Published in বাংলাদেশ প্রতিদিন on Wednesday, 3 January 2018
অর্থনীতি স্থিতিশীল না রাখলে নির্বাচনে সুফল মিলবে না
রুহুল আমিন রাসেল
নির্বাচনকালীন সময়ে অর্থনীতি হয়তো খুব বেশি মনোযোগ পাবে না— এমন মন্তব্য করে দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এই অর্থনীতি স্থিতিশীল না রাখতে পারলে যে সুফল একটা নির্বাচনমুখী সরকার চায়— সেটা পাওয়া যাবে না। তার মতে, সরকার যে বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো নিয়েছে, সেগুলো দৃশ্যমান করার একটা তাগিদ এ বছর থাকবে। এই তাগিদের অভাবের ফলে আবার যেন অর্থনীতিতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেটাও লক্ষ্য রাখার বিষয়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ— সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গতকাল ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন। তার মতে, আমাদের সবার অভিন্ন স্বার্থ হলো— অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং এই বিষয়গুলোকে মনোযোগে রেখে নজর দেওয়া। যেহেতু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা আগামী কয়েক মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই কতখানি সমন্বয় করে সুষ্ঠুভাবে দক্ষতার সঙ্গে আমরা অর্থনীতিকে পরিচালনা করি, নির্বাচনের সামনে সেটা যেন যত্ন পায়। নির্বাচনী হাওয়ায় যেন হারিয়ে না যায়। যদি নির্বাচনে পরিবর্তনেও কোনো সরকার আসে, তার ওপরও সে বোঝাটা পড়বে। দেশে এখন ব্যাংকিং খাত, দ্রব্যমূল্য ও বৈদেশিক এই তিনটিকে বড় বিষয় উল্লেখ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নড়বড়ে অবস্থায় আছে। রেমিট্যান্স আয় ও পণ্য রপ্তানি আয় এ দুটোর দিক থেকেই ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ধরনের পতনের লক্ষণ আমরা দেখতে পারছি। এর পাশাপাশি আমদানি বৃদ্ধির যে সাম্প্রতিক প্রবণতা আছে, যদি এটা মিলে হয়, তাতে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে সমস্যা করবে। একই রকমভাবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ আছে, সেটাও বড় ধরনের পতন না হলেও কিছু উপরের দিকে ওঠার সম্ভাবনা এখন আর নেই। জাতিসংঘে কাজ করা অভিজ্ঞ সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল রাখা এখন গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী সাম্প্রতিককালে দেখেছি আমরা। আন্তর্জাতিক বাজারে আবার চালের দাম বাড়ছে এবং আমাদের এখানে উত্পাদন কম হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমদানিতে শুল্ক একটু কমানো হয়েছে। আমদানি ও রাষ্ট্রীয় খাদ্য ব্যবস্থাপনায় মজুদ ঠিক রেখে বাজারকে স্থিতিশীল রাখা একটা বড় বিষয়। খাদ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার একটা বড় বিষয় হলো- টাকা লেনদেনের হারে দুর্বল হয়ে গেছে। এই দুর্বল টাকাতে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে গেলেও এবং খাদ্যপণ্যের বাইরেও দ্রব্যমূল্যকে প্রভাবিত করবে। ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ২০১৭ সালে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ চাঙ্গা করার জন্য অনেক নীতি সমর্থন দেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে, এটা যতখানি না বিনিয়োগের বিষয়, তার চেয়েও বেশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয় নির্বাচনের প্রাক্কালে। নির্বাচনের প্রাক্কালে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হলে- ২০১৭ সালের শেষে এসে যে দুর্বল জায়গাগুলো দেখছি, সেগুলোকে মনোযোগে রাখতে হবে। এর প্রথমেই হলো ব্যাংকিং খাত। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ব্যাংকিং খাতের ভিতরে এখন যেসব ধরনের অপশাসন, অপকৌশল চলছে, সেগুলোকে মোকাবিলা করে ব্যাংক খাতের ভিতরে যেন কোনো বড় ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে আমানতকারীরা টাকা তোলার দিকে যাতে না চলে যায়। অথবা অন্য কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গিয়ে আমানতকারীর স্বার্থ বিনষ্ট করে, এরকম পরিস্থিতিতে সরকারকে সচেতন থাকার একটা বড় ব্যাপার হয়ে গেছে। সরকার ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের কোনো সংস্কার এই নির্বাচনের প্রাক্কালে করতে পারবে, এটা আমার কাছে মনে হয় না। সেহেতু এই জায়গাটায় নজরের ভিতর রেখে স্থিতিশীল রাখা একটা বড় বিষয়। কিছু কিছু বড় ধরনের যারা তছরুপ করেছে, তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করলে এক ধরনের আস্থা ফিরে আসতে পারে।