অর্থনীতিতে কিছুটা অগ্রগতি, কিন্তু চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে – মোস্তাফিজুর রহমান

Originally posted in সময়ের আলো on 21 April 2025

সুস্বাস্থ্যে ফিরছে অর্থনীতি

ছবি: সময়ের আলো

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় দেশের অর্থনীতি ছিল একেবারে ভঙ্গুর অবস্থায়। অর্থনীতির এমন নাজুক পরিস্থিতি রেখেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গিয়েছিল উদ্বেগজনক হারে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। এভাবে অর্থনীতির প্রতিটি সূচক ছিল খুবই নেতিবাচক অবস্থায়। সেই ভঙ্গুর অর্থনীতি এখন ভালোর দিকে।

হাসিনা সরকারের সময়ে ১৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাওয়া রিজার্ভ বেড়ে এখন হয়েছে ২৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স আহরণে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে গত মাসে। এ ধারা চলতি মাসেও অব্যাহত আছে। রফতানি আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা এসেছে। ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে যেসব সীমাবদ্ধতা ছিল সেগুলো তুলে নেওয়ায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতি এসেছে। ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে বিদেশে পাচার ঠেকানো গেছে। একই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা গেছে। সর্বোপরি জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। তবে অর্থনীতির এসব সূচক ভালো অবস্থায় গেলেও এখনও কিছু সূচকে পিছিয়ে আছে। যেমন- বিনিয়োগ বাড়ানো যায়নি, কর্মসংস্থান বাড়েনি। কর্মসংস্থান না বাড়ায় মানুষের আয় বাড়েনি এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। একই সঙ্গে রাজস্ব আয়েও এখনও অনেকটা পিছিয়ে আছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গত সাত-আট মাসে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ভালো করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং অর্থনীতিকে ভালো করার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। রিজার্ভ বাড়ছে, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ছাড়াবে এবং জুনের মধ্যে দেশের অর্থনীতি আরও ভালো হবে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির কিছু কিছু সূচক ইতিবাচক এবং এই ইতিবাচক ধারা আমাদের জন্য অবশ্যই ভালো দিক। তবে এখনও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচককে ভালো অবস্থায় নেওয়া যায়নি, সেগুলোতে উন্নতি করতে হবে। বৈদেশিক খাত ভালো অবস্থায় আছে। রেমিট্যান্স ভালো আসছে, রফতানি প্রবৃদ্ধি ভালো। এর ফলে রিজার্ভের যেভাবে বিপজ্জনক পতন হচ্ছিল তা রোধ করা গেছে। এর ফলে দুটি বিষয় ভালো হয়েছে। প্রথমত মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দ্বিতীয়ত দেশে এলসি খোলার ক্ষেত্রে যে রকম সীমাবদ্ধতা ছিল, সেগুলো তুলে নেওয়া গেছে। আর মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আসায় আমদানি করা পণ্যে মূল্যস্ফীতি যেভাবে বেড়েছিল, সেটি এখন স্তিমিত হয়েছে।’

‘এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, পাচার করা টাকা ফেরত আনার সংস্কার, এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবার বাজার ব্যবস্থাপনায় মাঝেমধ্যে ভালো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, এসবই অর্থনীতির জন্য এখন ইতিবাচক দিক।’

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিতে ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে অন্যান্য যেসব সূচক রয়েছে সেগুলো এখনও ভালো অবস্থায় নেওয়া যায়নি। যেমন- সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি হয়তো কিছুটা কমানো গেছে, কিন্তু খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এখনও সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে আছে। বিগত সরকারের আমলে কয়েক বছর ধরে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। একদিকে ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, এর বিপরীতে মানুষের আয়ও সেভাবে বাড়েনি। এর পেছনে বড় কারণ ছিল বিগত সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ। এ কারণে পলিসি রেট ও ডিপোজিট রেট ওপরে রাখতে হয়েছে এবং ল্যান্ডিং রেটও ওপরে রাখতে হয়েছে। এর ফলে দেশের বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বর্তমান সময়েও বিনিয়োগ বাড়াতে না পারাই অর্থনীতির জন্য বড় সমস্যা। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না। কর্মসংস্থান না বাড়লে মানুষের আয় বাড়বে না। আর শোভন আয় না হলে ক্রয়ক্ষমতার যে অবনমন হয়েছে সেটিকে সামাল দেওয়া যাবে না। যদি মানুষের আয় বাড়ানো যায় তা হলে ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি উচ্চ থাকলে এবং আয়ও না বাড়ানো গেলে মানুষের জীবনমানের আরও অবনমন হবে। তাই আমি মনে করি, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ইতিবাক দিক যেমন আছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। কেননা মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি পরিস্থিতি, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পাশাপাশি রাজস্ব আয়েও পিছিয়ে আছে অনেকটা। এ ছাড়া দাতা সংস্থা আইএমএফও যেসব শর্ত দিয়েছিল তার অনেক এখনও পূরণ করা যায়নি। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতির সব চ্যালেঞ্জ এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি। তবে কিছু কিছু জায়গায় আমরা ইতিবাচক প্রবণতা দেখছি। এই ইতিবাচক প্রবণতা টেকসই কতটুকু হবে, এর স্থায়িত্ব কতটুকু হবে এবং এটি আরও ইতিবাচক প্রবণতার দিকে যাবে কি না, সেটি দেখার জন্য আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।

আরেক অর্থনীতিবিদ ও আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ এ বিষয়ে সময়ের আলোকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের অর্থনীতি যে ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল, সেখান থেকে এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে দেশের অর্থনীতি আরও ভালো হবে। সামগ্রিক অর্থনীতির চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, জিডিপির গ্রোথ রেট আগে যে প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল এখন তার চেয়ে বাড়িয়ে প্রক্ষেপণ করছে বিদেশি সংস্থাগুলোই। রিজার্ভ বাড়ছে দ্রুতগতিতে, রফতানি আয় বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি কমছে, ব্যাংকিং খাতের যে দুর্দশা ছিল তা কাটিয়ে উঠছে। ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে বিদেশে পাচার ঠেকানো গেছে। এগুলো অবশ্যই অর্থনীতির জন্য ভালো দিক, আশা করি সামনে আরও ভালোর দিকে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট দেশের অর্থনীতির বিপক্ষে আপাতত আর যাচ্ছে না, অর্থাৎ মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। রিজার্ভ এখন বেড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলারের ওপরে গেছে, যেটি শেখ হাসিনার সময় ১৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। আগামী দুই মাসের মধ্যে রিজার্ভ বেড়ে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। তখন হয়তো আমাদের আর আইএমএফেএর ঋণও দরকার হবে না। দেশের অর্থনীতির জন্য এসব তথ্য অবশ্যই অনেক স্বস্তির বিষয়। তবে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেশিÑএটি কমাতে হবে। যদিও সরকার চেষ্টা করছে। আমার বিশ্বাস, সবকিছু মিলিয়ে আগামী জুন নাগাদ দেশের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে।’

রিজার্ভ বেড়ে সাড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলার: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মুহূর্তে রেমিট্যান্স নেমেছিল ১৭ বিলিয়ন ডলারে। সেই রিজার্ভ এখন বেড়ে ২৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ার কারণেই মূলত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৬ হাজার ৫১৫ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ২১ হাজার ১৭৫ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গত ৮ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনাবাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ ১ হাজার ৯৭০ কোটি ডলারে নেমেছিল। এরপর থেকে রিজার্ভ আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৩৮৬ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ ছিল ২১ হাজার ১১৪ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড: গত মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে দেশে। রেকর্ড সৃষ্টি করে মার্চে আসে ৩২৯ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। একক কোনো মাসে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স এর আগে কখনো আসেনি দেশে। এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসীদের পাঠানো ২৬৪ কোটি ডলার ছিল একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থ পাচার ঠেকাতে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফলে হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো কমে গেছে, বৈধপথে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে। এ ছাড়া গত ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র ক‌রে পরিবার-পরিজনের বাড়তি খরচের কথা মাথায় রেখে বেশি বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর কারণে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১০ কোটি ৬১ লাখ ডলার। গত বছরের মার্চে এ গড় পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত মাসে আগের বছরের মার্চের তুলনায় রেমিট্যান্সে ৬৪ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ২০০ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ১৭৮ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৭০৮ কোটি মার্কিন ডলার।

চলতি মাসেও ইতিবাচক গতিতে রেমিট্যান্স : ঈদের পরও ইতিবাচক ধারায় আছে প্রবাসী আয় আহরণ। চলতি এপ্রিলের ১৯ দিনে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৭১ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪৭ ডলার।

রফতানি আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি: বিগত কয়েক মাস ধরেই রফতানি আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আর রফতানি আয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে পোশাক খাত। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রফতানি করেছে ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিটওয়্যার ১৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং ওভেনওয়্যার ১৪ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। একক মাস হিসাবে মার্চে রফতানি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে প্রবৃদ্ধির হার ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এটি প্রমাণ করে, বৈশ্বিক বাণিজ্য চিত্রে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক খাত তার সক্ষমতা ধরে রেখেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পোশাক রফতানি ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা এ বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

ডলারের বাজারে ফিরেছে স্থিতিশীলতা: এদিকে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বৃদ্ধির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর নিট ওপেন পজিশন (এনওপি) বেড়ে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের ওপরে, যা মাসখানেক আগেও ছিল মাত্র ১৫০ মিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর মনিটরিংয়ের ফলে হুন্ডির প্রবাহ কমেছে, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার তারল্যও বেড়েছে, যা বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।

ব্যাংকারদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার ফলে ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট অনেকটাই কমেছে। আগের মতো রেমিট্যান্স ডলার কেনার প্রতিযোগিতা না থাকায় বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছে। বর্তমানে আন্তঃব্যাংক বাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত হয়েছে ১২২ টাকা, যা আমদানিকারকদের জন্যও স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে।

কমছে বাণিজ্য ঘাটতি: দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি হিসাবের নেতিবাচক অবস্থা কাটছে, তেমনি বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও কমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাস (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) চলতি বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ইতিবাচক দিকে প্রবাহিত হয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ব্যয় খুব একটা বাড়েনি। এ কারণে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমে এসেছে। চলতি হিসাবের লেনদেন ভারসাম্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৩ হাজার ৩৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে এবং ৪ হাজার ৩৭৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৪৩৩ কোটি ডলার, যা এ সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ কমেছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ভালো খবর, যা মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রতিবেদনটি আরও জানাচ্ছে, চলতি হিসাবের লেনদেনে ঋণাত্মক অবস্থান ছিল ১২৭ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৪০৭ কোটি ডলার ছিল।

কমে এসেছে মূল্যস্ফীতির চাপ: বিগত সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতি যেখানে বেড়ে ১৪ শতাংশের কাছে গিয়েছিল, সেখানে গত মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী জুনের মধ্যেই তা ৮ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ এই হ্রাসে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন তারা। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সতর্ক করেছে যে, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হতে পারে ১০ দশমিক ২ শতাংশ।