Originally posted in আমাদের সময় on 29 May 2021
বিএনপি ৬ মাসের অন্তবর্তিকালীন যে বাজেটের কথা বলেছে এটি যেমন ঠিক না, তেমনি ১ বছরের জন্য সরকারের বাজেটও ঠিক না। গতকাল বিএনপির বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, সরকারের বাজেট কাঠামো হওয়া উচিৎ ৩ বছরের জন্য। কারণ আমরা জানিনা কোভিড কতদিন স্থায়ী হবে। গত বছর আমরা এবিষয়ে আলোচনা করেছি। এবারও বলছি বাজেট কাঠামো হওয়া উচিৎ ৩ বছরের জন্য। এটি হতে হবে আয় ও ব্যায়ের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোর বাজেট। কোভিডের তৃতীয় বা তার বেশি ধাক্কার ধকল হয়তো আমাদের সামনের দিকে সইতে হবে। সেই ধাক্কা মোকাবেলা করার অগ্রগামী চিন্তা, প্রস্তাবনা, আর্থিক সংস্থানের বিষয় বাজেটে থাকতে হবে। তিনি বলেন, আগামী ৬ মাসে বা ১ বছরে আমাদের টিকাকরণও হবে না। সুতরাং বাজেট কাঠামো পরিবর্তন হওয়া দরকার।
উল্লেখ্য, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ২৪ দফা বাজেট ভাবনা তুলে ধরেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিখাতের প্রত্যেকটিতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ, কালোটাকা সাদা করার বিরোধিতা, প্রান্তিক মানুষদের জন্য ৩ মাস ১৫ হাজার টাকা, এইখাতে জিডিপির ৭ শতাংশ বরাদ্দ, কৃষি কমিশন, অর্থনীতিবিদদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ, মেগাপ্রকল্পের চেয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পে গুরুত্বের প্রস্তাব করা হয়। বিএনপি মহাসচিব বলেন আগামী বাজেট হওয়া উচিত জীবন বাঁচানোর, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি মোকাবেলার বাজেট। বাজেট হতে হবে করোনা ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ ও অভিঘাত থেকে উত্তরণের বাজেট।
শেখ জামালের সমাধিতে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর শ্রদ্ধা ≣ ধামরাইয়ে‘পদ্মা সেতু’ বানানো সেই স্কুল ছাত্রের লেখা-পড়ার দ্বায়িত্ব নিলেন এমপি বেনজির আহমদ ≣ ‘টিকায় কিছু হবে না, লাভ যা হওয়ার মদেই হবে’
বিএনপির প্রস্তাবগুলো নিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিএনপি যে বাজেট প্রস্তাব করেছে তাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখি। কারণ উনারা বাজেট আলোচনাকে জনগণের কাছে নিয়ে আসছেন। তবে প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে সব বিষয়ে একমত নই। তাদের অনেক দাবিই ঠিক। কিন্তু বাস্তবায়নের চিন্তাগুলো পরিস্কার নয়। তারপরেও বিএনপি বাজেট নিয়ে বিকল্প কথা বলেছে। এটি ভাল উদ্বোগ।
কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, কালোটাকা বন্ধের জন্য শুধু প্রস্তাব করলেই হবেনা। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তাদের এ বিষয়ে আন্দোলন করা উচিৎ।
জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ লক্ষ্য হিসাবে ঠিক। কিন্তু পদ্ধতিগতভাবে ঠিক না। কারণ সরকার এসব খাতে বরাদ্দের ১ শতাংশও খরচ করতে পারেনা। স্বাস্থ্যখাতে এবারের খরচ জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। সুতরাং হঠাৎ করে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করা যায় না। এটি ধাপে ধাপে করা প্রয়োজন। অব্যাহতভাবে ও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রস্তাবিত কৃষি কমিশন সম্পর্কে বলেন, এটি হওয়া উচিৎ কৃষি মূল্য কমিশন। যার মাধ্যমে কৃষকরাও তাদের ন্যায্য মূল্য পাবে আবার ভোক্তারাও দামে ঠকবেনা। কৃষি কমিশনের ধারণাটি বিএনপি স্পষ্ট করেনি।
অর্থনীতিবিদদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু অর্থনীতিবিদ নয় জ্ঞানের অন্য শাখার মানুষদের নিয়েও এই কমিটি গঠন হতে পারে। বর্তমানে প্রশাসন নির্ভর সরকারের যে বাজেট কাঠামো। তাতে অন্য জ্ঞানের মানুষদের চিন্তা চেতনা থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। অতিমারির এই সময়টিতে যা খুবই প্রয়োজন ছিল। ধারণা হিসাবে বিএনপির এটি ভাল প্রস্তাব।
৩ মাস ১৫ হাজার টাকা করে প্রান্তিক মানুষদের নগদ সহায়তার বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ৩ মাস কেন এটি একাধিকবার দেয়া যেতে পারে। জিডিপির কত শতাংশ নগদ সহায়তায় দেয়া যায় এটি হিসাব করে দেখতে হবে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত বছর অনেকেই আলোচনা করেছেন, টাকা পয়সা আছে কি না? দেওয়া যাবে কি না? চিন্তা টাকার লভ্যতা নয়, টাকা খরচ করার যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে। খরচ করা না গেলে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর দৈন্যতা, অভাবগ্রস্ততা ও ঋণগ্রস্ততা বাড়বে। শুধুমাত্র সরকারের পরিবীক্ষণ কমিটি দিয়ে এসব বাস্তবায়নকে গতিশীল করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তা ৫০ লাখকে দেয়ার কথা থাকলেও ৩৬ লাখের বেশি লোককে নগদ সহায়তা দেয়া যায়নি।
মেগাপ্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, মেগা প্রকল্প দেশের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু দেখতে হবে এরজন্য যাতে অন্যখাতে বরাদ্দ কমে না যায়। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে যাতে বরাদ্দ না কমে। সরকারের নজর যেন শুধু মেগাপ্রকল্পেই আটকে না থাকে। এটি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বিএনপির কোভিড মোকাবেলার বাজেটের সমালোচনা করে ড. ভট্টাচার্য বলেন, শুধু কোভিড মোকাবেলার বাজেট হবে কেন। এরসঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ব্যাংক ব্যবস্থা, পুজিবাজার সংস্কারের বিষয় জড়িত রয়েছে। সরকারের জমে থাকা সবগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কাজ এখনই শুরু করতে হবে। একইসঙ্গে দুর্নীতি ও অনিয়ম মোকাবেলাতেও সরকারের এগিয়ে আসতে হবে। গভীরে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও কাঠামোগত সংস্কার করা প্রয়োজন। এরজন্য নীতি ও মনস্তাত্বিক পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। পুরো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এবং ফলাফলের ক্ষেত্রে, মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যদি এনজিও, ব্যক্তিখাত এবং নাগরিকদের সম্পৃক্ত করা না হয়, তাহলে এর গুনমান ভাল হবে না। বাংলাদেশ এখন এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে আছে, যেখানে এই দুর্যোগকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো যাবে। আগামী বাজেটে সেই ধরণের সাহসিকতা, সেই ধরণের দূরদর্শিতা এবং সেই ধরণের উদ্ভাবনী ব্যবস্থা থাকবে বলে তিনি আশা করেন।