গার্মেন্ট খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে প্রয়োজন দায়িত্বশীল ব্যবসার সঙ্গে সম্মিলিত প্রচেষ্টা

Originally posted in সমকাল on 5 July 2024

সমকাল ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সহযোগিতায় গত ১ জুন ‘রেসপন্সিবল বিজনেস কনডাক্ট ইন দ্য আরএমজি ইন্ডাস্ট্রিজ: অ্যাচিভমেন্ট অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে আইএলও-আইএফসি বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ প্রোগ্রাম। বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশের ১০ বছরের যাত্রায় উন্নত কর্মপরিবেশের প্রচার, নারীর ক্ষমতায়ন ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ আরএমজি খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়ার প্রেক্ষাপটে আয়োজনটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। এ আয়োজন সরকারি কর্মকর্তা, শিল্প খাতের নেতা, শ্রমিক প্রতিনিধি, গবেষক, আইএলও কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনকে একত্র করেছে। অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের আরএমজি ও অন্যান্য খাতে আরও বেশি রেসপন্সিবল বিজনেস কন্ডাক্ট (আরবিসি) এগিয়ে নিতে অর্জন, সর্বোত্তম অনুশীলন ও কৌশল তুলে ধরেছেন। গত এক দশকে বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ৪৭০টি কারখানা ও ৫০টি ব্র্যান্ডের সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে ইতিবাচকভাবে ১৩ লাখ কর্মীকে প্রভাবিত করেছে। উপদেষ্টা, মূল্যায়ন ও প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে গোলটেবিল বৈঠকে প্রোগ্রামের মূল উদ্যোগগুলো তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ যখন তার স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) অবস্থা থেকে উত্তরণ করছে, তখন অংশগ্রহণকারীরা টেকসই ও নৈতিক ব্যবসায়িক অনুশীলন পরিচালনার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন, সুসংগত নীতি ও অংশীজনের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। বহুজাতিক উদ্যোগ ও সামাজিক নীতি সম্পর্কিত আইএলওর ত্রিপক্ষীয় ঘোষণাপত্রের (এমএনই ডিক্লারেশন) ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, আইএলও নির্দেশিকা হিসেবে যা আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডে ধারণকৃত নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত এবং সামাজিক নীতি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক, দায়িত্বশীল এবং টেকসই কর্মক্ষেত্র অনুশীলনের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগকে (বহুজাতিক এবং জাতীয়) সরাসরি নির্দেশনা দেয়। জাপান সরকার এবং মিনিস্ট্রি অব ইকোনমি, ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমইটিআই) সমর্থিত আয়োজনটি বাংলাদেশের সমৃদ্ধশীল আরএমজি শিল্পের উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির অনুঘটক ব্যবসা পরিচালনে দায়িত্বশীলতার তাৎপর্যকে তুলে ধরেছে।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ (আরবিসি) অপেক্ষাকৃত নতুন ধারণা। এর নীতিগুলো এখন বিশ্বব্যাপী আইনি কাঠামোতে সমন্বয় করা হয়েছে। এ মূল উপস্থাপনাটি দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক চর্চা ও এর তাৎপর্য নিয়ন্ত্রণকারী আইন ও কাঠামোর ওপর ফোকাস করবে।

আরবিসি তিনটি মূল ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে: নীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ। সেক্টরের মধ্যে পরিবেশগত সুরক্ষা, নৈতিকতার মধ্য দিয়ে কাজ করার শর্তাবলি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এসব দায়িত্ব সরকারকে ছাড়িয়ে কারখানা পর্যায়ে ব্যবসায়িক পর্যায় পর্যন্ত প্রসারিত। যদিও আমরা অগ্রগতি করেছি, অনেক কাজ করা এখনও বাকি আছে। আরবিসির নীতিগুলো ১৬টি মানদণ্ড সমন্বিত, যা চারটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন থেকে প্রাপ্ত। আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী হিসেবে বাংলাদেশের এ নির্দেশিকা মেনে চলা শুরু করা উচিত। দশম বার্ষিকী উদযাপন করা বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম এসব নীতি কীভাবে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে, তার উদাহরণ দেয়।

গত এক দশকে এটি ৫০টি ব্র্যান্ড ও ১৩ লাখ কর্মীসহ ৪৭০টি কারখানা কভার করেছে, যা পুরো আরএমজি কর্মীর এক-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের মধ্যে ৫১ শতাংশই নারী। কর্মসূচি কর্মীদের মঙ্গল, অসম্মতি হ্রাস এবং সামগ্রিক কর্মীদের সন্তুষ্টি ও জীবিকা উন্নত করতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে।

সামাজিক ডায়ালগ ও অভিযোগ বিশ্লেষণের ওপর বেটার ওয়ার্কের গুরুত্ব আরোপ ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় কমিটি এবং কারখানাগুলোতে অসন্তোষের হার প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়েছে। উপরন্তু, গত পাঁচ বছরে এই কমিটিগুলোতে নারীর প্রতিনিধিত্ব প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে; প্রোগ্রামটি বিভিন্ন অসন্তোষসংক্রান্ত সমস্যাগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করেছে। যেমন– ওভারটাইম সীমা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ, ওভারটাইম নোটিশ প্রদানে ব্যর্থতার ২০ শতাংশ, সপ্তাহান্তে প্রদান করতে ব্যর্থতার ৫৬ শতাংশ এবং ওভারটাইমের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থতা ২১ শতাংশ কমেছে। বেটার ওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত কারখানাগুলো রপ্তানি আয়ের ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি এবং রপ্তানির পরিমাণে ৫০ শতাংশ বাড়ার রিপোর্ট করেছে, যা শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার সুবিধাকে তুলে ধরে।

এ সফল বিডব্লিউবি মডেলটি অন্যান্য রপ্তানিমুখী খাতে অনুকরণ করা উচিত। যা হোক যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়াসহ একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শ অবশ্যই সুসংগত হতে হবে এবং ভবিষ্যতের রেফারেন্সের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ভান্ডার বজায় রাখতে হবে। নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় আরবিসি প্রয়োজনীয়তা পূরণের উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।