উন্নয়ন কার্যক্রমে গুণগতমানের দিকে নজর বাড়াতে হবে – চট্টগ্রাম সংলাপে বক্তারা

উপস্থাপনা

চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সাথে সাথে শোভন কর্মসংস্থানের ওপর নজর দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। এ দাবী উঠে এসেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা শীর্ষক আঞ্চলিক সংলাপে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অবকাঠামো ইত্যাদি নানা দিকে গুনগতমানের দিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নজর বাড়াতে হবে। গুণগত শিক্ষা ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী বান্ধব কর্মসংস্থান, পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলা, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংলাপে আলোচনা হয়। ইয়ং পাওয়ার ইন স্যোশাল এ্যাকশান (ইপসা), চট্টগ্রাম এবং জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফাণ্ড (ইউএনডিইএফ)-এর সহযোগীতায় সিপিডি সংলাপটি ৫ মার্চ ২০২২ চট্টগ্রামে আয়োজন করে।

নির্বাচনের প্রাক্বালে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারের মাধ্যমে তাদের উন্নয়নের অঙ্গীকার করে। ইশতেহারে বর্ণিত অঙ্গীকারসমূহ যে কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা ইশতেহারকে দল ও ভোটারদের মাঝে একটি লিখিত চুক্তি বলে ধরে নেওয়া যায়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে “সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” শিরোনামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ প্রকাশ করে। সংলাপে নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার সমূহ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়।

ড. ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি সংলাপের সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, গত পাঁচ দশকে অর্থনৈতিক, দারিদ্র বিমোচন, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস সহ বিভিন্ন সূচকে উন্নতি হয়েছে। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার তৈরিতে অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়িত হল, জনগনের সাথে রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা কতটুকু এবং জনগনের ইশতেহার তৈরিতে দায়িত্ব ইত্যাদি গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে আমাদের নজর দেওয়া আবশ্যক।

জনাব মোঃ আরিফুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, ইয়ং পাওয়ার ইন স্যোশাল এ্যাকশান (ইপসা), চট্টগ্রাম সংলাপে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন এবং বলেন, উন্নতির সুফল সকল শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।

সিপিডি’র সংলাপ ও যোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জনাব অভ্র ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। উপস্থাপনায় তিনি বিভিন্ন সুচকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অবস্থা তুলে ধরেন। এছাড়াও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা বিষয়ে বিভিন্ন অঙ্গীকার এবং অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এই সংলাপের আগে বাংলাদেশের ৯০ টি স্থানে মুক্ত আলোচনা করা হয়, যেখানে প্রায় ৯১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থাপনায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের ইশতেহার সম্পর্কে মতামত এবং পরামর্শও তুলে ধরা হয়।

সংলাপে সম্মানিত বক্তা হিসেবে ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার বলেন ইশতেহারে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।  ড. আনোয়ারা আলম, সাবেক অধ্যক্ষ, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ এবং সভাপতি, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বলেন শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং পরীক্ষামূখী শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ড. ফরিদুল আলম, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে না যার ফলে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়ছে। সংলাপে ড. মনজুর উল আমিন চৌধুরী, চেয়ারম্যান, ঘাসফুল ও সিনেট সদস্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বলেন বৈষম্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজকে দেখা উচিত। উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন উন্নয়নের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ  সিকান্দার খান, উপাচার্য, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি ও সভাপতি, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, চট্টগ্রাম বলেন উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুণগতমানের দিকটিকে অবশ্যই দেখতে হবে, তা না হলে গুটিকয়েক মানুষের জন্য উন্নয়নের সুবিধা আটকে থাকবে।

সংলাপের বিশেষ বক্তা মিজ শামীমা হারুন লুবনা, সধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ উল্লেখ করেন উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকারের সাথে জনগনকেও এগিয়ে আসতে হবে এবং অনেক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং তা এগিয়ে যাচ্ছে।

জনাব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, এমপি, সদস্য, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, জনগনকেও এসব ব্যাপারে আরো সচেতন করে তুলতে হবে এবং তিনি গঠনমূলক সমালোচনার উপরে জোর দেন।

সংলাপে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি।