Originally posted in সমকাল on 27 October 2021
বাংলাদেশে প্রথম কভিড সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় এ বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে। বর্তমানে সংক্রমণ কমেছে এবং তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কভিডের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব আয়, সরকারি ব্যয়, আমদানি-রপ্তানি, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার ওপর। এর ফলে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আয় বৈষম্য বেড়েছে। পুষ্টিহীনতা বেড়েছে। স্কুল থেকে ঝরে পড়া বেড়েছে, যা মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটেছে। এর পাশাপাশি বেড়েছে নারী নির্যাতন। এমন অনেক অভিঘাত রয়েছে অতিমারির।
সিপিডির পক্ষ থেকে আমরা সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর অতিমারির প্রভাব বিষয়ে গত মে মাসে একটি গবেষণা পরিচালনা করি। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল, কভিডের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নীতি উদ্যোগের মাত্রা ও ধরন পরীক্ষা করা এবং আর্থিক সংস্থান বাড়াতে সরকার আর কোন কোন নীতি গ্রহণ করতে পারে। পিছিয়ে পড়া মানুষ, পেছনে ঠেলে দেওয়া মানুষ, নারী জনগোষ্ঠী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর এসব নীতি কী কী প্রভাব ফেলতে পারে তার ওপর ধারণা দেওয়া ছিল গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য।
গবেষণার জন্য আমরা সামষ্টিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর প্রবণতা বিশ্নেষণ করি। কভিডের প্রভাব নিয়ে বিদ্যমান বিভিন্ন রচনা পর্যালোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো,অর্থ মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও আইএলওর তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করি। পরিশীলিত মডেলিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুমানের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক পূর্বাভাস হিসাব করি। আমরা দেখতে চেষ্টা করেছি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সরকারের ব্যয় ৫০ শতাংশ বাড়ালে এবং পাঁচটি নির্ধারিত খানা পর্যায়ে সরকারের আর্থিক সহায়তা দ্বিগুণ করলে তার ফল কী হতে পারে। গবেষণার ফলাফল হলো, উভয় পদক্ষেপই অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে না ফেলেও এই বাড়তি ব্যয় করা যেতে পারে এবং এই মুহূর্তে তা প্রয়োজন। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই দুটি পদক্ষেপের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপনের আগে অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে সরকারের বাজেটে বাড়তি সম্পদ জোগানের মতো পরিস্থিতি আছে কিনা এবং থাকলে তা কীভাবে সংস্থান করা যেতে পারে তার বিশ্নেষণও প্রয়োজনীয়।
অতিমারির অভিঘাত
২০২০ এবং ২০২১ সালের মধ্যে প্রথম বছরে অর্থনীতিতে কভিডের প্রভাব ছিল তুলনামূলক বেশি। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে কয়েক দফায় লকডাউন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ধীরগতি দেখা দেয়। অর্থনীতিতে চাহিদা কমে যায়। যার প্রভাবে আমাদের আমদানি, রপ্তানি ও ভোগ কমে যায়। যদিও রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রথম দিকে কমলেও পরে নানা কারণে উত্থান ঘটে। এখন আবার অবশ্য রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে।
এর আগের অর্থবছরগুলোতে অর্থনীতির যে গতিশীলতা ছিল, কভিডের কারণে তাতে পতন ঘটে। দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। প্রথম ঢেউয়ের সময় প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়ে যায়। এডিবি-আইএলওর মতে, বাংলাদেশে কভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সালে ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ কাজ হারাতে পারে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, জেন্ডার সমতা এবং পরিবেশ ও জলবায়ুতে অতিমারির প্রভাব ছিল ব্যাপক। কভিডকালে অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার অবনতি হয়েছে। আয় কমে যাওয়ার কারণে অনেককে খাদ্য গ্রহণ কমাতে হয়েছে, যা পুষ্টি পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দরিদ্র ও প্রান্তিক শিশুরা তুলনামূলকভাবে শিখন ঘাটতিতে পড়েছে বেশি। সার্বিকভাবে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকি বেড়েছে। স্কুলে ভর্তি ও শিক্ষা শেষ করার হার কমে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
প্রণোদনার চরিত্র
গত বছরের মার্চ থেকে শুরু করে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত সরকার মোট ৩০টি প্রণোদনা তৎপরতা শুরু করে। ৩০টি প্রণোদনার ভেতরে আর্থিক এবং খাদ্য সহায়তা খুবই কম। বড় অংশই হাইব্রিড। মূলত ব্যাংকনির্ভর ঋণে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। মাত্র ১৩টি কর্মসূচি আর্থিক সহায়তা নিয়ে কথা বলে। চারটি রয়েছে প্রত্যক্ষ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি। এই ১৭টি কর্মসূচি প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার সরকার ঘোষিত প্রণোদনার মাত্র ২০ শতাংশ। ৮০ শতাংশই হাইব্রিড অর্থাৎ ঋণ কর্মসূচি এবং সেখানে সুদ দিতে হচ্ছে।
সরকার এমন কিছু প্রকল্প এখানে ঢুকিয়েছে, যেগুলো আদৌ প্রণোদনা হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার একটি বড় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যাকে প্রণোদনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকার যে ধান-চাল সংগ্রহ করে, তাও প্রণোদনা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী দরিদ্রদের জন্য যে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন, তাও প্রণোদনা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। আগে থেকে যেসব সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ছিল, সেগুলোর যদি সম্প্রসারণ হয় অথবা এই অতিমারিকে কেন্দ্র করে যেসব নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোই প্রকৃত প্রণোদনা।
সরকারি হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রণোদনার আকার জিডিপির ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে শুধু খাদ্য সহায়তা ও প্রত্যক্ষ আর্থিক সহায়তা মাত্র শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। ফলে প্রত্যক্ষ সহায়তার পরিমাণ খুবই সামান্য। গরিব মানুষের জন্য সহায়তা সামগ্রিকভাবেও কম, আনুপাতিক হারেও কম। গত জুন মাস পর্যন্ত ৬৩ থেকে ৬৪ শতাংশ অর্থ অবমুক্ত হয়েছে। আর্থিক সহায়তা অবমুক্ত হয়েছে ৪০ শতাংশেরও কম। আর হাইব্রিড প্যাকেজ অবমুক্ত হয়েছে ৭৫ শতাংশ। গরিবদের জন্য শুধু বরাদ্দের বৈষম্য আছে তা নয়, ব্যবহারেরও বৈষম্য আছে।
যাই হোক, সার্বিকভাবে কভিডের প্রভাব দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হিসাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য বিবিএসের সাময়িক প্রাক্কলনে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসেও গত অর্থবছরে উন্নতির ইঙ্গিত ছিল। গত অর্থবছরের শেষের দিকে এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম দিকে দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার বাধার মুখে পড়ে। বর্তমানে সংক্রমণ কমেছে, তবে আরেকটি ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। টিকাদানেও কিছুটা গতি পেয়েছে। কিন্তু এখনও একটি বড় অংশ টিকার বাইরে রয়ে গেছে। ফলে অর্থনীতির গতিশীলতা নির্ভর করছে সংক্রমণ ও টিকাদান পরিস্থিতির ওপর।
সাম্প্রতিক প্রবণতা
সাম্প্রতিক সময়ের সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু সূচকের দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত- চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মূল্যস্টম্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দামও বাড়ছে। বিভিন্ন প্রক্ষেপণে আরও বৃদ্ধির ইঙ্গিত রয়েছে। পণ্য আমদানির মাধ্যমে এর প্রভাব আমাদের মূল্যস্টম্ফীতির ওপর পড়ছে। মুদ্রার বিনিময় হারেও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দর বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ, আমদানি বেশ বাড়ছে এবং সেই তুলনায় রপ্তানি বাড়ছে কম হারে। অন্যদিকে কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমছে। গত অর্থবছরে আমরা রেমিট্যান্সের জাদু দেখেছিলাম। সেই জাদু ফুরিয়ে গেছে। কেননা মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধির ফলে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ আবারও শুরু হয়েছে বলে অনুমান করা যায়। এ ছাড়া প্রথম ঢেউয়ের সময় অনেকে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছিল, যারা এককালীন সঞ্চয় দেশে পাঠিয়েছিলেন। এ কারণে রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল।
বর্তমানে রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অতিমারির মধ্যেও গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে যার ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, জিডিপির অনুপাতে সরকারের ঋণ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণ হলো, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের ঋণ দেশের জিডিপির ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আর্থিক পদক্ষেপের দৃশ্যকল্প
প্রশ্ন হলো, কভিডের প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের আর্থিক নীতি সম্প্রসারণের কতটুকু অবকাশ রয়েছে। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমান অবস্থায় জিডিপির এক থেকে দেড় শতাংশ বাড়তি আর্থিক সংস্থান করা যেতে পারে। আর্থিক সংস্থানের কয়েকটি উপায় রয়েছে। এর জন্য বাড়তি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ করা যেতে পারে। সরকারি ব্যয় কাঠামোর অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। ভর্তুকি পর্যালোচনা করা যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণের পাশাপাশি অনুদান নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে মুদ্রা ছাপিয়ে আর্থিক সংস্থান করা যেতে পারে।
আমাদের গবেষণায় দুটি নীতির সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব বিচার-বিশ্নেষণ করা হয়েছে। প্রথম নীতি হলো- সরকারি প্রত্যক্ষ সহায়তা বা সরকারি স্থানান্তর পাঁচটি খানা ক্যাটাগরিতে দ্বিগুণ করা। ভূমিহীন কৃষক, প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র কৃষক, অ-কৃষি খাতের গ্রামীণ দরিদ্র এবং শিক্ষা কম থাকা- এই পাঁচ ক্যাটাগরির খানায় আর্থিক সহায়তা দ্বিগুণ করলে এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সরকারের ব্যয় দ্বিগুণ করলে তার সম্ভাব্য ফলাফল আমরা সামষ্টিক অর্থনীতি, আয় এবং ভোগ- এই তিনটি ক্ষেত্রে দেখার চেষ্টা করেছি।
অনুমিত ফলাফল
এখন দেখা যাক, প্রথম দৃশ্যকল্প অর্থাৎ পাঁচটি নির্ধারিত ক্যাটাগরির খানায় সরকারি স্থানান্তর দ্বিগুণ করলে ফলাফল কী দাঁড়াবে। সামষ্টিক অর্থনীতির ছয়টি চলকের ওপর এর প্রভাব দেখা হয়েছে। এই নীতি-পদক্ষেপ নেওয়া হলে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। রপ্তানি বাড়বে এবং আমদানি কিছুটা কমবে। সরকারের আয়ও সামান্য কমবে। অন্যদিকে সরকারের ব্যয় বাড়বে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে জিডিপির অংশ হিসেবে বাজেট ঘাটতি বাড়বে ১ দশমিক ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। জিডিপির অংশ হিসেবে স্থায়ী বিনিয়োগ কিছুটা কমবে।
আয়ের ওপর প্রভাব প্রাক্কলনে দেখা যায়, অদক্ষ শ্রমিকদের আয় বাড়বে না। তবে দক্ষ শ্রমিকদের আয় বাড়বে। পুঁজি কিছুটা কমলেও ভূমির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে সব ক্যাটাগরির খানায় ভোগ বাড়বে, যা অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য এ মুহূর্তে খুব জরুরি। ভূমিহীন পরিবার ক্যাটাগরিতে আয় বাড়বে সর্বাধিক ৫ শতাংশের বেশি। দ্বিতীয় দৃশ্যকল্পে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সরকারের ব্যয় দ্বিগুণ করলে সামষ্টিক অর্থনীতির চলকগুলোতে কিছু পরিবর্তন আসবে। সরকারের ব্যয় বাড়বে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। সরকারের আয় কমবে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এ নীতির প্রভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এক্ষেত্রেও রপ্তানি কিছুটা বাড়বে এবং আমদানি কিছুটা কমবে। বাজেট ঘাটতি বাড়বে জিডিপির শূন্য দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। অন্যদিকে জিডিপির অংশ হিসেবে স্থায়ী বিনিয়োগ কমবে ১ শতাংশীয় পয়েন্ট। এই নীতির প্রয়োগে অদক্ষ শ্রমিকদের আয় কিছুটা বাড়বে। দক্ষ শ্রমিকদের আয় বাড়বে প্রথম নীতির চেয়ে বেশি হারে। একই সঙ্গে সব ধরনের খানায় ভোগ বাড়বে।
সমাপনী মন্তব্য
ওপরের দুটি সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতির তুলনা করলে দেখা যায়, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সরকারের ব্যয় ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রভাব জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানির ওপর তুলনামূলক বেশি। অন্যদিকে ৫টি নির্ধারিত ক্যাটাগরির খানায় সরকারের ব্যয় দ্বিগুণ করার প্রভাব দরিদ্র মানুষের ভোগের ওপর বেশি। দুটি ক্ষেত্রেই জিডিপি, রপ্তানি ও মানুষের আয়ের ওপর প্রভাব ইতিবাচক। সুতরাং কভিড সময়কালে সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। দুটি দৃশ্যকল্পই সমান্তরালভাবে প্রয়োগ করার মতো আর্থিক সংস্থান বাংলাদেশের আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আর্থিক সংস্থান থাকলেও তা অর্থবহ ও কার্যকরভাবে ব্যয় করার মতো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা সরকারের আছে কিনা।
লেখক: সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি এবং আহ্বায়ক, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম