Originally posted in কালের কন্ঠ on 7 August 2022
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক, বিকল্প ছিল কি না, অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তামজিদ হাসান তুরাগ
কালের কণ্ঠ : এই সময় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো কি যৌক্তিক?
মোস্তাফিজুর রহমান : সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪০ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এটা ঠিক যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছিল। আমাদের এখানে এত বড় সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ল, কারণ—একই সঙ্গে আমাদের টাকারও অবমূল্যায়ন হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে সমন্বয়ের দরকার ছিল।
তবে তা বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধাপে ধাপে করলে ভালো হতো। এর বাইরে আমদানি শুল্ক কিছুটা সমন্বয়ের মাধ্যমেও এই ভর্তুকি সামাল দেওয়া যেত। পাশাপাশি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি আরেকটু সহনীয়ভাবে করা গেলে ভোক্তা, উৎপাদক ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করাটা সহজ হতো।
কালের কণ্ঠ : মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব কোথায় কোথায় পড়বে?
মোস্তাফিজুর রহমান: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে গণপরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়াবেন। একইভাবে পণ্য পরিবহনের খরচও বাড়বে। এর ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যাঁরা রয়েছেন তাঁদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই আমাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে, এখন আরেকটি চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এসবের প্রভাব পড়বে নিত্যপণ্যের বাজারে। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে সেবারও দাম বাড়বে। দেখা যাবে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই পণ্য এবং সেবার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কালের কণ্ঠ : জ্বালানি তেলের দাম না বাড়িয়ে সরকারের বিকল্প কিছু করার কি ছিল?
মোস্তাফিজুর রহমান: আমরা যদি রাজস্ব জিডিপির হার বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণটা বাড়াতে পারতাম, তাহলে ভর্তুকি মেটানোর সক্ষমতাটা আরো বেশি থাকত। এখানে স্বল্পকালীন একটা বিষয় আছে এবং সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনারও একটা বিষয় আছে। জ্বালানি তেলের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ানো গেলে শুল্ক সমন্বয় করে এই ধাক্কাটা সামাল দেওয়া যেত।
কালের কণ্ঠ: সরকার কি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ভর্তুকি কমানোর শর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে?
মোস্তাফিজুর রহমান: হ্যাঁ সেটা হতে পারে। তবে সরকারের ওপর ভর্তুকি কমানোর চাপ আছে, যা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সরকার এটাকে ধীরে ধীরে বাজারের সঙ্গে সসন্বয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারত।
কালের কণ্ঠ: জনজীবনে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব কিভাবে সহনীয় রাখা যায়?
মোস্তাফিজুর রহমান: আমাদের নজরদারির অভাব রয়েছে। জ্বালানি খরচ কতটুকু বেড়েছে, সে অনুপাতে পণ্য ও সেবার দাম বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে দেখা যায় জ্বালানির দাম ৫০ শতাংশ বাড়লে পণ্য বা সেবার দামও ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা অযৌক্তিক। ফলে যেখানে নজরদারির দুর্বলতা রয়েছে সেখানে নজরদারি আরো বাড়াতে হবে।
কালের কণ্ঠ: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় কারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আপনি মনে করেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: সবচেয়ে বড় অভিঘাত আসবে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয়। এমনিতেই তাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ, তার ওপর এখন আবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নতুন করে তাদের ওপর আরেকটি চাপ সৃষ্টি করবে।
কালের কণ্ঠ: সামনে জ্বালানি তেলের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে কি?
মোস্তাফিজুর রহমান: বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতির দিকে, সামনে সেটা আরো কমতে পারে। আমাদের উচিত হবে কমলে সমন্বয় করা।
কালের কণ্ঠ: বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের কী করণীয় বলে মনে করছেন আপনি?
মোস্তাফিজুর রহমান: আমরা যদি আমাদের বিনিময় মূল্য আরেকটু স্থিতিশীল পর্যায়ে নিতে পারি তাহলে স্থানীয় বাজারে আমদানি পণ্যের যে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আরেকটা বিষয় হলো, সরকারের রাজস্ব আয় বাড়িয়ে ভর্তুকি দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর ধীরে ধীরে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র থেকে সরকারকে সরে আসার চিন্তা করতে হবে।