Published in আমাদের সময় on Tuesday, 9 January 2018
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রোহিঙ্গা প্রভাবের সমীক্ষায় আইএমএফ
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, সে বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। কাজটি এখনো শেষ করতে পারেনি তারা। এর জন্য আরও সময় লাগবে। এ ছাড়া সমীক্ষার জন্য তাদের যেসব তথ্যের প্রয়োজন প্রশাসন তা দিতে পারছে না। ফলে সমীক্ষা কাজে দেরি হচ্ছে। যে কারণে বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতির বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেনি। তারা আশা করছে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটি শেষ করতে পারবে। আইএমএফের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, আইএমএফ যেসব তথ্য চেয়েছে ওইসব তথ্য ওই সময়ে তাদের হাতে ছিল না। যে কারণে সব তথ্য দিতে পারেনি। পরে ওইসব তথ্য সংগ্রহ করে আইএমএফের কাছে পাঠানো হয়েছে।
গত নভেম্বরে আইএমএফের তরফ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে সে ব্যাপারে একটি জরিপ করা হয়েছে। এ ব্যাপরে আইএমএফ এখনো কাজ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনায় এসব বিষয় তুলে ধরা হবে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন আইএমএফ এখন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কেননা দেশটিতে বর্তমানে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। তাদের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে কী প্রভাব পড়ে সেটি দেখার বিষয়। আইএমএফ এ ক্ষেত্রে সব কিছু বিবেচনা করছে। এ ধরনের মানবিক বিপর্যয় দ্রুত সমাধানে তৎপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংগঠনগুলোকে একমত করার চেষ্টা করা হচ্ছে আইএমএফের পক্ষ থেকে। তারাও এর দ্রুত সমাধান চায়।
আইএমএফের অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা প্রভাব জানার পাশাপাশি অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক দিকগুলো খুঁজছেন। এটি চলমান থাকলেও এর প্রাথমিক ফলও আমরা এখনো পাইনি। এর পুরো ফল জানতে আরও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
আইএমএফ বলেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা শুরু হওয়ার এক মাস আগে তারা মিয়ানমারের অর্থনৈতিক পর্যালোচনা সম্পন্ন করেছে। এতে তারা বলেছে, মিয়ানমারের জন্য এটি স্থানীয় সমস্যা। এ সমস্যার পক্ষে যথেষ্ট দালিলিক প্রমাণ নেই।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রোহিঙ্গাদের প্রভাবের বিষয়ে আইএমএফের বিশ্লেষণ আন্তর্জাতিক মহলে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দাতা সংস্থা আইএমএফের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই সাহায্য সহায়তা করবে। তাই এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের সুবিধার্থে ব্যবহার করা যায় সে জন্য প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আইএমএফকে সহযোগিতা করতে হবে।
এদিকে কক্সবাজারের অর্থনীতিতে রোহিঙ্গাদের কারণে প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় স্থানীয় অধিবাসীদের অতিরিক্ত আরও ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গার কারণে সব ধরনের পণ্য ও সেবার চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে বেড়েছে দামও। পাশাপাশি নগদ টাকা ও ত্রাণের প্রবাহও বেড়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের আগমন বাড়ায় টাকার প্রবাহও বেড়েছে। সব মিলিয়ে কক্সবাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। এতে স্থানীয়ভাবে সব পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয়রা।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশন্স হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস (ইউএনএইসিআর) মতে, ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। নতুন করে রোহিঙ্গা আসার প্রবণতা কমে গেছে। এখন আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অন্ন, বস্ত্র, আবাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষার ব্যবস্থা করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশে রয়েছে আট লাখ রোহিঙ্গা। স্থানীয় গোয়েন্দাদের মতে, এ দফায় এসেছে কমপক্ষে ১০ লাখ। আগে থেকে আছে দুই লাখের বেশি। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা হবে ১২ লাখের বেশি। কিন্তু জাতিসংঘের হিসাবে আগে থেকে রোহিঙ্গা রয়েছে ৬৩ হাজার। টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় স্থানীয়ভাবে জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। স্থানীয় জনসংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোহিঙ্গা। এ ছাড়া কক্সবাজার জেলায় মৌসুমে প্রায় তিন-চার লাখ পর্যটক থাকে। অন্য সময়ে থাকে ৪০-৫০ হাজার। সব মিলিয়ে স্থানীয়ভাবে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে চাপে পড়েছে অর্থনীতি।