Originally posted in সমকাল on 9 February 2021
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে চীন, ভারত ও জাপানের সম্পর্কের ওপর। এই দেশগুলো ও তাদের অংশীদারদের রাজনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটা বাস্তব যে, একুশ শতকের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হতে যাচ্ছে এশিয়া।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল ইকোনমিক ডায়ালগ-২০২১’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে একটি অধিবেশনে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। পাঁচ দিনের আয়োজনে মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় দিন। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে করোনাভাইরাস পরবর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদ, গবেষকরা সংলাপে আলোচনা করছেন।
রেহমান সোবহান যে অধিবেশনে বক্তৃতা করেন সেটি সঞ্চালনা করেন শ্রীলঙ্কার পাথ ফাইন্ডার ফাউন্ডেশনের বিশেষ ফেলো সুমিথ নাকানদালা। তিনি বলেন, শুধু এশিয়া না বলে তাত্ত্বিক এডওয়ার্ড সাঈদের ভাষায় ওরিয়েন্ট বা প্রাচ্য বলাই ভালো। প্রাচ্যই হবে এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র।
রেহমান সোবহান বলেন, চলতি শতকে এশিয়ার বিস্তার হবে প্রশান্ত মহাসগর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত। চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া- এরাই এখন চালিকাশক্তি। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়াও। তবে সবকিছু খুব সহজভাবে হবে না। এটি নির্ভর করবে চীন, ভারত ও জাপানের সম্পর্কের ওপর। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের নেতৃত্বে অন্যদের এই প্রক্রিয়ায় এই যুক্ত হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। এখন সব দেশকে নিজের মতো করে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে হবে।
ভারত প্রসঙ্গে রেহমান সোবহান বলেন, অটল বিহারি বাজপেয়ির সময়ে ভারত লুক ইস্ট বা পূর্বমুখী নীতি নিয়েছিল; কিন্তু ভারতের এই নীতি ছিল একচোখা। কারণ এই নীতিতে ভারত দক্ষিণ এশিয়া ও বড়জোর পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত ভাবত। তখন এবং এখনও ভারতের বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন। চীনকে ছাড়া ভারতের ‘লুক ইস্ট’ নীতি কখনোই পূর্ণাঙ্গ হওয়ার নয়- এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। ভারতকে এ দিকটি মাথায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বা আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে নানা ধরনের সমন্বয় প্রয়োজন হয়। এসব না থাকলে বাণিজ্য বাড়ে না। বিবিআইএন বা বিসিআইএমের মতো নেটওয়ার্কের ভিত্তিতে এগোতে হবে।
সিপিডির চেয়ারম্যান আরও বলেন, চীনারা বেইজিং থেকে ইংলিশ চ্যানেল পর্যন্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। মালবাহী কার্গো ট্রেন চলাচল করছে এই পথে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের এমন সরাসরি যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মাঝখানে উত্তর -পূর্ব ভারত চলে আসে। সে জন্য ভারতকে আস্থায় নিয়েই এটা করতে হবে। তবে নেপাল চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। চীন এরই মধ্যে লাশা থেকে কাঠমান্ডু পর্যন্ত পথ নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে। সেই পথ একদম নয়াদিল্লি ও মুম্বাই পর্যন্ত যেতে পারে।
সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় সমন্বয় আনতে হবে। শুল্ক্কায়নে অভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হবে। তথ্য ভাগাভাগি করতে হবে।
অন্য বক্তারা বলেন, প্রাচ্য বা এশিয়ার এই কেন্দ্র হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে ভারত-চীন সম্পর্ক। তাদের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক না থাকলে বিপদ। অধিবেশনে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান উপস্থিত ছিলেন।