Originally posted in কালের কন্ঠ on 1 May 2022
বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন একজন সজ্জন ব্যক্তি। একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা ও অসাম্প্রদায়িক মানুষ। দেশ-জাতি ও অর্থনীতিতে তাঁর নিজস্ব কিছু চিন্তা ছিল। তিনি অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।
তাঁর প্রণীত বাজেটে জনমানুষের চাহিদার প্রতিফলন থাকত। তাঁর মন্ত্রিত্বের সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। তাঁর সময়ে বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচির বিভিন্ন অর্জনের নানা সূচকে দেশের উন্নতি হয়েছে।
তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় আশির দশকে, যখন আমি দেশে ফিরি সে সময়ে। পরে তিনি যখন এরশাদ সরকারের মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেন তখন তাঁর সঙ্গে ঘরে এবং ঘরের বাইরে অর্থনীতিসহ অনেক বিষয়ে আমার আলোচনা হয়েছিল।
তখন আমি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির একজন নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতাম। ১৯৯৬ সালে যখন দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সংকট সৃষ্টি হয় তখন দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কিভাবে ফের ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে আমি তাঁর সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছিলাম। অবশ্য তখন তিনি আওয়ামী লীগ দলের বাইরে ছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই দশক মন্ত্রিত্ব ও মন্ত্রিত্বের বাইরে থাকাকালীন তিনি সেন্টার ফর পলিসি (সিপিডি) আয়োজিত নানা সংলাপ, আলোচনায় নিয়মিত যোগদান করেছেন। তাঁর সঙ্গে একাধিক বিষয়ে আমাদের তর্ক- বিতর্ক হয়েছে। তবে এই তর্ক-বিতর্ক কখনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট করেনি। বরং দেশের অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে সহায়তা করেছে। নানা অনুষ্ঠানে আমি তাঁর সঙ্গে যোগদান করেছিলাম। সেসব অনুষ্ঠানে তিনি আমাকে সদা হাস্যোজ্জ্বল সম্ভাষণ জানিয়েছেন।
তবে আমার কিছুটা দুঃখ আছে, ওনার মতো ব্যক্তিত্বের কাছে আমরা আরো কার্যকর অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ চেয়েছিলাম। উনি যদি স্বাধীন অর্থনৈতিক বিশ্লেষণকে দেশের নীতি প্রণয়নের জায়গায় আরেকটু জায়গা দিতেন, তাহলে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে আরো লাভ হতো।
সার্বিকভাবে মুহিত সাহেব বাংলাদেশের অর্থনীতির যেকোনো বিশ্লেষণের একটি রেফারেন্স পয়েন্ট। তাঁর কর্ম ও জীবনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
লেখক : সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি