অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বাড়বে – ফাহমিদা খাতুন

Originally posted in The Business Standard on 27 September 2025

ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ড. ফাহমিদা খাতুন এবং হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ

আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ছায়া সংসদ’ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, ‘একটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি ও অর্থনীতি পাশাপাশি চলে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বাড়বে।’

আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ছায়া সংসদ’ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ফাহমিদা বলেন, ‘ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়াটি জটিল। বাংলাদেশ ব্যাংক যদিও ২ বছরের কথা বলছে, তবে ৩ থেকে ৪ বছর লেগে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্যাংকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। ব্যাংকের লাইসেন্স জনগণের কল্যাণের জন্য নয়, বরং ব্যক্তিস্বার্থে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে লুটপাটে সহযোগিতা করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকখাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে একীভূতকরণ এর দিকে হাঁটছে। যদিও দেশে এর আগে একীভূতকরণের ভালো কোনো উদাহরণ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ৫টি ব্যাংক একীভূত করতে পরিকল্পনা নিয়েছে। একীভূত হওয়ার পর এ পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ হবে মোট ব্যাংক খাতের ৮.৪ শতাংশ। অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে খরচ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এ উদ্যোগ ব্যর্থ হলে দায়ভার বর্তমান কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। আর সফল হলে ব্যাংক খাত আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

ড. ফাহমিদা বলেন, ‘সফলতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন আইন প্রণয়ন দরকার এবং যারা আইন বাস্তবায়ন করবেন তাদের সততাও নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনেক ভুল ছিল। যথেষ্ট আইনি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে সঠিকভাবে কাজ করতে দেয়নি। চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ রাজনৈতিক প্রভাব মেনে নিয়েছে, আবার কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে সুবিধা নিয়েছে। আর্থিক খাতের মাফিয়াদের অনৈতিক সুবিধা প্রদানে ব্যাংক কার্যত সহায়ক হয়েছে। তখন দেশে মাফিয়া ইকোনমি শাসন করছিল। আশা করি এখন তার অবসান হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে সবচেয়ে ভালো ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক লুণ্ঠিত হয়েছে। চোর–ডাকাতরা বৈদেশিক মুদ্রায় এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যে কয়টি ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো এখন অতি দুর্বল অবস্থায় আছে। মালিকদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল অর্থ আত্মসাৎ করা ও বিদেশে পাচার করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন। যে সরকার অতীতের অনিয়ম থেকে শিক্ষা নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। যত দ্রুত সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। ফেব্রুয়ারিতে যদি একটি ভালো নির্বাচন হয়, তাহলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরবে, বিনিয়োগ বাড়বে এবং আর্থিক খাতে সুশাসন ফিরে আসবে।’

বিতর্কে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি (সরকারি দল) ও সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (বিরোধী দল) অংশ নেয় এবং বিরোধী দল জয় লাভ করে।