Originally posted in বাংলাদেশ প্রতিদিন on 2 June 2023
নতুন বাজেটে ন্যূনতম করযোগ্য আয়ের নিচের নাগরিকদের ২ হাজার টাকার কর প্রস্তাব অযৌক্তিক ও বিবেচনাহীন। আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত সমমানের দেশের তুলনায় অনেক কম। তাই সরকার তার উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আহরণের চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। এর ওপর আছে আইএমএফের কাছে এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, যার করযোগ্য আয় নেই তাকেও কর দিতে হবে। এটা কর ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতার-নীতির পরিপন্থী। সরকার একদিকে ব্যক্তি পর্যায়ের করযোগ্য আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ করেছে। বিগত সময়কালের মূল্যস্ফীতির নিরিখে এটা প্রয়োজন ছিল। আবার এর সঙ্গে করযোগ্য আয় না থাকলেও কর দিতে হবে সে প্রস্তাবও করেছে। এ দুটি সাংঘর্ষিক।
বলা হচ্ছে সরকারি সেবা নিতে হলে তাকে ন্যূনতম করদাতা হতে হবে। কিন্তু তার জন্য তো আবাসস্থলভিত্তিক ন্যূনতম বাৎসরিক কর নাগরিকদের দিতে হয়। ঢাকার জন্য ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য সিটি করপোরেশনের জন্য ৪ হাজার টাকা এবং তার বাইরের এলাকার জন্য ৩ হাজার টাকা কর দেওয়ার ব্যবস্থা তো আগে থেকে চালু আছে। আর করযোগ্য ব্যক্তি আয়ের নিচের মানুষরা কোনো কর দেয় না- এটা নির্জলা অসত্য। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক কোনো না কোনোভাবে পরোক্ষ করের আওতায় আছে। যে কোনো খাদ্যপণ্য ক্রয় করলে ভিখারি থেকে কোটিপতি নির্বিশেষে ভ্যাট দিয়ে থাকে। কিন্তু উল্টো বিবেচনা দেখি সম্পদশালীদের জন্য। লক্ষ করি ব্যক্তি করদাতাদের পরিসম্পদের ওপর সরকার আরোপের ভিত্তি ও হার দুটিতেই সুবিধা বাড়ানো হলো। এখন করযোগ্য পরিসম্পদ হবে ৩ কোটি টাকার বিপরীতে ৪ কোটি টাকা। ৪ কোটি থেকে ৫০ কোটি পর্যন্ত ওই ১০ শতাংশই বলবৎ থাকবে। আর ৫০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ৩৫ শতাংশ সারচার্জ।
আমাদের কর ব্যবস্থা ভীষণভাবে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীল। মোট করের দুই-তৃতীয়াংশ আসে এখান থেকে। একই হারে কর দেয় ধনী গরিব নির্বিশেষে। এই ন্যূনতম করের ধারণাটি প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর চেষ্টার অংশ। তবে সেই চেষ্টা হতে হবে ন্যায্য, স্বচ্ছ ও দক্ষ। সে জন্য আয়ের চেয়ে সম্পদের ওপর করধার্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি হিসাবে দেশে দারিদ্র্য কমার সঙ্গে আরও বেশি বৈষম্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। আর সম্পদ বৈষম্য বাড়ছে সবচেয়ে বেশি। করব্যবস্থা সংস্কার এ ক্ষেত্রে সরকার অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের পক্ষে আরও বেশি উন্নয়ন ব্যয় করার সুযোগ করে দিতে পারত। পরিতাপের বিষয় ২০২৩-২৪ এর বাজেট জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে যে সুযোগটা যথেষ্টভাবে ব্যবহার করল না।
লেখক : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিশেষ ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডি।