আরো চাপে পড়বে স্বল্প আয়ের মানুষ – তৌফিকুল ইসলাম খান

Originally posted in কালের কন্ঠ on 12 January 2025

তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির অভিঘাত চলছে। এমন সময় সরকারের ট্যাক্স-ভ্যাট বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হয়নি। ভ্যাট-সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর তালিকায় এমন অনেক পণ্য-সেবা আছে সেখানে সাধারণ মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপে পড়বে।

শুধু দরিদ্র মানুষের কষ্ট হচ্ছে কি না, আলোচনাটি এ রকম অবস্থায়ও নেই। যারা মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষ তাদের জন্যও এটা খুবই চাপের হয়ে গেছে। এ রকম সময় এমন একটা সিদ্ধান্ত আমি মনে করি না যে ঠিক হয়েছে।

এটা সম্পূর্ণভাবেই আইএমএফের যে শর্ত আছে, সেই শর্তের চাপের কাছে নতি স্বীকার করা হলো।

এটাতে হয়তো অনেকেই দ্বিমত করবে না যে ভ্যাটের হারকে একক হার করার বিষয়টি আমাদের মধ্যমেয়াদি লক্ষ্য ছিল। কিন্তু বিরাজমান পরিস্থিতির মধ্যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অনভিপ্রেত।
এটার অন্য উপায়ও ছিল। আমাদের কর আহরণ বাড়াতে হবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু বড় উদ্যোগ থাকতে পারত কর ফাঁকি বন্ধ করার ক্ষেত্রে।

বিপুলসংখ্যক মানুষ অনেক সম্পদ গড়ে তুলেছেন যাঁরা যথেষ্ট পরিমাণ আয়কর দেন না। সেই জায়গাটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল। প্রত্যক্ষ করের মধ্যে অনেক ধরনের ছাড় রয়েছে, সেগুলোকে হয়তো যৌক্তিক করা যেত। কর ফাঁকি রোধ করা সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল।

এর পরই অগ্রাধিকারে থাকা উচিত প্রত্যক্ষ করহারের যৌক্তিকীকরণ। সেদিকে না গিয়ে মূলত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী যে কর আহরণ করা যাচ্ছে না, সেটার অংশ হিসেবেই এমন সিদ্ধান্ত। এটা সাধারণ মানুষকে চাপের মধ্যে ফেলবে এবং তাদের অসহিষ্ণুতাকেও বাড়াবে। সার্বিকভাবে সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি মানুষের সমর্থনের ওপরও এ সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সরকারের বাড়তি শুল্ক-করের মাধ্যমে আহরিত অর্থ কোথায় ব্যয় হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। উনারা কি সরকারি কর্মকর্তাদের যে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে, এই অর্থ কি সেখানে ব্যয় হবে, না কি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ব্যাপ্তি বাড়ানো হবে। টিসিবির পরিসর কমানো হলো, ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় থাকা অনেক মানুষের কার্ড বাতিল করা হলো। বরং এখানে দরকার ছিল বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলিয়প্রীতি ছিল সেগুলো পর্যালোচনা করে আরো বেশি প্রকৃত গরিব মানুষকে এই সেবার আওতায় নিয়ে আসা। সেই জায়গাগুলোতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আইএমএফের চাপে এই পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হয়নি।

মূল্যস্ফীতি শুধু একটি সংখ্যা নয়। যে মানুষগুলোর আয়ের ও ব্যায়ের ওপর কাশাঘাত আসছে তারা এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারছে।

লেখক : সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)