তার তুলনায় কম। এ ছাড়া বেশি রেমিট্যান্স আসে- এমন কিছু দেশ এখনও পুরোপুরি আগের অবস্থায় যেতে পারেনি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ধারা ফিরবে বলে আশা করা যায়। গত অর্থবছর রেমিট্যান্সে এত বেশি প্রবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেমিট্যান্সে সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আবার করোনার প্রভাবে কাজ হারিয়ে দেশে ফেরাদের অনেকেই সব সঞ্চয় নিয়ে এসেছেন। কেউ কেউ দেশে কিছু করবেন, এই আশায় সব সঞ্চয় পাঠিয়েছিলেন।
করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান। আগের অর্থবছর এসেছিল যেখানে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছর রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৬৫৭ কোটি ডলার বা ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। আগে কখনও এক অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। করোনার মধ্যে রেমিট্যান্সে ব্যাপক প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে গত ২৪ আগস্ট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তবে আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়লেও রপ্তানি কম থাকাসহ বিভিন্ন কারণে এখন আবার ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে কারণে রিজার্ভ কমে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৪৬ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এতে করে ডলারের দর ব্যাপক বেড়ে আন্তঃব্যাংকেই গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায়। গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল।