Originally posted in প্রথম আলো on 13 March 2023
টানা পাঁচ মাস কমার পরে দেশে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে। তবে মূল্যস্ফীতির এই মাত্রা স্বাভাবিক সময়ের মূল্যস্ফীতির হার থেকে অনেক ওপরে। কারণ, স্বাভাবিক সময়ে পাঁচ শতাংশ বা তার নিচে মূল্যস্ফীতি থাকে।
গত কয়েক মাস মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছিল, তাতে সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় কমে আসার কোনো ইঙ্গিত দেয় না। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি যদি কিছুটা কমও হতো তাহলেও অনেক বেশি থাকত। সেদিক থেকে বলা যায়, এখন আমরা একটা উচ্চ মূল্যস্ফীতির বৃত্তের মধ্যে আছি। এখান থেকে শিগগিরই বের হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার পেছনে অবশ্য কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে।
বর্তমানে দেশে ডলারের উচ্চ মূল্য, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, আমদানি সীমিত করা, স্থানীয় বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, সরবরাহ খরচ বেড়ে যাওয়া, রিজার্ভ পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পণ্য উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় বাড়তি খাদ্য মূল্যস্ফীতি আমাদের জন্য একটি নতুন বাস্তবতা। এই ধরনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাজারে থাকে।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কিছুটা যৌক্তিক কারণ রয়েছে, এ কথা সত্য। তবে আমদানি ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় কেউ পণ্য মজুত করে রাখছে কি না, সেটিও সরকারকে দেখতে হবে। কারণ, পণ্য মজুতের কারণেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। তাই বাজার বহির্ভূত অন্যান্য কারণে যাতে মূল্যস্ফীতি প্রভাবিত না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি দেখা যাচ্ছে। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি।
এটা গ্রামীণ খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার জন্য উদ্বেগজনক অবস্থা নির্দেশ করে। কৃষক যে পণ্য উৎপাদন করছেন, সেই পণ্যের একটা বড় অংশ নিজের ব্যবহারের জন্য রাখতে পারছেন না। পাশাপাশি তাঁকে উচ্চ মূল্যে বাজার থেকে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এ কারণে শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রাম এলাকাতেও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তা না হলে দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিরাপত্তা—সবগুলো জায়গাতেই আরও প্রকট অবস্থা তৈরি হতে পারে।
– ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি।