Originally posted in সমকাল on 11 November 2023
ইন্টারনেট আসক্তি একটি নেশা। এটি অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাদের সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা নষ্ট করে দেয়। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। অল্পবয়সীদের এ আসক্তির ফলে তাদের বেড়ে ওঠাটা হয় অস্বাভাবিক। স্বাভাবিক চিন্তা-ভাবনা, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে বঞ্চিত হন তারা। আসক্ত ব্যক্তির জীবনের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। এর প্রভাব তাঁর কার্যক্রমের মধ্যে প্রকাশ পায়। যত ধরনের অপকর্ম তিনি অনলাইন অ্যাপসে দেখেন, তা বাস্তবেও ব্যবহার করতে চান। এটি ভয়েরও ব্যাপার যে, তাদের দেখে অন্যরাও এসব অপকর্মে আকৃষ্ট হচ্ছেন। এটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক রোগও বটে। তরুণ প্রজন্ম যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অন্যতম শ্রমশক্তি। মেধা, দক্ষতার মাধ্যমে তারা যেমন ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারেন; তেমনি অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে অবদান রাখতে পারেন। এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জাতি।
পরিবার থেকে ঠিকঠাক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা গড়ে উঠলে তরুণদের বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা কমে আসবে। এ তরুণরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন। পরে কোথাও পেশাগত কাজে যুক্ত হবেন। এটা একটি স্বাভাবিক জীবনের উদাহরণ। মানুষ যখন একটি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা না পান, তখন তাঁর মধ্যে এক ধরনের হতাশা আসে। তখন তিনি বিভিন্ন দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ ঝুঁকে পড়াটা কখনও কোনো গঠনমূলক কাজে হতে পারে। যেমন কোনো সামাজিক কাজে কেউ যুক্ত হতে পারেন। চাকরি না পেলে নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে পারেন কেউ। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অনেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, সামাজিক মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হন। তরুণদের বেশি করে অর্থপূর্ণ কাজে যুক্ত করতে পারলে তাদের অন্য কোনো দিকে যাওয়ার সময়ই থাকত না। সুযোগের অভাবে বা বেকারত্বের কারণে সমাজ, পরিবারে তারা অবহেলার শিকার হন। এ থেকেও অনেকে জুয়া বা বিধ্বংসী অ্যাপসে জড়িয়ে পড়তে পারেন। এখানে যেমন মূল্যবোধের বিষয় রয়েছে, যা সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়। তেমনি এ সমস্যার অর্থনৈতিক দিকও রয়েছে।
লেখক: ড. ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি