জিইডির চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন
এমডিজি অর্জনে বেশ সফল বাংলাদেশ
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ বেশ সফল। আটটি লক্ষ্যের সব কটিতেই ভালো করেছে বাংলাদেশ। এসব লক্ষ্য অর্জনে ৩৩টি উপসূচকের মধ্যে ১৩টি পুরোপুরি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এমডিজির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যটি অর্জিত হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৯ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল, বাংলাদেশ এ সময়ে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
এ ছাড়া শিক্ষা, লিঙ্গবৈষম্য, শিশুমৃত্যু, মাতৃস্বাস্থ্য, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে রাখা, টেকসই পরিবেশ—এসব মূল লক্ষ্যের বেশির ভাগ উপসূচকই লক্ষ্য অর্জন করেছে।
এমডিজির মূল্যায়ন নিয়ে তৈরি করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আজ বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এমডিজির লক্ষ্য অর্জন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য গৌরবজনক। কেননা, উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে। এর ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে শক্ত অবস্থানের ওপর দাঁড়িয়েছে। তাঁর মতে, দারিদ্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো অনেক এমডিজির বিষয় এসডিজিতেও আছে। এগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। গুণগতমানসম্পন্ন চাকরি বা কাজ, সুশাসন প্রতিষ্ঠার মতো নতুন বিষয় এসডিজিতে আছে। এগুলো অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া সরকারের বাইরে বেসরকারি উদ্যোক্তা, এনজিও ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলের সহায়তা—এসব খাতের উদ্যোগগুলো সমন্বয় করতে হবে। সবকিছু সরল রৈখিকভাবে হবে না; নতুন চ্যালেঞ্জ ও নতুন উদ্যোগ নিতে হবে।
লক্ষ্য: এমডিজির আটটি লক্ষ্য হলো অতিদারিদ্র্য নিরসন ও ক্ষুধা নির্মূল; সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা; লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়ন; শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস; মাতৃস্বাস্থ্য উন্নতি; এইডস, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ নির্মূল; টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণ; বৈশ্বিক সম্পর্ক জোরদার।
দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চারটি সূচক আছে এমডিজিতে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মৌলিক চাহিদার খরচের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে দারিদ্র্যের হার ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল। ২০১৫ সালের হিসাবে, দেশে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অপুষ্টির কারণে ওজন কম থাকবে এমন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর হার ৩৩ শতাংশে নামিয়ে লক্ষ্যটিও অর্জন করা গেছে। তবে দৈনিক ১৮০৫ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করা জনগোষ্ঠী ১৪ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্য থাকলেও তা অর্জিত হয়নি। দেশে ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো দিনে ১৮০৫ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না।
এমডিজির প্রতিবেদন অনুযায়ী, লক্ষ্য ছিল সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ নিবন্ধন করা। বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ নিবন্ধন হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে মনে করে জিইডি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ছেলে-মেয়ের নিবন্ধনের অনুপাতে সমতা আনার লক্ষ্য ছিল। এ দেশে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নিবন্ধনের অনুপাত বেশি।
শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী প্রতি ১ হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে ৩৬টি মারা যায়। এমডিজিতে এ লক্ষ্য ছিল প্রতি হাজারে ৪৮টিতে নামিয়ে আনা। একইভাবে ১ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ২৯-এ নেমে এসেছে। এমডিজির লক্ষ্য ছিল ৩১। এ দুটি সূচকেই লক্ষ্য অর্জিত।
রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এইডস নির্মূলের সূচকটি বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হয়নি। প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল। বাংলাদেশে প্রতি লাখ জনসংখ্যায় ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা এখন দশমিক ৩৪। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৯২ শতাংশের বেশি মশারির নিচে ঘুমায়। এমডিজিতে এ লক্ষ্য ছিল ৯০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ১০০ জন যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে সেরে ওঠেন ৯২ শতাংশ। এমডিজিতে তা ৯০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল।
এমডিজিতে আরেকটি লক্ষ্য ছিল শতভাগ মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া। দেশে প্রায় ৯৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি করার সূচকগুলোর কোনোটিই অর্জিত হয়নি।
জিইডির সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব খাতে এখনো কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারিনি, যেমন ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিতে বিশেষ নজর দিতে হবে।’ অঞ্চলভিত্তিক দারিদ্র্য কমানোর দিকে বেশি মনোযোগী হতে হবে।