অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক পেলেন রেহমান সোবহান

Published in বণিক বার্তা  on Friday, 22 December 2017

 

অর্থশাস্ত্র চর্চা ও গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি স্বর্ণপদক-২০১৭ পেয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ  রেহমান সোবহান। এছাড়া গবেষণা ও অর্থনীতিতে অবদানের জন্য স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেন (মরণোত্তর) ও ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীকে এ সম্মাননা দিয়েছে অর্থনীতি সমিতি।

গতকাল রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) ভবনের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে দেশবরেণ্য এ তিন অর্থনীতিবিদকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ড. মাহবুব হোসেনের পক্ষে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন তার মেয়ে শারমিন হোসেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সূচকগুলো বিশ্লেষণে তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, রফতানি আয় ও প্রবৃদ্ধিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও অর্জন রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনেও বাংলাদেশ অনেক সফলতা অর্জন করেছে। দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট, শিশুদের জন্য বিশেষ বরাদ্দসংবলিত বাজেট, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে সুসংহতকরণ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান থেকে শুরু করে সবকিছুর একটি সমন্বিত প্রয়াস ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার কাজ করে চলেছি।

স্পিকার আরো বলেন, বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিশ্বায়নের প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করেই নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। এক্ষেত্রে নারীসমাজকে অর্থনীতির মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

মুক্তবাজার অর্থনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি কীভাবে চলবে— স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবকিছু নির্ধারিত হবে, নাকি  আইনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন আছে— সেটা আমাদের ভাবতে হবে। আমরা অনেক সময় চাহিদা ও জোগানের যোগসূত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের কাজ করতে পারি।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ড. আবুল বারকাত। তিনি বলেন, মানবসভ্যতার শুরু থেকেই অর্থনীতি শাস্ত্র ও নৈতিকতার বিষয়টি বারবার প্রতিবিম্বিত হয়েছে সমাজ ও মানুষের জীবনে। আমাদের প্রতিরোধ, দেশপ্রেমের লড়াইয়ের ইতিহাস ব্যক্তি ও সমাজজীবনের পরতে-পরতে জড়িয়ে গেছে। এ দ্বিবার্ষিক সম্মেলন বয়ে আনবে নতুনতর ভাবনা-চিন্তার অজস্র সম্ভাবনা।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে রেহমান সোবহান বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হলে রাজনীতিতে অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন নিরসন করতে হবে। রাজনীতিতেও অসমতা রয়েছে। এখন যাদের হাতে টাকা আছে, তারাই নেতা হচ্ছেন। কিন্তু এ রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদ করেননি। রাজনীতিতেও অর্থনৈতিক নৈতিকতার বিষয়টি ভাবতে হবে। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনা দরকার।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদসহ সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ‘অর্থশাস্ত্র ও নৈতিকতা’ প্রতিপাদ্যে তিনদিনের এ দ্বিবার্ষিক সম্মেলন চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।