আর্থিক খাত সংস্কারের সময়নির্দিষ্ট রূপরেখা থাকা উচিত – ফাহমিদা খাতুন

Originally posted in দৈনিক সমকাল on 1 September 2024

ড. ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি

ড. ফাহমিদা খাতুন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক ছিলেন। তিনি বিআইডিএসে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। পরিচালক পদে কাজ করেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির গ্র্যাজুয়েট ফাহমিদা যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্টডক্টরাল সম্পন্ন করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন

সমকাল: বাংলাদেশের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে নানা সংকট মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে গণঅভ্যুত্থানে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। আপনি কি অর্থনীতির প্রধান সংকটগুলো এবং সেগুলোর উৎস নিয়ে বলবেন?

ফাহমিদা খাতুন: অর্থনীতিতে বিভিন্ন সংকট সৃষ্টি হয়েছে মূলত নীতিগত দুর্বলতার কারণে। সঠিক সময়ে সঠিক নীতি নেওয়া হয়নি। নীতির ক্ষেত্রে দোদুল্যমানতা ছিল। একই সঙ্গে কিছু ভুল নীতি নেওয়া হয়েছে। এ কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিম্নমুখী হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে। মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরনের পতন হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্বলতা দেখা গেছে। কর-জিডিপি হার বাড়েনি, যা পৃথিবীর প্রায় সব দেশের তুলনায় কম। পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়েনি। জ্বালানি খাতে নানা সংকটের পাশাপাশি অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। অর্থনীতি ঋণভারে জর্জরিত। সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আর্থিক খাত বিশেষত ব্যাংকিং খাতের ভয়াবহ দুর্বলতা। এসবের ফলে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে এক সময় যে স্থিতিশীলতা ছিল, অর্থাৎ উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নিম্ন মূল্যস্ফীতি এবং বহির্খাতে যে শক্তিশালী অবস্থা ছিল, তা নষ্ট হয়েছে।

আরেকটি বিষয় হলো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। পাশাপাশি বৈষম্য কমাতে পারেনি, বরং বেড়েছে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে এসব সংকটের অনেকটাই এড়ানো যেত। অথচ নীতিনির্ধারকরা অর্থনীতির সংকটকে স্বীকৃতিই দিতে চাননি। যেমন– দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতির চাপ ছিল এবং এ চাপ কমাতে সঠিক মুদ্রানীতি নেওয়া হয়নি। সুদের হার বাড়িয়ে বেশির ভাগ দেশ যখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক তখন সুদের হারের ওপর সীমা দিয়ে রেখেছিল। যদিও গত জুলাই মাসে ওই সীমা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অনেক দেরিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সমকাল: কিন্তু মূল্যস্ফীতি তাতে কমেনি।

ফাহমিদা খাতুন: সুদের হার বৃদ্ধির ফল পেতে সময় লাগবে। আবার মুদ্রানীতি এককভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এ জন্য সহযোগী রাজস্ব বা আর্থিক নীতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেখা গেছে, মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হলেও সরকার ব্যয় সংকোচন করতে পারেনি। অন্যদিকে বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা কাটানো যায়নি। বেশ কিছু নিত্যপণ্যের আমদানিকারকের সংখ্যা খুবই সীমিত। আবার আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দিয়ে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। পণ্যের সরবরাহ চেইনে রাজনৈতিক কর্মী, মাস্তান, এমনকি পুলিশকেও চাঁদা দিতে হয়। মূল্যস্ফীতি কমাতে গেলে সব সমস্যা দূর করার নীতি থাকতে হয়, যা এতদিন আমরা দেখিনি। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনেছে। কিন্তু ভুল নীতির কারণে মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে উঠতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।

সমকাল: গণমানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাজারে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় থাকা। অন্যদিকে যাদের আয় খুবই কম তাদের খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। নতুন সরকার মানুষের এ প্রত্যাশা পূরণে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

ফাহমিদা খাতুন: বাজারে পণ্যের সরবরাহ থাকলেও মানুষের হাতে টাকা না থাকলে তো সে কিনতে পারে না। তখন তার খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এখন যে বন্যা হচ্ছে, তাতে মানুষের জীবন-জীবিকার পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ জন্য সরকারের কিছু পদক্ষেপ আগে থেকেই নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়াতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা এবং পরিমাণ। সিপিডির পক্ষ থেকে গত বাজেটের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ওপর এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, খাদ্য বিতরণ সম্পর্কিত কার্যক্রমে বরাদ্দ কমে গেছে। এখন কিন্তু এগুলো বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন নীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমে এলে মানুষ একটু স্বস্তি পাবে। এ ছাড়া মানুষের আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি হতে হবে। যারা কাজে নেই, তাদের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।

সমকাল: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে একটি ব্যাংক কমিশন গঠন করেছে; ১০০ দিনের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উপস্থাপনসহ সংস্কারের একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে। আপনার মতে, এর প্রক্রিয়া কী হলে আমরা ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত নিয়ে আশার আলো দেখতে পারি?

ফাহমিদা খাতুন: ব্যাংক কমিশন গঠনের ঘোষণা অবশ্যই ইতিবাচক। এর মানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংকিং খাতের সমস্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১২ সালে হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর থেকেই সিপিডি ব্যাংক কমিশনের কথা বলে আসছে। এর পর গত ১২ বছরে একটার পর একটা অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। এখন ব্যাংক কমিশন গঠন এবং ১০০ দিনের মধ্যে অর্থনীতির চিত্র উপস্থাপনের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে আমি আশার আলো দেখতে পাচ্ছি এ কারণে যে, এতে ব্যাংকিং খাত এবং অর্থনীতির আসল স্বাস্থ্য বেরিয়ে আসবে। বেশ কিছু ব্যাংকের অবস্থা খুবই দুর্বল। দুর্বলতার গভীরতা ব্যাংক কমিশন বের করে যেসব সুপারিশ করবে, তা বাস্তবায়ন করলে আমরা এ খাতের উন্নতি দেখতে পাব।

সমকাল: সিপিডির পক্ষ থেকে সম্প্রতি বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের নামে ৯২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। কারা কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করার সুযোগ পেয়েছে? এ অর্থ আদায় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো এখন কী করতে পারে?

ফাহমিদা খাতুন: ১৫ বছরের যে তথ্য আমরা দিয়েছি, তা পুরো চিত্র নয়। বড় ২৪টি ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা থেকে আমরা এ অঙ্কের কথা বলেছি। ভুয়া কোম্পানি, ভুয়া জামানতসহ নানা জালিয়াতির মাধ্যমে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকারদের সঙ্গে যোগসাজশে এসব অন্যায় হয়েছে। ব্যাংকার অনেকেই চাপে পড়ে অন্যায় করেছেন। আমার পরামর্শ, যেসব ব্যাংকে বড় অনিয়ম হয়েছে, তাদের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া এবং নতুন পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা নিয়োগ করা। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অনিয়মের ঋণের বিপরীতে যতটুকু জামানত রয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অপরাধীদের শেয়ারগুলো জব্দ করে বিক্রি করে দিতে হবে। এসব প্রক্রিয়ায় কিছু টাকা ফেরত আসবে। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে এক পর্যায়ে অন্য সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে হবে। অবশ্য তা জোর করে নয়। আগে ব্যাংকের আসল পরিস্থিতি জানাতে হবে। এর পর আগ্রহের ভিত্তিতে একীভূত করতে হবে।

সমকাল: গত দুই বছরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল। এ কারণে রিজার্ভের পতন এবং অন্য অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো আমাদের সার্বভৌম ঋণমান কমিয়েছে। এ অবস্থা থেকে আমরা কীভাবে বের হতে পারি?

ফাহমিদা খাতুন: দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে সমস্যা দেখা দিলে আমদানি কমিয়ে আনার নীতি নেওয়া হয়েছিল। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কেননা, আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি ঠিকমতো আনতে না পারলে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। গত দুই বছরে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে গতি কমে যায়। এর অন্যতম কারণ, টাকা-ডলার বিনিময় হার দীর্ঘদিন ধরে রাখা। অথচ রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী প্রতিটি দেশ তাদের মুদ্রার মান কমানোর দিকে গেছে। এতে রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যায়। অন্যদিকে রেমিট্যান্সে গতি না আসার অন্যতম কারণ ছিল অর্থ পাচার। অর্থ পাচারের কারণে হুন্ডি উৎসাহিত হয়েছে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। এসব কারণে আমাদের রিজার্ভের বড় পতন হয়েছে। ফলে আমাদের ওপর ঋণদাতাদের আস্থা কমে গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার প্রথম উপায় হলো, বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। আমরা দেখছি সম্প্রতি রেমিট্যান্স বাড়ছে। এটি যাতে অব্যাহত থাকে, তার জন্য পদক্ষেপ থাকতে হবে। আর রপ্তানি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। যে কোনোভাবেই অর্থ পাচার বিশেষত বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে।

সমকাল: আর্থিক খাতের পাশাপাশি জ্বালানি খাতেও অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কথা সিপিডি ধীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে। জ্বালানি খাতের মূল সংকটগুলো কোথায়? অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনে সরকারকে কী করতে হবে?

ফাহমিদা খাতুন: জ্বালানি খাতের ব্যবসায় অনেক ক্ষেত্রে একচেটিয়াভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্লান্ট বা কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ অপচয় হয়েছে। এখানে কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। তাদের দায়মুক্তিও দেওয়া হয়েছে। বসিয়ে বসিয়ে তাদের সরকারি অর্থ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকসান হয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে উল্টো গত দুই বছরে ধাপে ধাপে বেড়েছে। বিপিসির লোকসান, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার দায় সাধারণ মানুষের ওপর চাপানো হয়েছে। আমি মনে করি, এখন শুধু বিদ্যুৎ পেলেই তাদের পরিশোধের নিয়ম করা যেতে পারে। একই সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। সরকার হয়তো সব চুক্তি বাতিল করতে পারবে না। দেখতে হবে কোনগুলো আমাদের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি। সেগুলো অবশ্যই পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র অদক্ষ। এগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের হাতে থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমলে তার সুফল জনগণকে পেতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, জ্বালানি খাতে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করতে হবে। এখানে কিছু বিনিয়োগ করতে হবে।

সমকাল: নতুন সরকার আর্থিকসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কার করে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন সরকারের মেয়াদ নিয়ে নানা মত রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত মত বলবেন?

ফাহমিদা খাতুন: সবাই আসলে এটি জানতে চাইছে। মানুষের আগ্রহ থাকা দোষের নয়। মানুষ জানতে চাইছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতদিন থাকবে এবং কী কী করবে। আসলে এমন কোনো জায়গা নেই, সেখানে সংস্কারের দরকার হবে না। এই যে এত বছরে জঞ্জাল সৃষ্টি হয়েছে, তা পরিষ্কার করতে অনেক বছর লাগবে। কিন্তু সবকিছুই তো এ সরকার করতে পারবে না। সে জন্য সব জায়গায় হাত না দিয়ে মূল কিছু জায়গা যেমন– বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন এবং আর্থিক খাতের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এ সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার সংস্কারের একটি সময়নির্দিষ্ট রূপরেখা দিতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেবে, কোন বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেবে এবং তার জন্য কত সময় লাগবে– এটি প্রকাশ করা উচিত।

সমকাল: বাংলাদেশের দায়দেনা পরিস্থিতি বিশেষত বড় কিছু অবকাঠামো প্রকল্পের ঋণ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। আমরা কি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কোনো আশঙ্কার মধ্যে রয়েছি? এসব বিষয়ে সার্বিক বিবেচনায় নতুন সরকারের সুনির্দিষ্টভাবে কী কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন?

ফাহমিদা খাতুন: আমরা উন্নয়ন বলতে শুধু প্রকল্প বুঝেছি। আমরা এত বেশি প্রকল্পের দিকে ঝুঁকে গেছি, এটার ‘কস্ট ইফেক্টিভনেস’ বা ব্যয়ের বিপরীতে আমরা কী সুফল পাচ্ছি, সেদিকে নজর দিতে পারিনি। যত বড় প্রকল্প তত বেশি দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশের মতো উদীয়মান দেশে উন্নত অবকাঠামো দরকার। কিন্তু যেসব মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ব্যয় শুধু বেড়েছেই। এর বিশেষ কারণ দেরিতে বাস্তবায়ন; প্রকল্প যথাসময়ে শুরু করতে না পারা। কোনো কোনো প্রকল্পে চার-পাঁচ গুণ ব্যয় হয়েছে। যত দেরি হয়েছে তত খরচ হয়েছে। পাশাপাশি প্রচুর দুর্নীতি ও অপচয় হয়েছে। ফলে প্রকল্প থেকে যথাযথ রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো প্রকল্পে যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি। রূপপুর কিংবা রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের চাহিদার সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। এখন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করতে হবে। যেসব প্রকল্প জরুরি দরকার সেগুলো আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। দরকার মনে না হলে কিছু প্রকল্প বাদ দিতে হবে। কিছু প্রকল্প প্রয়োজনে পরে বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ফলে কিছু অর্থ নষ্ট হবে, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে। মূল কথা, কোনো প্রকল্প যাতে শ্বেতহস্তী না হয়।

সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।

ফাহমিদা খাতুন: সমকালকেও ধন্যবাদ।