Published in প্রথম আলো on Monday 22 June 2020
কোভিড-১৯ মহামারি যখন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে তখনই ২০২০–২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করার সময় এসে গেল। এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের মাননীয় অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০২০–২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। এ জন্য তাঁকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে হয়। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ অর্থ বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদেরও। করোনার মধ্যে একটি পূর্ণ বাজেট প্রস্তুত করতে পারা একটি দুরূহ কাজ বটে। বিশেষ করে দেশ যখন প্রায় দুই মাস সাধারণ ছুটির মধ্যে ছিল। যার ফলে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই হয়নি, তথ্য পাওয়া ও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তবে তার পরও যখন বাজেটটি উপস্থাপিত হলো, তখন এর বিভিন্ন দিক নিয়ে পেশাগত আলোচনা না করে পারা যায় না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই ২০২০–২১ অর্থবছরের বাজেটের ৭টি বিষয় নিয়ে এখানে সংক্ষেপে আলোচনার অবতারণা করেছি।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি আসবে কোথা থেকে?
কোভিড-১৯-এর কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয় এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিশ্বব্যাংক জুন ২০২০–এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংশোধন করে ১.৬ শতাংশ ধার্য করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২০–এর এপ্রিলে বাংলাদেশের জিডিপি ২ শতাংশ হবে বলে হিসাব করে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রাক্কলন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে আড়াই শতাংশ। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, আইএমএফ ২০২০ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি ১.৯ এবং চীনের প্রবৃদ্ধি ১.২ শতাংশ হওয়ার প্রক্ষেপণ করেছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ২০২০–এ ভারতের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক (-৩.২ শতাংশ) হওয়ার পূর্বাভাস করেছে এবং চীনের প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালে ১ শতাংশ প্রক্ষেপণ করেছে। তবে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯–এর প্রভাব উপেক্ষা করে বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ প্রক্ষেপণ করেছে এবং আসন্ন অর্থবছরের জন্য তা ৮.২ শতাংশ ধার্য করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করার জন্য সহযোগী সূচকগুলো ভালো অবস্থায় নেই। নিচের সংখ্যাগুলো আমাদের এ ব্যাপারে ধারণা দিতে পারে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি আসবে কোথা থেকে?
কোভিড-১৯-এর কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয় এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিশ্বব্যাংক জুন ২০২০–এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংশোধন করে ১.৬ শতাংশ ধার্য করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২০–এর এপ্রিলে বাংলাদেশের জিডিপি ২ শতাংশ হবে বলে হিসাব করে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রাক্কলন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে আড়াই শতাংশ। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, আইএমএফ ২০২০ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি ১.৯ এবং চীনের প্রবৃদ্ধি ১.২ শতাংশ হওয়ার প্রক্ষেপণ করেছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ২০২০–এ ভারতের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক (-৩.২ শতাংশ) হওয়ার পূর্বাভাস করেছে এবং চীনের প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালে ১ শতাংশ প্রক্ষেপণ করেছে। তবে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯–এর প্রভাব উপেক্ষা করে বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ প্রক্ষেপণ করেছে এবং আসন্ন অর্থবছরের জন্য তা ৮.২ শতাংশ ধার্য করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করার জন্য সহযোগী সূচকগুলো ভালো অবস্থায় নেই। নিচের সংখ্যাগুলো আমাদের এ ব্যাপারে ধারণা দিতে পারে।
ভিড-১৯–এর প্রভাব এখন পর্যন্ত যেখানে অনিশ্চিত, অর্থ মন্ত্রণালয় হয়তো একটি ‘ভি’ আকারের পুনরুদ্ধারের কথা ভাবছে। এখানে আশা করা হচ্ছে, খুব দ্রুতই কোভিড মহামারির অবসান ঘটবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২১–এর জুনের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে। আর সেভাবেই বিভিন্ন সূচক প্রাক্কলন করা হয়েছে।
বেসরকারি বিনিয়োগ, যা প্রবৃদ্ধির একটি প্রধান উৎস, তা ২০১৯–২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ১২.৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যেহেতু বিনিয়োগ অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু ২০২০–২১ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২৫.৩ শতাংশে পৌঁছানোর অনুমান করা হয়েছে। চলমান কোভিডের সময় মাত্র এক বছরে ১২.৬ শতাংশের উল্লম্ফন একটি অসম্ভব লক্ষ্যমাত্রা। বেসরকারি বিনিয়োগের এই বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি ২০২০–২১ অর্থবছরে ১৬.৭ শতাংশ বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির ধারা অর্জন করার কথা বলে হয়েছে, যেটি একটি অবাস্তব আকাঙ্ক্ষা। কেননা স্বাভাবিক সময়েই বেসরকারি বিনিয়োগে শ্লথগতি চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে।
একইভাবে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২০১৯–২০ অর্থবছরের নেতিবাচক (১০ শতাংশ) হার থেকে বাড়িয়ে ২০২০–২১ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাড়ার হার ২০১৯–২০ অর্থবছরের ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০২০–২১ অর্থবছরে ১৫ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। বলা বাহুল্য, চলতি ২০২০ সালে তেলের দাম ৪৭.৯ শতাংশ কমার অনুমান করা হয়েছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ রেমিট্যান্স প্রবাহ আসে তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। ইতিমধ্যে ওই দেশগুলো থেকে প্রচুর শ্রমশক্তি আমাদের দেশে ফেরত এসেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও জনশক্তি ফেরত আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে, তা স্পষ্ট নয়।
সম্পদ সংস্থানের ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা!
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংস্থানের চ্যালেঞ্জগুলো সবারই জানা। কর প্রথার কোনো অর্থবহ সংস্কার না হওয়ায় সংকীর্ণ করজাল, কর না দেওয়ার উচ্চ প্রবণতা এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ আর্থিক প্রবাহ—এই সমস্যাগুলোর কোনোটিই সমাধান করা যায়নি। এর ফলে ২০১৯–২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব–জিডিপি হার মাত্র ১১.৪ শতাংশ। আসন্ন অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ৮.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। তবে এই প্রক্ষেপণটিতে যে বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি বলে মনে হয় সেটি হলো, চলতি অর্থবছরের রাজস্ব ঘাটতি যেটি অনুমান করা হয়েছে সেটি আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি হবে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের জন্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। তবে সিপিডির হিসাব অনুযায়ী এটি ২ লাখ ৫২ হাজার ৮১১ কোটি টাকার মতো হবে। আর এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। যার মানে দাঁড়ায়, রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২০২০–২১ অর্থবছরে ৪৯.৫ শতাংশ বেশি হতে হবে। তাই প্রশ্ন জাগে, এই কোভিড বছরে এত রাজস্ব আহরণের জন্য আমাদের হাতে কী এমন জাদু আছে?
কালোটাকার পেছনে নিরর্থক ঘোরা
বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কর ফাঁকি দেওয়া এবং অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগটি আগামী অর্থবছরের বাজেটে সমুন্নত রাখা হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে নির্দিষ্ট হারে শুল্ক প্রদানের মাধ্যমে জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্টসহ যেকোনো ধরনের অপ্রদর্শিত বাড়ি বা সম্পত্তি প্রদর্শনের ও প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অপ্রকাশিত ও অপ্রদর্শিত অর্থের মালিকেরা পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং বিনিয়োগের মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করে তাঁদের কর রিটার্নে এই অর্থ প্রদর্শন করতে পারবেন। বলা বাহুল্য, কালোটাকার মালিকদের আকর্ষণ করার জন্য সরকারের মরিয়া প্রচেষ্টা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। তাই এটি স্পষ্ট, একটি সুগঠিত ও শক্তিশালী পদক্ষেপ ছাড়া নিছক ঘোষণা দিয়ে এটি কার্যকর হবে না। কর ফাঁকিবাজেরা যদি আসলেই আয়কর দিতে চাইতেন, তাহলে তো তাঁরা শুরু থেকেই কর ফাঁকি দিতেন না। তাঁরা যদি জানেন, তাঁদের কর প্রদানে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না, তাহলে তাঁরা আরও অনেক অনেক দিক অপেক্ষা করবেন। টোপ দিয়ে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না। তা ছাড়া এই ধরনের সুযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখানে সৎ করদাতাদের প্রতি অবিচার করা হয়। কেননা তাঁরা প্রচলিত হারে কর দিয়ে আসছেন।
অগ্রাধিকার খাতগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ কোথায়?
স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, কৃষি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো অগ্রাধিকার খাতগুলোর কোনোটিই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) শীর্ষ পাঁচে জায়গা করতে পারেনি। এডিপিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণের অংশ চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও ৬.৪ শতাংশই রয়েছে। খাতভিত্তিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির হিসাবে মাত্র ০.০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন খাত কতখানি বরাদ্দ পাবে, তা অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। গত এক দশকে স্বাস্থ্য বাজেট বাস্তবায়নের হার অনেকখানি কমে গেছে। তবে এই মহামারির সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে নিতে পারত। এডিপিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘কোভিড-১৯ জরুরি সেবা এবং মহামারি প্রস্তুতি’ নামে একটি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অবশ্য সম্পদের অপ্রতুলতা ছাড়াও অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি স্বাস্থ্য খাতের আরেকটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্মসংস্থান এবং কর্মের নতুন জগৎ
দেশীয় অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক খাতের অনেক কর্মী কাজ হারিয়েছেন। পাশাপাশি অনেক অভিবাসী দেশে ফেরত এসেছেন, যাঁরা কর্মহীন মানুষের দলে যোগ হয়েছেন। কাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যেমন শিল্প, যুব, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে বেকার সমস্যা মোকাবিলার জন্য নগণ্য পরিমাণ অর্থ পেয়েছে।
এটি একটি কঠোর বাস্তবতা যে অনেক লোক কোভিড–পরবর্তী সময়েও তাঁদের চাকরিতে ফেরত যেতে পারবেন না। এটি যে কেবল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ দীর্ঘ হওয়ার ফলেই হবে, তা নয়। বরং অনেক কাজের আর কোনো চাহিদা থাকবে না। এখন আমাদের সামনে একটি দৃশ্যমান বা ভার্চ্যুয়াল এবং প্রযুক্তিভিত্তিক বিশ্ব উন্মোচিত হয়েছে। অনেক কাজের জন্য আর কর্মস্থলে শারীরিকভাবে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। একটি ল্যাপটপ, এমনকি একটি স্মার্ট ফোন আর সঙ্গে ইন্টারনেটের সংযোগ থাকলেই বেশির ভাগ কাজ করা সম্ভব হবে। বাজেটে মুঠোফোনের পরিষেবার ওপর পরিপূরক শুল্ক বৃদ্ধি করাটা তাই হতাশাজনক। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিপন্থী। এটা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বোঝা হবে। ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্যও এটি সহায়ক নয়।
সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি
একটি ভালো খবর হলো, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ ২০২০–২১ অর্থবছরে জিডিপির ৩ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা ২০১৯–২০ অর্থবছরে ছিল ২.৫৮ শতাংশ। কিন্তু বরাবরের মতোই সরকারি কর্মচারীদের জন্য অবসর ভাতা সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দের একটা বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। এ বছর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির তালিকায় সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদ প্রদানের শিরোনামে আরও একটি ব্যয় যুক্ত করা হয়েছে। এখানে দুটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। প্রথমত, অনেকে বলেছেন যে সামাজিক সুরক্ষা খাতের অবসর ভাতার জন্য ব্যয়টি সরকারি কর্মচারীদের জন্য নয়। তাহলে তাঁরা কারা? তাঁরা অবসর নিলেও তাঁরা তো সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী, তাঁরা তো বেসরকারি খাতের কর্মচারী নন। দ্বিতীয়ত, এটিও বলা হচ্ছে যে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি কেবল দরিদ্রদের জন্য নয়, এটি সবার জন্য। হ্যাঁ, অবশ্যই। এটিই তো হওয়া উচিত। অনেক দেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, সবার জন্য শিক্ষা প্রভৃতির মতো কর্মসূচি রয়েছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার জন্য বাংলাদেশ এখন এই ধরনের কর্মসূচি প্রবর্তন করার মতো অবস্থায় নেই। যদিও ২০১৫ সালে যে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্রটি প্রস্তুত করা হয়েছে সেখানে সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা প্রচলন করার সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা চালু করতে পারছি, তত দিন পর্যন্ত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো শুধু দরিদ্র মানুষের জন্যই হতে হবে, সমাজের অন্য কোনো স্তরের জনগণের জন্য নয়। এটি নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়।
ড. ফাহমিদা খাতুন: নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।